Skip to content

অবাক করা সেন্টমার্টিন

সাদিক ইভান (১৫), ঢাকা
মাঘ মাসের হাড় কাঁপানো শীতে কাকা কাকির সঙ্গে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলাম। সাথে আমার দুই ভাই ছিল।

আমার কাকা সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে টেকনাফে উনার সরকারি বাসায় ছিলাম। আর ঘোরাঘুরির জন্য পেয়েছিলাম তার দামি গাড়ি। তাই একেক দিন একেক জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পেরেছি।

ঘুরে বেড়িয়েছি ইনানী, টেকনাফ, শাহপরী আর ছেঁড়া দ্বীপ। তবে সবচেয়ে মজা হয়েছিল সেন্টমার্টিন গিয়ে।

কক্সবাজারে চারদিন নানান দ্বীপে ঘোরার পর আমরা ট্যুরিস্ট জাহাজে করে রওনা হই সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে। জাহাজের উপরে রাখা লাইফ জ্যাকেটগুলো দেখে কেন জানি ভয় পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল ডুবে যাব নাকি?

St-Martin

নাফ নদী দিয়ে যাওয়ার সময় দূরে মায়ানমার সীমান্ত দেখা যাচ্ছিল। তারপর জাহাজ বঙ্গোপসাগর দিয়ে যাত্রা শুরু করলো।
সাগরের ওপর দিয়ে জাহাজ যাওয়ার সময় ঢেউগুলো জাহাজের তিন তলা পর্যন্ত ভিজিয়ে দিচ্ছিল। সাদা সীগালগুলো দল বেঁধে জাহাজের পাশ দিয়ে উড়ছিল। যাত্রীদের অনেকে আবার ওদের দিকে বিস্কুট, চিপস, রুটি ছুঁড়ে দিচ্ছিল। কখনও শুন্য থেকে কখনও পানির ওপর থেকে ওরা উড়তে উড়তে সেগুলো তুলে তুলে নেয়। আর জাহাজের পিছ পিছু উড়ে চলে।

অবশেষে দুই ঘণ্টা পর আমরা পৌঁছলাম সেন্টমার্টিনে। সেখানে আগে থেকেই সরকারি রেস্ট হাউজে আমাদের জন্য থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে রাখা হয়।

একটু বিশ্রাম নিয়ে ঐদিন বিকেলে দ্বীপে গেলাম বেড়াতে। সামুদ্রিক প্রবাল মরে গিয়ে জমে জমে এ দ্বীপ তৈরি হয়েছে বলে একে প্রবাল দ্বীপ বলা হয়।

সেখানে গিয়ে রীতিমতো অবাক আমি। সেখানকার পানি এত নীল আর পরিষ্কার যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

আর সাগরের ঢেউগুলো আমার মনটাকেই স্নিগ্ধ করে তুলেছিল। বড় বড় প্রবালের ওপর দাঁড়িয়ে হাত মেলে দিয়ে আকাশ আর সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে মনের কথাগুলো জানান দেওয়ার চেষ্টা করলাম। মনে হচ্ছিল ওরা আমার কত আপন।

সমুদ্র তীরে সূর্য ডোবার দৃশ্য নাকি অনেক সুন্দর। নিজের চোখেই দেখলাম টুপ করে সূর্য ডুবে যাওয়ার অসাধারণ মুহূর্ত।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আমরা তীর ধরে হেঁটে চললাম খানিকটা। ওখানে সবাই মিলে পোড়া চিংড়ি আর ডাবের পানি খেলাম। ফিরতি পথে পকেটে তুললাম ছোট ছোট প্রবাল, শামুক, পাথর আর ঝিনুক।

পরদিন গোসলের প্রস্তুতি নিয়ে সৈকতে যাই। সেদিন সমুদ্রের পানিতে গোসল শেষে শিক্ষা সফরে আসা ভাইয়াদের সঙ্গে তীরে ফুটবল খেললাম।

সেদিনই বাংলা সাহিত্যের কথার জাদুকর হুমায়ুন আহমেদের বাংলো বাড়ি সমুদ্র বিলাসে গিয়েছি ঘুরতে। সেন্টমার্টিনে উনার এই বাড়িটি দেখে আমি অবাক হয়েছি। তিনি এই বাড়ির প্রতিটি কক্ষের নাম রেখেছেন নিজের লেখা উপন্যাস আর চরিত্রগুলোর নামে।
বেশ দারুণ এক সফর শেষে আমরা পরদিন ঢাকায় চলে আসি। আরও অনেকবার হয়ত সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ পাব কিন্তু এই স্মৃতি আমার মনে অম্লান হয়ে থাকবে। সূত্র : বিডিনিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *