এত দিন মাত্র একটি ইটা কারিনে কিংবা ‘জোড়া নক্ষত্র ব্যবস্থা’র কথাই জানতেন জ্যোতির্বিদরা। কিন্তু এবার পাঁচটি ইটা কারিনের মতো জোড়া নক্ষত্র আবিষ্কার করে হইচই ফেলে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার একদল বিজ্ঞানী। আর এই দলের নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশের তরুণ জ্যোতির্বিজ্ঞানী রুবাব খান।
এদিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানে অসামান্য এই অবদানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রুবাব খানকে অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস।
পৃথিবী থেকে ১০ হাজার আলোকবর্ষের দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত ইটা কারিনে সবচেয়ে আলোকিত ও বৃহৎ নক্ষত্র ব্যবস্থা। এর দুটি নক্ষত্র হলো—ইটা কারিনে ‘এ’ এবং ইটা কারিনে ‘বি’। নক্ষত্র দুটি মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে একে অন্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে। এর মধ্যে ইটা কারিনে ‘এ’র আকৃতি সূর্যের প্রায় ১৫০ গুণ। পৃথিবী থেকেই এই জোড়া নক্ষত্র ব্যবস্থার দূরত্ব সাড়ে সাত হাজার আলোকবর্ষ।
এ রকম জোড়া নক্ষত্র ব্যবস্থা একটি আছে বলেই এত দিন জানতেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কিন্তু গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলনে সবাইকে অবাক করে দিলেন রুবাব খান। ঘোষণা করেন, ইটা কারিনের মতো পাঁচ-পাঁচটি জোড়া নক্ষত্র ব্যবস্থার সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা। অন্যান্য নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে
এগুলোর দূরত্ব দেড় কোটি থেকে আড়াই কোটি আলোকর্ষ। রুবাব খানের দল এগুলোকে বলছে ‘ইটা টুইনস’। আবিষ্কারের তাৎপর্য বোঝাতে গিয়ে বাংলাদেশি এই জ্যোতির্বিজ্ঞানী বলেন, ‘আমাদের এই পৃথিবী সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় কী কী উপাদান কিভাবে কাজ করেছে—ইটা টুইনসের ব্যাখ্যা সে বিষয়ে আমাদের ধারণা দিতে পারে।’
রুবাব খানের বেড়ে ওঠা রাজধানী ঢাকায়। তিনি রাজধানীর উদয়ন স্কুল থেকে এসএসসি ও নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বাবা অধ্যাপক নূরুর রহমান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ছোটবেলা থেকেই মহাকাশ বিজ্ঞানে আগ্রহ রুবাবের। সে আগ্রহ থেকেই ২০০৪ সালে তিনি অ্যাস্ট্রোফিজিকসে পড়াশোনার জন্য কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে বৃত্তি পান। ২০০৮ সালে সেখানেই গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন তিনি। পরে ২০১৪ সালে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। আর বর্তমানে আছেন নাসায়; দলনেতা হিসেবে।
নাসার দেওয়া তথ্য মতে, ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সাতটি নক্ষত্রপুঞ্জে অনুসন্ধান চালিয়েছে রুবাবের দল। এতে ‘হাবল স্পেস টেলিস্কোপ’ ও নাসার ‘স্পিত্জার স্পেস টেলিস্কোপ’-এর সহায়তা নেওয়া হয়।
এদিকে গতকাল রুবাবকে অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। দূতাবাসের দাপ্তরিক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক অভিনন্দন বার্তায় বলা হয়, রুবাবদের এই অর্জন জ্যোতির্বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের মাইলফলক। সূত্র : কালের কণ্ঠ