Skip to content

আশ্চর্য টিলার যাত্রী

Melborne

অস্ট্রেলিয়ার টুয়েলভ এপাসল দেখতে পর্যটকদের ভিড়।

ইকবাল হোসাইন চৌধুরী
ফোসস করে একটা হতাশার নিশ্বাস ফেললেন ফিরোজ খান, ‘টুয়েলভ এপাসল আমার যাওয়া হচ্ছে না।’ প্রমাদ গুনলাম আমরা। গ্রেট ওশান রোডের পাহাড়ি বিপজ্জনক পথে বাংলাদেশি প্রতিবেশী ফিরোজ খানই যে আমাদের মূল ভরসা।

ফিরোজ খান যদি শেষ মুহূর্তে ফসকে যান, তবে গাড়ি চালাবে কে? তাহলে দরকার নেই এত ঝুঁকি নিয়ে সাগরের মাঝে জেগে ওঠা ওই সব পাথুরে টিলা দেখতে যাওয়ার। আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।

কিন্তু বড় ভাই তারিকুল হাসান চৌধুরী সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে কঠিন শপথ করে ফেললেন, ‘আমি একাই চালাব গাড়ি।’ অতএব, পরদিনই সকাল সকাল আমরা রওনা হলাম মেলবোর্ন থেকে টুয়েলভ এপাসলের পথে। জায়গাটার কাগুজে নাম পোর্ট ক্যাম্পবেল পার্ক। ওখানেই নীল সাগরের মাঝখানে জেগে উঠেছে ১২ খানা আশ্চর্য সুন্দর পাথুরে টিলা। যিশুখ্রিষ্টের সঙ্গীদের নামানুসারেই তাদের এই নাম।

বিশ্বের অন্যতম সেরা বাসযোগ্য শহর মেলবোর্নের প্রধান এক আকর্ষণের নাম গ্রেট ওশান রোড।

মাইলের পর মাইলজুড়ে বিছিয়ে আছে সাগরের নীল জলরাশি। পাশ দিয়েই পাহাড়ের গাঁ ঘেঁষে চলে গেছে রাস্তা। বিপজ্জনক আর শ্বাসরুদ্ধকর সুন্দর। গ্রেট ওশান রোডে খানিক পরপরই বিপজ্জনক সব বাঁক আর সরু রাস্তা। একটু অসাবধান হলেই গাড়ি চলে যাবে কয়েক শ’ ফুট নিচে সোজা সাগরে। বিপজ্জনক পাহাড়ি রাস্তা পেরিয়ে একসময় এল সবুজ বন। সেই বন পেরিয়ে এগিয়ে চললাম আরও। তিন-চারবারের বিরতি নিয়ে শেষ আমরা যখন এপাসলের কাছাকাছি পৌঁছালাম, তখন দুপুর।

সাগরে পাথরে লুকোচুরি
কাঠের পাটাতন বেয়ে এগোচ্ছি সাগরের পেটের ভেতরে। এর মধ্যে হঠাৎ ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টির তোয়াক্কা না করে এগিয়ে চললাম আমরা। উৎসুক পর্যটকদের পিছু পিছু। সাদা অস্ট্রেলিয়ান, চৈনিক চেহারার একাধিক তরুণী, শাড়ি পরা ভারতীয় বৃদ্ধা। কে নেই সেই ভিড়ে। একটা চূড়ার ওপর উঠেই দিগন্তে দৃষ্টি মেলেই মনটা জুড়িয়ে গেল। নীল আকাশের সঙ্গে মিলেছে নীল সাগরের পানি। পানি ফুঁড়ে ওপরের দিকে উঠে গেছে আশ্চর্য সব টিলার সারি। বৃষ্টি হুট করে এসেছিল। হুট করে নেই। পাশেই দেখলাম সেলফি স্টিক বের করেছেন এক শ্বেতাঙ্গ জুটি। ছবি তোলার পালা চলছে। অতি উৎসাহী কেউ কেউ আরও কাছ থেকে প্রকৃতির এই বিস্ময় দেখার আশায় নেমে যাচ্ছেন কাঠের পাটাতন বেয়ে নিচে। এর মধ্যেই খটকা লাগল একটু। কই ১২টা টিলা তো দেখছি না? চারটা কি পাঁচটা বড়জোর।

জবাব মিলল, খানিক দূরেই। সেখানে ঘোষণা সেঁটে রেখেছে পোর্ট ক্যাম্পবেল পার্ক কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, বহুদূর থেকে দেখা হয় বলে প্রায়ই একটার পেছনে আরেকটা ঢাকা পড়ে থাকে এসব পাথুরে টিলা। হাজার বছর ধরে বালি আর সাগর শামুকের দেহাবশেষ মিলে তৈরি হয়েছে টুয়েলভ এপাসলের পাথুরে শরীর। সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে ক্রমাগত ভাঙা-গড়ার খেলা চলতে থাকে বলে এসব টিলার রূপ পাল্টায় বছরে বছরে।

তথ্যকণিকা বলছে, এপাসল এলাকার আশপাশের সাগরের পানির নিচেও আছে বিস্ময়কর সব সামুদ্রিক প্রাণী। দৈত্যাকৃতির কাটলফিশ, পটবেলি (পেট ফোলা) সিহর্স এমন নানা বিরল প্রাণী ঘুরে বেড়ায় এখানকার পানিতে। ক্যাঙারু কিংবা সিল বা খুদে পেঙ্গুইনদের দেখা পাওয়াও বিচিত্র নয়। সব মিলিয়ে, টুয়েলভ এপাসল দর্শন যে কারও জন্য হতে পারে রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা।

যদি যাওয়ার সুযোগ হয়
* মেলবোর্ন শহর থেকে গাড়িতে যেতে সময় লাগতে পারে চার-পাঁচ ঘণ্টা।
* রাতটা কাটাতে চাইলে আশপাশেই মিলবে বিলাসবহুল হোটেল অথবা কম খরচের রিসোর্ট।
* পাকা চালক না হলে নিজে গাড়ি চালানোর ঝুঁকিতে না যাওয়াই ভালো।
* পকেট ভারী থাকলে হেলিকপ্টারে চড়ে টুয়েলভ এপাসলের ওপর দিয়ে একটা চক্কর দিয়ে আসতে পারেন। সৌজন্যে : প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *