তানভীর আহমেদ
আকাশজয়ের স্বপ্ন মানুষের বহুকাল আগে থেকেই ছিল। এখন এই স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে আকাশজয়ে এগিয়ে এসেছে নারীরা। নারী পাইলটদের সাফল্যের গল্পগুলো ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। ছোট বিমান থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী ভারী বিমান এমনকি যুদ্ধবিমান আকাশে ভাসিয়ে নারী পাইলটরা প্রমাণ করেছেন বিমান চালনার মতো সাহসী ও চ্যালেঞ্জিং পেশায় তারা সফল। প্রতিকূলতা পেরিয়ে নারী পাইলটদের আকাশজয়ের গল্প নিয়েই আজকের প্রবন্ধ-
আকাশে রাজত্ব
আকাশে উড়ার ইচ্ছা মানুষের বহুকাল থেকেই ছিল। আকাশজয়ের স্বপ্ন বুকে নিয়ে মানুষ এগিয়ে গেছে। আবিষ্কার হয়েছে বিমান। বিমান চালনা পৃথিবীর অন্যতম সাহসী ও চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোর একটি। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, সাহসী ও দক্ষরাই কেবল বিমান চালনার জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকেন। একটা সময় ছিল যখন বিমান চালানোর মতো চ্যালেঞ্জিং কাজটি পুরুষের পক্ষেই সম্ভব বলে মেনে নেওয়া হতো। নারীদের বিমান চালনায় দেখা যেত কম। কিন্তু এই ধারণাটি ভুল প্রমাণ করেছেন কয়েকজন নারী।
ইতিহাসে এই নারীদের সাহসিকতা ও বিমান চালনায় দক্ষতার গল্পগুলো রোমাঞ্চকর ও অনুকরণীয় হয়ে রয়েছে। তাদের দেখানো পথ ধরে এরপর বিমান চালনায় নাম লিখিয়েছেন বহু নারী। এদের অনেকেই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে প্রমাণ করেছেন নিজেদের। এখন ছোট বিমানই শুরু নয়, বড় যাত্রীবাহী ভারী বিমানও চালনা করে থাকেন এমন নামকরা নারী পাইলট রয়েছেন। সারা বিশ্বেই তাদের নামডাক।
এ ছাড়া সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধবিমানে উড়ছেন অনেকে। প্রলয়কারী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ থেকে শুরু করে শত্রুপক্ষের ওপর বোমাবর্ষণ সবই করছেন সফলতার সঙ্গে। নারী পাইলটদের মধ্যে যাদের বিশেষভাবে স্মরণ করা হয় তাদর একজন প্যাট্রিসিয়া। ঘানার এই পাইলট পশ্চিম আফ্রিকার প্রথম বেসামরিক নারী পাইলট ছিলেন।
বলা যায়, ইস্টার মাবাজির কথা। রুয়ান্ডার প্রথম বাণিজ্যিক বিমান আকাশে ভাসিয়ে তিনি বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেন। তার বাবা বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন বলেই বিমান উড়ানোর চ্যালেঞ্জটি নিতে প্রাণপণে নিয়েছিলেন। আলিয়া তাওয়েল জর্ডানের ২০ জন নারী পাইলটের একজন। মাত্র ৬.৩ মিলিয়ন মানুষের এই দেশে একজন নারীকে পাইলট হিসেবে গড়ে ওঠার গল্প যেন রূপকথাকেও হার মানায়। তিনি যেদিন বিমানের ককপিটে চড়েন নারী পাইলটদের ইতিহাসে লেখা হয় আরেকটি সাফল্যের নাম।
আফগানিস্তানের লতিফা ছিলেন প্রথম সামরিক হেলিকপ্টারের নারী পাইলট। যেখানে নারীদের পদে পদে রক্ষণশীলতার মুখোমুখি হতে হয়, শিক্ষা প্রসারে বাধা আসে সেখানে এই নারী আকাশে উড়ে প্রমাণ করে দেন অসম্ভব বলে পৃথিবীতে কিছু নেই।
আমেরিকান নারী পাইলট জ্যাকুলিনের কথাও বলতে হয়। তিনি বিশ্বের সেরা রেসিং পাইলটদের মধ্যমণি ছিলেন। আকাশে গতির ঝড় তুলতে পারঙ্গম এই নারী পাইলট আকাশে পুরুষ পাইলটদেরও পেছনে ফেলে দিতেন। তার গতির কাছে হেরে যেতেন পারদর্শী পাইলটরা। ১৯৫৩ সালে তিনি বিশ্ববাসীকে চমকে দেন। শব্দের চেয়েও বেশি গতিতে ছুটে চলা প্রথম নারী পাইলট তিনি। শব্দকে পেছনে ফেলে তিনি আকাশজয় করেছিলেন।
নারী পাইলটদের সাফল্যের গল্প বলে শেষ করা যাবে না। সময় যত গড়াচ্ছে বিমান নিয়ে আকাশজয়ে নেশা তাদের ততই বাড়ছে। কিন্তু একজনের গল্প আলাদা করেই বলতে হয়। তিনি অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট। একজন নারী পাইলট হিসেবে শুধু নয়, তিনি বিমানচালকদের ইতিহাসে লেখা অন্যতম এক রহস্য। ১৮৯৭ সালের ২৪ জুলাই জন্মগ্রহণ করেছিলেন তুখোড় নারী পাইলট অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট। অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার ক্যারিয়ার ছিল নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ ঘটনায় অসাধারণ সম্মিলন। একক উড্ডয়নের নানা পরীক্ষায় তিনি এভিয়েশনে আনেন বৈচিত্র্য। তার উড্ডয়নে পরীক্ষা হয়েছিল লকহেড ভেগা ৫-বি। বিশ্বভ্রমণের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অ্যামেলিয়া পুরো বিশ্বের প্রথম নারী পাইলট, যিনি একক উড্ডয়নে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন। আমেরিকার পাইলটদের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি ফ্লাইং ক্রস অর্জন করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া তার হাতে ছিল অনেক দুর্লভ ফ্লাইং রেকর্ড। তার লেখা বই বেস্ট সেলিং হিসেবে চলেছিল বইয়ের বাজারে। ১৯৩৫ সালে তিনি যখন পেরুড বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্রহী নারীদের পাইলট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন তখন তার খ্যাতি আকাশছোঁয়া। মিডিয়ার মধ্যমণি ছিলেন তিনি। কিন্তু এরপরই শুরু তার এক অধরা স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে যাত্রা। আর রহস্যের শুরু এখানেই। বলাবাহুল্য, পাইলট হিসেবে তার দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। বিশ্বভ্রমণের লক্ষ্য নিয়ে তিনি আকাশে ভেসে পড়েন। নেন লকহেড ১০ মডেলটি। ১৯৩৭ সালের ঘটনা। ধনী এই পাইলট আকাশে উড়ান বিমান। বিশ্বভ্রমণের কথা থাকলে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে আকাশে হারিয়ে যান তিনি। প্যাসিফিক মহাসমুদ্রের ওপর দিয়ে তখন তিনি হোল্যান্ড দ্বীপ পার হচ্ছিলেন, এখানে এসেই তার বিমান হারিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত তার নিরুদ্দেশ হওয়ার কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেনি।
বাংলাদেশের ‘আকাশকন্যা’
আকাশজয়ে ইতিহাস গড়েন বাংলাদেশের দুই নারী। প্রথমবারের মতো তারা বৈমানিক হিসেবে যুক্ত হন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে। তারা হলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইং অফিসার তামান্না-ই-লুৎফি। তারা যশোরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ নম্বর স্কোয়াড্রনে বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভার্সন কোর্স সম্পন্ন করেন। ২৫ ঘণ্টা করে এককভাবে আকাশে উড্ডয়ন শেষে এই দুই নারী কর্মকর্তাকে ‘ফ্লাইং কাভার অল-এ স্কোয়াড্রন’ ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়।
