Skip to content

আদমস পিক

Adams-Peakমুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান

শ্রীলঙ্কার একটি পাহাড়ের নাম আদমস পিক। বিশাল আকৃতির পায়ের একটি ছাপ আছে পাহাড়টির চূড়ায়। শুধু মুসলমান নয় সব ধর্মের মানুষের আগ্রহ এই আদমস পিককে নিয়ে। বৌদ্ধরা এখানে মন্দির গড়ে তুলেছে। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও মনে করে তাদের ধর্মের সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সারা বিশ্ব থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ আসে এই ছাপটি পরিদর্শনে।
রাজধানী কলম্বো থেকে প্রায় ৭৯ কিলোমিটার পূর্বে রতœপুরা জেলায় এর অবস্থান। পায়ের ছাপটি প্রায় দুই হাজার ৫০০ মিটার উঁচু চোঙাকৃতি পাহাড়ের চূড়ায়। ছাপটি লম্বায় ৬৮ ইঞ্চি। আঙ্গুলের দিকে এটি ৩১ ইঞ্চি ও গোড়ালির দিকে ২৯ ইঞ্চি চওড়া।
শ্রীলংকার মুসলমানদের বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ.) বেহেশত থেকে প্রথম শ্রীলংকার এই পাহাড়ে পদার্পণ করেন। বিশাল আকারের এই পায়ের ছাপটি তাঁরই। আর এজন্যই পাহাড়টির নাম দেয়া হয়েছে আদমস পিক বা আদমের পাহাড়।
পাহাটির চূড়ায় ওঠা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এককথায় অ্যাডভেঞ্চার। অনেকে ঝুঁকি নিয়েই সেখানে গিয়েছেন। তারা নিজের চোখে ওই পায়ের ছাপ দেখে বিস্মিত হয়েছেন। আড়াই কিলোমিটার উঁচু এই চূড়ায় উঠতে হয় দীর্ঘ পথ সিঁড়ি ভেঙে পায়ে হেটে। সিঁড়িতে রয়েছে প্রায় চার হাজার ধাপ। সবগুলো ধাপ নিরাপদ নয়। সিঁড়ি ছাড়াও পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ পথ। সব মিলে আদমস পিকে পৌঁছতে সময় লাগতে পারে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা। জটিল এক আবহাওয়া অঞ্চলের মধ্যে এর অবস্থান। আবহাওয়া ভালো থাকলে ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে এই পাহাড়ে উঠা যায়। অন্য সময়ে পাহাড়টি থাকে মেঘে লুকিয়ে। মেঘের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয় এখানে। পুরো এলাকাটি পাহাড়ী বনাঞ্চলে ঘেরা। সংরক্ষণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে। হিংস্র সব প্রাণীর বাস এখানে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচুতে হওয়ায় পাশের ক্যান্ডি ও নিউওয়ারা এলিয়া এবং আদমস পিক এলাকার আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত শীতল। রাতের বেলা বেশ ঠাণ্ডা।
তবে রাতে পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত বিস্তৃত পথের দুই পাশের বাতিগুলো এক অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি করে। ক্যান্ডি থেকে নিউওয়ারা এলিয়া হয়ে আদমস পিক পর্যন্ত পথের দুধার সাজানো হয়েছে বিভিন্ন রঙের অসংখ্য ফুল দিয়ে। দেখলে মনে হয় এলাকাটি পটে আঁকা ছবির মতো সুন্দর। পাহাড় ও উপত্যকাগুলো বিভিন্ন প্রজাতির পাখির বিচরণে মুখরিত। বিশ্বখ্যাত সিলন-টি এই অঞ্চলগুলোতেই বেশি জন্মে। ভারত মহাসাগর থেকে এ পাহাড় পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। আকৃতি চোঙ বা কোণের মতো। পিরামিড দেখতে যেমন।
এই পাহাড়ের চূড়ায় সামান্য একটি সমতল ক্ষেত্র রয়েছে। ক্ষেত্রটির দৈর্ঘ্য ৭৪ ফুট। আর প্রস্থ মাত্র ২৪ ফুট। এর চূড়ায় রয়েছে প্রকাণ্ড একটি পাথরখণ্ড। এর উচ্চতা আট ফুট। পাথরখণ্ডটির ওপরেই রয়েছে পয়ের ওই ছাপ।
মুসলমানরা পছাপটিকে হযরত আদম (আ:)-এর পায়ের মনে করলেও বৌদ্ধরা মনে করে, ছাপটি হলো বুদ্ধের বাম পায়ের। বুদ্ধ তার অন্য পা রেখেছিলেন থাইল্যান্ডে। আগে যা পরিচিত ছিল সিয়াম নামে। একই রকম ছাপ পাওয়া গেছে লাওস, ক্যাবোজ ও চীনে। বৌদ্ধদের ধারণা, বুদ্ধ ছিলেন ৩৫ ফুট লম্বা। তাই তিনি এত দূরে দূরে পা ফেলতেন।
পায়ের এই ছাপকে খ্রিস্টানরাও সম্মানের চোখে দেখে। ১৫০৫ সালে শ্রীলংকা সফরে এসেছিলেন পর্তুগিজ এক নাগরিক। তিনি এ পাহাড়কে বলেছেন পিকো ডি আদম। তারা মনে করেন সেইন্ট থমাস দ্য ডাউবটার ভারত ও শ্রীলংকা এসেছিলেন। এরপর তিনি এই পাহাড়ে পা রেখে স্বর্গে চলে গেছেন।
হিন্দুরা মনে করে, ওই ছাপগুলো হলো শিবের পায়ের।
তবে যে যাই বলুন, ছাপগুলো আসলে কার সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আজো পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *