ভাটিয়ালী
বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চলের জনপ্রিয় গান ভাটিয়ালী। নদ-নদীতে পূর্ণ ময়মনসিংহ অঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তর-পূর্ব দিকের অঞ্চলগুলোতেই ভাটিয়ালী গানের মূল সৃষ্টি, চর্চাস্থল। ভাটিয়ালী গানের মূল বৈশিষ্টা হলো, এ গান রচিত হয় মূলত মাঝি, নৌকা, দাঁড়, গুন বিষয়ে। নদীতে কারও সাথে যোগাযোগে লম্বা টান দিয়ে দিয়ে কথা বলতে হয়। এই গানেও তাই এ ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ‘মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে’ একটি বিখ্যাত ভাটিয়ালী গান।
ভাওয়াইয়া
উত্তরবঙ্গের লোকগীতি ভাওয়াইয়া। উত্তরবঙ্গে নদী-নালা অন্য অঞ্চলের তুলনায় কম থাকায় যাতায়াতের মূল বাহন ছিল গরুর গাড়ি। দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি কাটাতে গাড়োয়ানদের ভরসা ছিল বিশেষ ঢংয়ের এই গান। উঁচু-নিচু কাঁচা রাস্তায় চলার সময় গাড়িয়ালের গলায় যে ভাঁজ পড়তো, তা এখন এই গানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে’, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই ইত্যাদি এই ধারার বিখ্যাত গান।
বাউল গান
ধারণা করা হয়, সতেরো শতকে বাউল সম্প্রদায়ের সাথেই বাউল গানের জন্ম। কিন্তু এই ধারা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে লালন সাঁইয়ের মাধ্যমে, উনিশ শতক থেকে। ধারণা করা হয়, লালন প্রায় দু’হাজারের মত গান রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বাউল গান দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন।
গম্ভীরা
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে, বিশেষকরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গম্ভীরার প্রচলন রয়েছে। ধারণা করা হয় যে, গম্ভীরার প্রচলন হয়েছে শিবপূজাকে কেন্দ্র করে। তবে পরবর্তীতে গম্ভীরা সর্বস্তরের মানুষের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এখন এই গানে সামাজিক নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে সমাধানও দেওয়া হয়। গম্ভীরার মুখ্য চরিত্র হিসেবে নানা-নাতি খুবই জনপ্রিয়৷ আঞ্চলিক ভাষায় নানা ও নাতির সংলাপ ও গানের মধ্য দিয়ে এই গান পরিবেশন করা হয়।
যাত্রাপালা
যাত্রা এক ধরনের লোকনাট্য ধারা। সাধারণত নানা ধরনের ইতিহাসধর্মী গল্পের আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘ এই নাটক উপস্থাপন করা হয় দর্শকদের সামনে। তবে উপস্থাপনা, মঞ্চসজ্জা, আলোকসজ্জা, সংলাপ, সবকিছু মিলিয়ে মঞ্চনাটকের চেয়ে একেবারেই আলাদা যাত্রাপালা। যাত্রা পালার বিবেকের গান, বা অন্যান্য গানও উপস্থাপনভঙ্গী এবং সুর-কথা মিলিয়ে বাংলা সংস্কৃতিতে করে নিয়েছে আলাদা স্থান।