Skip to content

আমার প্রিয় তিতাস

মুনিরুল ইসলাম মাহদী
আমি তিতাসপাড়ের ছেলে। তিতাস ছিল আমার শৈশব ও কৈশোরের নদী। যৌবনবতী তিতাসে যে আমি কতবার সাঁতার কেটেছি, গোসল সেরেছি, এর তীরে বসে কত গপ্প-কিসসা বলেছি আর শুনেছি—আজ আর তা বলতে পারব না। তিতাসকে ভালোবেসেই আমি বড় হয়েছি।

শৈশব-কৈশোরে তিতাস ছিল আমার আনন্দ-উল্লাস, হইহুল্লোর আর উচ্ছ্বাস প্রকাশের নদী। আজ দূর থেকে তিতাসের কান্না শুনে বিচলিত, বিহ্বল ও উদ্বেলিত হই। চকিতে চমকিত হই। তিতাসের আজ এ কী রূপ! তিতাস, তুমি আজ কোনো কথা কও?

Titas3

হোমনার ঐতিহ্যবাহী শ্রীমদ্দি গ্রাম এবং বাঞ্ছারামপুরের কালিকাপুর সীমানা ঘেষে মেঘনা নদী থেকে আমার প্রিয় তিতাস নদী শুরু হয়েছে। প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ঘাগুটিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় এসে নদীটি দুটি ভাগে ভাগ হয়েছে। একটি অংশ বাঞ্ছারামপুরের ওপর দিয়ে পাইকারচর, আসাদনগর খাপ্পা হয়ে আবার মেঘনা নদীতে মিশেছে। অপর অংশ ভুরভরিয়া, গঙ্গানগর, নতুন ইমামনগর, নবীনগর উপজেলার বিটিবিশারা ধরাভাঙ্গা গ্রাম হয়ে মেঘনা নদীতে পড়েছে। হোমনার পশ্চিম অঞ্চল থেকে পূর্বদিকে শ্রীমদ্দি, হোমনা সদর, রামচন্দ্রপুর দিয়ে সরু হয়ে গেছে। প্রায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ তিতাস নদীতে অর্ধশতাধিক সংযোগ খাল রয়েছে। এসব খালের পানি দিয়ে ১০ হাজারেরও বেশি একর জমিতে বোরো চাষ করেন এলাকার কয়েক হাজার কৃষক তিতাস নদীর বয়স একেবারে অল্প নয়। এই নদীকে কেন্দ্র করে ইতিহাস-ঐতিহ্য নির্মিত হয়েছে। অদ্বৈত মল্লবর্মণ তিতাসের তীরের ধীবর শ্রেণীর মানুষের জীবন-যাত্রা নিয়ে লিখেছেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ শীর্ষক একটি কালজয়ী উপন্যাস।

অপ্রাকৃতিক কারণে আজ যারা তিতাসের রূপশ্রী হরণ করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। অন্যদিকে তিতাসের পূর্বঐতিহ্য, ইতিহাস ও সভ্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য এর ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন আছে। তিতাসের জন্য একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও দরকার। তিতাসের রূপচাঞ্চল্য বর্ষায় যারা অবলোকন করেননি, তারা এর রূপ-গরিমা সম্পর্কে অল্পই ধারণা করতে পারেন।
(প্রখ্যাত কবি-গবেষক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ জনাব তিতাশ চৌধুরীর লিখা অবলম্বনে)। লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে।

advertisement-955

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *