Skip to content

আকাশচুম্বী রেলপথে ভ্রমণ

নাবীল আল জাহান
আকাশ দিয়ে চলে গেছে রেলপথ। বাচ্চাদের অ্যানিমেশন সিনেমায় প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু সত্যিই কি অমন রেলপথ হতে পারে? পুরোপুরি না হলেও, অনেকটা আকাশের কাছাকাছি একটা রেলপথ কিন্তু চীনারা ঠিকই বানিয়ে দেখিয়েছে। নিন্দুকদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ২০১০ সালে সেই রেলপথ চলাচলের জন্য খুলেও দেওয়া হয়েছে। আর তাতে চড়ে এখন রাজ্যের পর্যটক যায় তিব্বতে, হিমালয়ের একদম কাছে।

Highest-Railway

রেলপথটা চীনাদের জন্য জরুরি হয়ে ছিল সেই ১৯৫০-এর দশক থেকেই, যখন তিব্বত চীনাদের অধিকারে এলো। মাও জে দং তখন ক্ষমতায়। তিনি একদল প্রকৌশলী পাঠিয়ে দিলেন, তিব্বতে যাওয়ার রেলপথ বানানোর বন্দোবস্ত করতে। কিন্তু এ তো অসম্ভব এক কাজ! অত উঁচুতে আর অমন বৈরী আবহাওয়ায় মানুষই চলতে পারে না, রেলগাড়ি ছুটবে কী করে! তবু চীনারা দমে যায়নি। একটু একটু করে পরিকল্পনা করতে থাকে, কিভাবে বৈরী পরিবেশ জয় করে সেখানে রেলপথ বসানো যায়।

রেলপথটার মোট দৈর্ঘ্য এক হাজার ৯৫৬ কিলোমিটার। সেটিই চীনের দক্ষিণের কহেই প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত করেছে তিব্বতকে। তার আগ পর্যন্ত তিব্বত ছিল চীনের সঙ্গে রেলযোগাযোগবিচ্ছিন্ন। এই লম্বা রেলপথটিকে দুই ভাগে ভাগ করে কাজ করা হয়েছে। প্রথম ভাগের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮১৪ কিলোমিটার। সেটি অবশ্য কিহেই প্রদেশেই শেষ হয়ে গেছে। প্রদেশের রাজধানী কেসিনিং থেকে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে গোলমুড বা গিরমুতে। ওই পথটুকু অপেক্ষাকৃত কম দুর্গম। তাই চীন ওটুকু আগেই বানাতে পেরেছে। এর উদ্বোধন করা হয় সেই ১৯৮৪ সালে। তবে আসল চ্যালেঞ্জ এর পরের অংশে।

এটা যে বানানো যাবে, তাই কারো বিশ্বাস হতো না। অনেক বিশেষজ্ঞ চীনকে এই পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। জলজ্যান্ত কারণও ছিল। বাকি এক হাজার ১৪২ কিলোমিটার পথের ৯৬০ কিলোমিটারই সাগরের উচ্চতার অন্তত চার হাজার মিটার উঁচুতে। সবচেয়ে উঁচু অংশটা তো পাঁচ হাজার মিটারেরও বেশি, ১৬ হাজার ৪০৪ ফুট। অত উঁচু দিয়ে রেলপথ বানানো কি চাট্টিখানি কথা!

এর বাইরেও বিপদ কম ছিল না। অত উঁচুতে রেলপথ বানানোর বিপুল খরচ তো আছেই। শেষ পর্যন্ত এই এক রেলপথ বানাতে চীনা সরকারের খরচ হয়েছে ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি। অর্থাৎ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এর চেয়েও বড় সমস্যা ছিল বৈরী আবহাওয়া। একে তো বরফের রাজ্যে বরফধস কিংবা তুষারঝড়—দুই-ই ভয়ংকর। তার ওপর অত উঁচুতে বাতাসও অনেক পাতলা। সেখানে যাত্রীদের শ্বাস-প্রশ্বাসেরও সমস্যা হতে পারে। এসব সমস্যার সমাধান করে রেলপথ বানাতে বানাতে এত দিন লেগে গেল। তাও যে চীনারা শেষ পর্যন্ত তা বানাতে পেরেছে, সেটিও কম বিস্ময়ের নয়।

Highest-Railway2

এমন কর্মযজ্ঞের পরও অবশ্য স্বাধীনতাকামী তিব্বতিরা অখুশি। তাদের ভাষ্য, চীনারা এত বিপুল অর্থ খরচ করেছে কেবল তিব্বতের ওপর মাতব্বরি ফলাতে।

এই ভয়ংকর সুন্দর রেলপথ বানানোর আগে কিহেই থেকে তিব্বতে আসতে সময় লাগত অনেক বেশি। তাও সে রাস্তায় গাড়ি চালাতে হতো সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় চার হাজার উচ্চতা দিয়ে। তার বদলে এখন ট্রেনে উঠলে কয়েক ঘণ্টার ভ্রমণ। তাও আবার সে পথ ভীষণ সুন্দর। যাত্রাপথে দেখা যাবে হিমালয় পর্বতমালার শান্ত-সমাহিত শুভ্রতা, তুষারস্নাত ব্রহ্মপুত্র, নীল লেক এমনকি তৃণভূমিও। পথের একটা অংশ চলে গেছে এভারেস্ট শৃঙ্গের দেড় শ মাইল পাশ দিয়ে। সৌন্দর্যের দেখা কেবল নিচেই মিলবে না, মিলবে ওপরের দিকে তাকালেও। আকাশচুম্বী এই রেলপথ, যাকে বলে চলে গেছে একদম মেঘ ফুঁড়ে। কাজেই আকাশের সৌন্দর্যও কিছুমাত্র কম উপভোগ করা যাবে না। আর দূরত্বটাও এমনই, একই যাত্রায় আকাশ কখনো গোমড়া মুখে থাকবে, কখনো রোদে ঝলমল করবে, কখনো আবার অঝোর ধারায় কাঁদবে। সব মিলিয়ে যাকে বলে পর্যটকদের স্বর্গভ্রমণ।

তবে চাইলেই তিব্বতে যেতে পারেন না পর্যটকরা। সেখানে যেতে হলে কেবল চীনের ভিসা থাকলেই হবে না, চীনা সরকারের বিশেষ অনুমতিও লাগবে। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *