
বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, ফাইল ফটো
শুভজ্যোতি ঘোষ
ভারতের ব্যাঙ্গালোরে আজ রোববার বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা যেভাবে তার দলের সাসপেন্ড হওয়া দুই বোলারের – বিশেষ করে তাসকিন আহমেদের সমর্থনে আইসিসির সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ খুলেছেন, তা প্রায় নজিরবিহীন।
কেন তাসকিন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা সঠিক নয় – টেকনিক্যাল ব্যাখ্যা দিয়ে সেটা যেমন তিনি বলার চেষ্টা করেছেন – পাশাপাশি বিশ্বকাপ খেলার সময় এই সিদ্ধান্তটা যে দলের ওপর বিরাট এক ধাক্কা, তা স্বীকার করে আবেগপ্রবণও হয়ে পড়েছিলেন বাংলাদেশের এই অধিনায়ক।
বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচের আগে দুই দলের সংবাদ সম্মেলন করাটা আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী বাধ্যতামূলক – ফলে মনমেজাজ যতই খারাপ থাকুক, আগামীকাল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে আজ মিডিয়ার মুখোমুখি হতেই হত।
কিন্তু সেই সাংবাদিক বৈঠকটাকে তিনি যে কার্যত আইসিসিকে আক্রমণ করার মঞ্চ হিসেবেই ব্যবহার করবেন, অতটা কেউই ভাবতে পারেননি।
আরাফাত সানির ওপর নিষেধাজ্ঞা নিমরাজি হয়ে মেনে নিলেও তাসকিন আহমেদের সাসপেনশন যে বাংলাদেশ দল কিছুতেই মানতে পারছে না, মাশরাফি তা নিয়ে কোনও রাখঢাকই রাখেননি। বরং রীতিমতো টেকনিক্যাল ব্যাখ্যা দিয়ে দাবি করেছেন – চেন্নাইয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রে তাসকিনের তিনটি বাউন্সারকে ত্রুটিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে তার ভিত্তিতেই তাকে নিষিদ্ধ করা হল – অথচ ধরমশালায় নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে যে ম্যাচে তাকে রিপোর্ট করা হয় তাতে তাসকিন ওরকম কোনও বাউন্সারই করেননি।
মাশরাফির প্রশ্ন, ‘ধরমশালার যে ম্যাচে তাকে সন্দেহ করা হয়েছে, সেই ম্যাচে তার একটা বলও অবৈধ ছিল না। ম্যাচে যার প্রতিটা বলই সঠিক ছিল, তাকে আমি কীসের ভিত্তিতে জাজমেন্ট করব?’
‘এখন হয়তো টেস্ট দেওয়ার সময় তার মাত্র তিনটা বাউন্সার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তার সব ফুল লেংথ ডেলিভারি কিন্তু একেবারে ঠিকঠাক ছিল – কনুইও পনেরো ডিগ্রির বেশি বাঁকেনি। আর অনেক বোলারই তো বাউন্সার ছাড়াই বল করছে, এবং যে ম্যাচের ভিত্তিতে তাকে টেস্ট করল তাতেও তার সব ডেলিভারিই লিগাল। তাহলে কথা হচ্ছে, আপনি কি তাকে আটকে রাখবেন, না কি রাখবেন না?’

সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ দুই বোলার তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি
শুধু এতেই শেষ নয় – বাংলাদেশ দল যে সাসপেন্ড হওয়া দুই বোলারের পাশে আছে সেটা বোঝাতেও কোনও চেষ্টা বাদ রাখেননি মাশরাফি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যেমন তাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চেষ্টায় তৎপরতা চালাচ্ছে – তেমনি দলের পক্ষ থেকেই দুই বোলারকে বারবার বলা হয়েছে ঘাবড়ানোর কিছু নেই – তোমরা ঠিক আবার দলে ফিরবে। তাসকিন আর সানির মনোবল চাঙ্গা রাখার এই প্রচেষ্টাতেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাশরাফি নিজেই।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি স্বীকারও করলেন গোটা ঘটনায় দল এতটা ভেঙে পড়েছে কারণ এটাকে তারা ‘নিজেদের বাড়ির ভেতরের একটা সমস্যা’ হিসেবে দেখছে।
‘আপনার নিজের ঘরে, মানে বাসায় যদি দুইটা ছেলে সমস্যায় পড়ে – তাহলে তো আপনি তো কোনও কাজেই সেই উদ্যমটা পাবেন না, তাই না? আমাদের টিমের অবস্থাও এখন অনেকটা ওই রকম – মানসিকভাবে যে আমরা খুব একটা ভাল অবস্থায় নেই তা তো বুঝতেই পারছেন। তবু আমরা আগের ম্যাচে যে স্পিরিট নিয়ে নেমেছিলাম, কালকের ম্যাচেও সেটা বজায় রাখার চেষ্টা করব,’ বলছিলেন মাশরাফি।
বলতে বলতে সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে ঝরঝর করে কেঁদেই ফেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
মাইক থেকে সরে গিয়ে জার্সি দিয়ে চোখ মুছতে থাকেন অবিরাম।
প্রশ্ন করা ভুলে গিয়ে সাংবাদিকরাও অবাক হয়ে সে দৃশ্য দেখতে থাকেন। সূত্র : বিবিসি