অহ নওরোজ
সমাদর কে না চায়? সবাই চায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে।আবার অনেকে সারাজীবন সংগ্রাম করে মর্যাদার জন্য। বর্তমান সিনেমা জগতে সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হল অস্কার। পৃথিবীতে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যারা জড়িত সবাই হয় তো কোন না কোনোভাবে আশা করে অস্কারের, কিংবা স্বপ্ন দেখে অস্কার জেতার। কিন্তু এমন যদি হয়, এই পুরস্কার দেবার পরেও অবলীলায় সেটা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে তাহলে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। হ্যাঁ, এমন ঘটনাও কিন্তু ঘটেছে। অস্কার পেয়েও প্রত্যাখ্যান করেছেন অনেকে। এদের মধ্যে থেকে সবচেয়ে আলোচিত কয়েকজনকে নিয়েই আজকের আয়োজন।
ডুডলি নিকলস : অস্কার পুরস্কার সর্বপ্রথম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ডুডলি নিকলস। আমেরিকান এই চিত্রনাট্যকার ১৯৩৫ সালে আইরিশ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘দি ইনফরমার’ সিনেমার চিত্রনাট্যের জন্য অস্কার পুরস্কার জেতেন। তবে জনপ্রিয় এই চিত্রনাট্যকার অস্কার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি লিখে যেতে চাই, এটা আমার দায়িত্ব। সন্মানিত করার কিছু নেই।ডুডলি নিকলস প্রায় ৫০টিরও অধিক বিখ্যাত সিনেমার চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন।
ক্যাথেরিন হেপবার্ন : অস্কারের জন্য প্রায় বারো বার মনোনীত হয়েছিলেন আমেরিকান অভিনেত্রী ক্যাথেরিন হেপবার্ন। তবে তিনি সব সময়ই অনুষ্ঠান অপছন্দ করতেন। অধিকাংশ সময় কোনো অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যেত না। একটানা ৬০ বছর ধরে হলিউডে রাজত্ব করা এই অভিনেত্রী চারবার অস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছিলেন। কিন্তু তিনি প্রথম পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং ৩৪ বছর পর যখন আবার অস্কার জিতেছিলেন তখন বলেছিলেন, ‘আমি কি করছি সেটাই ব্যাপার, সময় আমাকে বিবেচনা করবে, এত বছর পর তো আবারো জয় করতে পেরেছি’। ক্যাথেরিনের অস্কার জেতা সিনেমাগুলো হল ‘মর্নিং গ্লোরি’, ‘গেস্ট হু কামিং টু ডিনার’, ‘দ্য লায়ন অ্যান্ড উইন্টার’ এবং ‘অন গোল্ডেন পন্ড’।
জর্জ সি. স্কট : মঞ্চ থেকে অভিজ্ঞ হয়ে আসা আমেরিকান অভিনেতা জর্জ সি.স্কট ১৯৭০ সালে ‘প্যাট্টন’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কার জিতেন।কিন্তু সেই খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোনেই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ‘এই অল্প সময়ে এরা আমার অভিনয়ের কি বিচার করবে?’। তবে পরবর্তী বছরেও স্কট তার অভিনীত ‘দ্য হসপিটাল’ সিনেমার জন্য অস্কারে মনোনীত হয়েছিলেন। স্কট একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক এবং পরিচালক ছিলেন।
মারলন ব্র্যান্ডো : ১৯৭৩ সালে ‘দ্য গডফাদার’-এর জন্য সেরা অভিনেতার খেতাব পেয়েছিলেন মারলন ব্র্যান্ডো। তবে তিনি পুরস্কারটি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থেকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘যেখানে পৃথিবীর হাজার হাজার মানুষ রোগে-শোকে ভুগে মরছে সেখানে আমি কীভাবে এতগুলো টাকা গ্রহণ করি?’ আমেরিকান এই পরিচালক এবং অভিনেতা সে দেশের অন্যতম প্রধান সমাজকর্মী ছিলেন। মারলন ব্র্যান্ডোর প্রথম সিনেমা ‘দ্য ম্যান’ মুক্তি পায় ১৯৫০ সালে।
জাঁ-লুক গদার : ফ্রেন্স পরিচালক জাঁ-লুক গদারকে ২০১০ সালে ফ্রান্সের চলচ্চিত্রে অবদান রাখার জন্য বিশেষ অস্কার পুরুস্কার দেয় অস্কার কমিটি। কিন্তু গদার সম্পূর্ণভাবে অস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। প্রায় ষাটের অধিক বছর ধরে একাধিক সিনেমার এই নির্মাতা পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে অস্কার বিষয়ে বলেন, ‘তারা কি ইচ্ছে মত সবকিছু করবে? তারা আমার সিনেমাকে কিংবা আমাকে বিবেচনার কে?’। জাঁ-লুক গদারের সব থেকে বেশি জনপ্রিয় সিনেমার নাম ‘লা নোভেলি ভোগা’ যা ইংরেজিতে ‘নিউ ওয়েভ’ নামে পরিচিত। সিনেমাটি ১৯৯০ সালে সুইজারল্যান্ড এবং ফ্রান্সে মুক্তি পায়। সৌজন্যে : রাইজিংবিডি