নাইমা হক ও তামান্না-ই-লুৎফি এর আগে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতেই যুদ্ধসংক্রান্ত নয়-এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে বিমান বাহিনীতে প্রথমবারের মতো সামরিক পাইলট নিয়োগের পথ উন্মুক্ত হলে তারা এতে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ নম্বর স্কোয়াড্রনে প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টার উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শুরু করেন দুই নারী বৈমানিক- নাইমা হক এবং তামান্না-ই-লুৎফি। তাদের মধ্যে তামান্না-ই-লুৎফি প্রশিক্ষণের প্রথম ধাপ শেষ করে ২১ নভেম্বর বেল-২০৬ মডেলের একটি হেলিকপ্টার একা সফলভাবে আকাশে উড়ানোর মাধ্যমে দেশের প্রথম সামরিক নারী বৈমানিক হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এরপর ১৭ ডিসেম্বর পৃথক হেলিকপ্টার নিয়ে সফলভাবে আকাশে উড়ার মধ্য দিয়ে ইতিহাস স্থাপন করেন তারা।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে নারী কর্মকর্তা নিয়োগের পাশাপাশি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নারীর অবদান ও দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরলস পরিশ্রম ও নিষ্ঠার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রথমবারের মতো জিডি (পাইলট) ব্রাঞ্চে নারী বৈমানিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। বেসামরিক ক্ষেত্রে নারী বৈমানিক থাকলেও সামরিক জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং বৈমানিক পেশায় বাংলাদেশে এই প্রথম নারী বৈমানিক নিয়োগের মাইলফলক স্থাপন করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। দুই নারী বৈমানিকের সাফল্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তথা সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য এক নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এর আগে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন নারী বৈমানিক বেসামরিক বিমান চালানোর অনুমতি পেয়েছেন। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে বিমান চালানোর অনুমতি পান সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা।
আইএসকে বোমায় কাঁপান যে নারী
নারী যখন আকাশ ছুঁয়েছে তখন তারা পিছিয়ে রয়েছে এমনটি ভাবার দিন শেষ হতে চলল। নারী পাইলটদের বীরত্বের গল্প কম নয়। যুগে যুগে যুদ্ধবিমানের ককপিটে বসে সাহসিকতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন তারা।
সাম্প্রতিক সময়ে আইএসআইএস যা এখন আইএস নামে পরিচিত- এই সন্ত্রাসী সংগঠনটি সারা বিশ্বে এক মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে প্রতিনিয়ত। এই যুদ্ধে এক নারী পাইলট রীতিমতো নায়িকা হয়ে উঠেছেন। আইএসের ওপর বোমা বর্ষণকারী এই নারী পাইলটের নাম মরিয়ম আল মুনসরি।
সেনাবাহিনীতে মেজর পদে কর্মরত এই নারী পাইলট আইএসের ওপর বোমা নিক্ষেপকারী প্রথম নারী বৈমানিক হিসেবে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। আইএসের হাতে যখন আপামর জনসাধারণ নিরাপদ নয়, নারী ও শিশুরা রয়েছে চরম দুর্যোগে তখন একজন নারী পাইলটের এই সাহসী ভূমিকা সর্বত্র প্রশংসিত হয়ে ওঠে। পশ্চিমা বিশ্ব তো বটেই, গোটা পৃথিবীতেই আইএসের ওপর যুদ্ধবিমান থেকে বোমা নিক্ষেপকারী এই নারী পাইলট সাহসিকতার প্রতীক হয়ে ওঠেন। কেউ তাকে বলছেন আয়রন লেডি, কেউ বলছেন আকাশের আতঙ্ক।
যে বিশেষণই দেওয়া হোক না কেন, যুদ্ধবিমান নিয়ে আইএসের ওপর হামলা করা প্রথম নারী পাইলট হিসেবে তার ভূমিকা সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। আরব মিত্রদের নিয়ে সিরিয়ায় বিমান হামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আইএস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই অভিযানে রয়েছে সৌদি আরবও। সৌদি প্রিন্স স্বয়ং এই অভিযানে অংশ নিয়েছেন। ডেইলি মেইল অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে এ খবর নিশ্চিত করে ছবিও প্রকাশ করে। মজার ব্যাপার হলো, তার সঙ্গে ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম নারী পাইলট মেজর মরিয়ম আল মুনসরি। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের দমনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুসলিম নারী পাইলট মেজর মরিয়ম আল মুনসরি। যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে আইএস লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলায় মরিয়ম একটি এফ-১৬ বিমান চালাচ্ছেন। সিরিয়া ও ইরাকে সক্রিয় ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিদ্রোহীদের ঠেকাতে বিমান হামলায় অংশ নিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম নারী পাইলট মেজর মরিয়ম আল মুনসরি। ৩৫ বছর বয়সী এ নারী এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসকে লক্ষ্য করে হামলা চালান। কিশোরী বয়স থেকে মরিয়মের স্বপ্ন ছিল পাইলট হওয়ার।
দ্য ন্যাশনালের প্রতিবেদনে জানা যায়, আমিরাতের বিমান বাহিনীতে একসময় নারীদের পাইলট হওয়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু সে সুযোগ এলে ভাগ্য খুলে যায় মুনসরির। আমিরাত মেডেলজয়ী আল মুনসরিই দেশটির প্রথম নারী পাইলট। সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে বিমান হামলায় মরিয়মের অংশ নেওয়ার খবর রাতারাতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-টুইটারে রটে যায়।
দেশে দেশে নারী পাইলটদের আকাশজয়
ভারতের প্রথম মুসলিম নারী পাইলট সারাহ হামিদ। তিনি এখন ইতিহাসের অংশ। ভারতীয় মুসলিম সমাজের রক্ষণশীলতাকে অতিক্রম করে তাকে জয় করতে হয়েছে এ জায়গা। ব্যাঙ্গালুরুর ২৫ বছর বয়সী এই নারী ভারতের উড্ডয়ন খাতের ৬০০ নারীর মধ্যে এ মুহূর্তে একমাত্র মুসলমান নারী, যিনি পেশাদার পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সারাহর পথচলা যে খুব মসৃণ ছিল তা বলা যাবে না। তার বাবা হামিদ হুসাইন আহমেদ বলেছিলেন, আমরা শুরুতে তাকে নিরুৎসাহিতই করেছি। আমাদের মুসলিম পরিবারের মেয়েরা আসলে এমন কোনো পেশায় যায় না যেখানে তাকে পরিবারের থেকে দূরে থাকতে হয়, অথবা কোনো সঙ্গী ছাড়া হোটেলে থাকার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু বাবা হামিদ হুসাইন মেয়ের অনড় অবস্থান দেখে এরপর কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রে তার এক পাইলট বন্ধুর সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত সম্মতি দিই বলা যায়।
২০০৭ সালে সারাহর বয়স তখন ১৮। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফ্লাইং স্কুল থেকে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হন তিনি। আর এটাই সারাহর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। সারাহর পথ ধরে ভারতে আরও দুজন মুসলিম নারী এখন পাইলট হওয়ার অপেক্ষায়। তারা হলেন ২৬ বছর বয়সী ক্যাপ্টেন সৈয়দা ফাতিমা সালভা ও ১৮ বছর বয়সী আয়েশা আজিজ।
কর্মজীবন সারাহ বেশ উপভোগ করছেন। সারাহ দুই বছর ধরে বিমানচালকের পেশায় কর্মরত আছেন। শুধু ভারতের এই দৃষ্টান্ত নয়, আফগানিস্তানেও মিলেছে নারী পাইলটের দেখা।
হত্যার হুমকি আর পুরনো দিনের জেন্ডার ধ্যানধারণাকে পেছনে ফেলে সদম্ভে এগিয়ে চলছেন আফগানিস্তানের তালেবানের পতনের পর দেশটির প্রথম নারী পাইলট। তার নাম নিলুফার রহমানী। বয়স ২৩ বছর। খাকি পোশাকের ওপর বৈমানিকের শেড আর মাথায় কালো কাপড় পরে তিনি যখন কাবুল বিমান বাহিনীর ঘাঁটির টারমাকে হেঁটে চলেন তখন সেখানে অন্য কোনো নারীর উপস্থিতি চোখে পড়ে না বললেই চলে।
আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বলেছেন, যখন আমি শিশু ছিলাম দেখতাম যে পাখিরা আকাশে উড়ে বেড়ায়, আমি তখন বিমান চালাতে চেয়েছিলাম। অনেক আফগান মেয়েরই স্বপ্ন আছে, তবে তাদের এগিয়ে চলার পথে আছে সমস্যা এবং হুমকি। নিলুফার কাবুলে বেড়ে উঠেছেন। ২০১০ সালে যখন তিনি বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণে ভর্তি হন তখন তার স্বজনদের কাছে এ কথা গোপন রাখা হয়। কারণ, এ দেশে নারীদের বাড়ির বাইরে যাওয়াকে ভালো চোখে দেখা হয় না। দুই বছর পর তিনি আফগানিস্তানের ইতিহাসে প্রথম নারী বৈমানিক (স্থির-পাখার বিমানের) হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। কিন্তু তালেবানদের হুমকি অব্যাহত রয়েছে। নিজের আত্দরক্ষার জন্য সব সময় একটি পিস্তল সঙ্গে রাখেন নিলুফার রহমানী।
সন্ত্রাসের কালোছায়া রয়েছে পাকিস্তানেও। তবু ব্যতিক্রম এক নারী আকাশে উড়েছেন ঠিকই। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানের প্রথম নারী পাইলটের নাম আয়েশা ফারুক। উত্তর পাকিস্তানের মুশাফ ঘাঁটিতে ২৬ বছর বয়সী এই তরুণী পুরুষ সহকর্মীদের সম্পর্কে জানান, আমি নির্ভুলভাবে বোমা নিক্ষেপ করি। সংগ্রামী নারী সেই পাকিস্তানেরই যিনি জঙ্গিবিমান চালনায় দক্ষ।
গত এক দশকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে পাইলট হিসেবে যোগ দেওয়া ১৯ নারীর অন্যতম আয়েশা ফারুক। তিনি ছাড়াও আরও পাঁচজন নারী জঙ্গিবিমানের পাইলট রয়েছেন দেশটিতে। তবে তারা যুদ্ধে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। এ পরীক্ষায় পাস করেছেন আয়েশা ফারুক। তিনি যুদ্ধে যাওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জনকারী একমাত্র নারী পাইলট।
আকাশজয়ে নাম লিখিয়েছেন এই সৌদি নারী পাইলটও। এক নারী পাইলটকে প্রথমবারের মতো আকাশে উড়ার লাইসেন্স দিয়েছে সৌদি সরকার। হানাদি আল-হিনদি নামের ওই পাইলট কাজ করছেন কিংডম হোলডিং কোম্পানিতে, যার মালিক হলেন স্বয়ং সৌদি প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল। ৩৫ বছরের হানাদি এখন কোম্পানির ছোট আকারের এবং বিলাসবহুল বিমানগুলো চালাতে পারছেন। বাবার স্বপ্ন পূরণে ২০০১-এ জর্ডানের ‘মিডল ইস্ট একাডেমি অব এভিয়েশনে’ ভর্তি হন। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন