মিঠু হালদার
‘জোনাকির আলো’ থেকে হয়তো মিমের ‘আলো’ আরও শক্তিশালী। দক্ষতার সেই আলো ছড়িয়েই নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিলেন তিনি। যার কারণে মিম এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে যৌথভাবে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন। ছোট পর্দা আর বিজ্ঞাপনে জনপ্রিয় মিম এখন সিনেমায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে ছুটে চলেছেন।
পাঠক, নায়িকা বিদ্যা সিনহা সাহা মিমের গল্পই বলছি; যিনি অভিনয় জগতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মনোনীত এই অভিনেত্রীর সঙ্গে চলচ্চিত্র শিল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। জানিয়েছেন তার অবস্থানের কথা, ভালোলাগা কিংবা দায়িত্ববোধের বর্ণনা। সেই আলোচনার সারকথা ঢাকা ট্যুরিস্ট ক্লাবের পাঠকদের জন্য তুলো ধরা হলো-
প্রথমেই কথা হয়, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৪ নিয়ে। যেখানে মিম ‘জোনাকির আলো’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য অভিনেত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে মিমের সাবলীল অনুভূতি, সাথে জানিয়েছেন দায়বদ্ধার কথাও। বলেছেন, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার পর থেকে আরও ভালো অভিনয়ের দায়বদ্ধতা চেপে বসেছে। সেদিক চেষ্টা করছি ভাল গল্প কিংবা সহ-শিল্পী অথবা দক্ষ পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করতে। না হলে করছি না। তবে আমি কিন্তু অনেক বেশি ছবিতেও অভিনয় করছি না। গল্প, পরিচালক, সহ-শিল্পীসহ সবকিছু মাথায় রেখেই কাজ করছি। আমি সংখ্যা থেকে কাজের গুণগত মান এ বিশ্বাসী।’
আলাপে উঠে আসে মিমের কাজের অভিজ্ঞতা বিশেষ করে সহ-শিল্পী প্রসঙ্গটি। তবে এ বিষয়ে তার ব্যাখ্যাটি স্পষ্ট। বলা যেতে পারে প্রশংসাও। মিমের ভাষ্য মতে, ‘যদি অ্যাক্টিং বেস হিরো থাকে, তাহলে কাজ করতে তার সহ-শিল্পীর জন্য বিষয়টি সহজ হয়ে যায়। আর আমাদের দেশে সেদিক থেকে আরিফিন শুভ দারুণ। আর আমার সহ-শিল্পীর ডায়ালগ ডেলিভারি যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে আমারটাও অনেক স্ট্রং হয়।’
সামনে যৌথ প্রযোজনার একটি ছবিতে অভিনয় করছেন। আর এর জন্য একটু একটু করে নিজেকে প্রস্তুত করছেন। এছাড়া ছবির প্রযোজক কিংবা পরিচালক তাদের প্রাথমিক প্রস্তুতির কাজগুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন এসব কথার বাইরে এ বিষয়ে বেশি বলতে চাননি তিনি।
যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ‘অভিযোগ’ শোনা যায়। এরই মধ্যে মিম ‘ব্ল্যাক’ নামে যৌথ প্রযোজনার একটি ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। আর সে ছবি মুক্তির বিষয়টি সর্বশেষ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ বিষয়ে মিমের ভাষ্য, ‘যৌথ প্রযোজনার সবকিছু তো আর আমার হাতে নয়। আর আমার হাতে থাকলে সবকিছু ঠিকঠাক করার চেষ্টা করতাম। আর যদি শিল্পীদের কথা বলি তাহলে নিজেরও খারাপ লাগে, কারণ এ ছবিগুলোর গল্প (যৌথ প্রযোজনার) হিরো কেন্দ্রীক হয়’।
এই শিল্প নিয়ে আলাপের এক পর্যায়ে উঠে আসে, সিনেমার গল্প শুধু হিরো কেন্দ্রীক হবে এটাকে উচিত বলে মনে করেন না এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘যৌথ প্রযোজনায় দুটিকেই প্রাধান্য দিয়ে কাজ করা উচিত। কারণ ছবিগুলো কিন্তু দুটি দেশেই চলবে। এটা আসলে সমস্যা আমাদের দেশের মানুষদেরই। কারণ গ্রহণ করছে বিধায়ই তারা কাজগুলো বারবার করছে। আর না হলে এ ধরনের ছবি কেউ নির্মাণ করত না।’
এ বিষয়ে মিমের কাছে জিজ্ঞাসা ছিল, তবে নায়িকা প্রধান চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয় না কেন এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে মিমের বক্তব্য, ‘আসলে বিষয়টি নির্মাণের উপর নির্ভর করে। ববিতা, শাবনা আপুর সময়ে হয়েছে না, এখন হচ্ছে না কেন? এখন সে ধরনের শিল্পী, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার লাগবে। যারা এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাববে। আর এ বিষয়ে নির্মাতার জায়গা থেকে একটা গ্যাপ রয়েছে। ব্যর্থতা সেখানে, কেন তারা দেখাতে পারছে না। নারী কেন্দ্রীক ছবি আমার ‘পদ্ম পাতার জল’ ছবিটি নিয়ে কিন্তু কেউ কিছু বলেননি। বরং প্রশংসা পেয়েছি।’
মিম জানান, তিনি চলচ্চিত্রে পোশাক নির্বাচনের ব্যাপারে বেশ সচেতন। এ বিষয়ে তার ব্যাখ্যা, ‘আমি একজন কস্টিউম ডিজাইনার রাখি। সে আমাকে ছবির গল্পের সাথে মিল রেখে এ বিষয়ে পোশাক নির্বাচনে সহায়তা করে থাকেন। আর বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চরিত্রের সাথে যদি পোশাকের মিল না থাকে, তাহলে বিষয়টি খারাপ হয়ে যায়। আর নিজেরটা নিজে করাটা কষ্ট হয়ে যায়। সব সময় ব্যস্ততার মধ্যেই থাকতে হয়।’
সম্প্রতি ‘দাগ’ ছবির শুটিংয়ের সময় আহত হয়েছিলেন অভিনেত্রী মিম। এরপর আবার বিরতি দিয়ে শুটিং করেছিলেন। মিম মনে করেন, ‘আর্টিস্টরা এলিয়েন টাইপের কিছু। এর আগে ট্রেসমের একটা শো ছিল। তখন আমার বাবা অসুস্থ্ হয়ে যান। আমার মা বাবা’কে হসপিটালে নিয়ে গেল। ওই মুহূর্তে স্টেজে আমি হাসি মুখ নিয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু আমার মন তো ছিল বাবার দিকে। শিল্পীর জীবনগুলোই মনে হয় এ ধরনের হয়। যখন দেখি শুটিংয়ের সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তখন খারাপই লাগে।’
আলাপের এখানেই আরেকটু যোগ করে মিম বললেন, ‘তারপরও যথাসাধ্য চেষ্টা করি। তারকা না হলে এ ধরনের ব্যক্তিজীবনের সমস্যায় পরতেন না? মিম বললেন, এ জীবনেরও অন্যরকম আনন্দ আছে। না হলে তারকা জীবনের স্বাদটা পেতাম না। আর আমার মত একটি জায়গায় আসার জন্য হাজার হাজার মেয়ে চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা পারছে না। তবে দুটো জীবনই বেশ আনন্দের। আর ব্যক্তিজীবন আর তারকা জীবন দুটোই আলাদা। তারকা জীবনে অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হচ্ছে।’
মিম সম্প্রতি নতুন একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। আর এটি নির্মাণ করবেন সামির আহমেদ। এ বিজ্ঞাপনে সহ-শিল্পী তাহসান। আসছে ৩০ ও ৩১ মার্চ রাজধানীর কোক স্টুডিও তে এর শুটিং হবে। এ বিষয়ে মিম শুধু জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সরকারের প্রযুক্তি বিষয়ক একটি প্রকল্পের কাজ এটি। অপরদিকে মিম সম্প্রতি ডেকো গ্রুপের বিস্কুট ‘কুকিজ’ বিজ্ঞাপনচিত্রের কাজ শেষ করেছেন। বিজ্ঞাপনটির নির্দেশনা দিয়েছিলেন মেহেদী হাসিব। সৌজন্যে : প্রিয়