নাবীল অনুসূর্য
সংক্ষেপে ডাকা হয় ইউএফও। পুরো নাম আনআইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট। প্রচলিত ভাষায়, ফ্লাইং সসার। মানে, অচেনা ভিনগ্রহবাসীর মহাকাশযান আর কি! সম্প্রতি এই ইউএফওদের আনাগোনা কমে গেলেও কয়েক দশক আগেও প্রায়ই এগুলোর দেখা পাওয়া যেত।
এই ইউএফও ভালোভাবে আলোচনায় আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। তবে প্রথম ইউএফও দেখার ঘটনা অনেক পুরনো। সেই ১১ শতকে চীনা পণ্ডিত সেন কুও তাঁর ‘ড্রিম পুল এসেস’ নামের বিশাল গ্রন্থে প্রথম ইউএফওর উল্লেখ করেন। এরপর ১৩ শতকে জাপানে, ১৬ শতকে জার্মানিতে, ১৯ শতকে চিলি-আমেরিকা-মেক্সিকোতে দেখা মেলে ইউএফওর। আর বিশ শতকে তো ইউএফও দেখার বন্যা বয়ে যায়। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীতে এ রকম ঘটনা প্রচুর রিপোর্ট করা হয়।
এই ইউএফওগুলো সত্যি ভিনগ্রহবাসীর কি না, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে ইউএফও নিয়ে রীতিমতো বিজ্ঞানের একটি শাখা চালু হয়ে গেছে। নাম ইউএফওলজি। ইন্টারন্যাশনাল ইউএফও মিউজিয়াম নামে জাদুঘরও আছে আমেরিকায় আর তুরস্কে। প্রথমে সুইডেন, পরে আমেরিকা, এমনকি ব্রাজিলও সরকারিভাবে ইউএফও নিয়ে গবেষণায় নেমেছিল। কোনো গবেষণাতেই অবশ্য এখন পর্যন্ত প্রমাণ করা যায়নি, ইউএফও আছেই। আবার ইউএফও যে নেই তা-ও নিশ্চিত না। তবে ইউএফও দেখতে পাওয়ার জন্য কয়েকটি জায়গা বেশ বিখ্যাত হয়ে পড়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার উইক্লিফ ওয়েল
অস্ট্রেলিয়ার টেনান্ট ক্রিক ও এলিস স্প্রিং শহর দুটিকে যোগ করেছে স্টুয়ার্ট হাইওয়ে। উইক্লিফ ওয়েল এই হাইওয়েতেই অবস্থিত। উইক্লিফ ওয়েল পরিচিত ‘অস্ট্রেলিয়ার ইউএফও রাজধানী’ হিসেবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই এখানে ইউএফও দেখা দিতে শুরু করে। তখন এখানে যিনি কাজ করতেন, তিনি নাকি প্রায় রাতেই ইউএফও দেখতে পেতেন। একটা বাঁধানো খাতায় তিনি ঘটনাগুলো লিখেও রেখেছিলেন। যারা এখানে আসত তারা আগে খাতাটি দেখতেও পারত। কিন্তু ১৯৯০ সালে খাতাটি চুরি হয়ে যায়। পরে নতুন আরেকটি খাতা বানানো হয়েছে। সেখানে তার পরের সব ইউএফও দেখার ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। সম্প্রতি সেখানে ‘উইক্লিফ ওয়েল হলিডে পার্ক’ নামে একটি এলিয়েন-থিমড পার্ক চালু হয়েছে। পার্কটির বিজ্ঞাপনে লেখা আছে, ‘এখানে ইউএফও দেখাটা এতটাই সাধারণ ঘটনা, আপনি যদি সারা রাত জেগে কোনো ইউএফওর দেখা না পান, বুঝবেন আপনি দুর্ভাগা।’
ইংল্যান্ডের ওয়ারমিনস্টার
ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের একটি গ্রাম ওয়ারমিনস্টার। সত্তরের দশকে আর্থার শাটলউড নামের এক সাংবাদিকের বদৌলতে গ্রামটি বেশ আলোচিত হয়ে ওঠে। তাঁর হিসাবে, স্রেফ এই গ্রাম থেকেই ইউএফও দেখার হাজারখানেক ঘটনা ঘটেছে! এমনকি যাদের ইউএফও দেখার আগ্রহটা একটু বেশি, তারা প্রায়ই এই গ্রামের পাশের ক্রেডল পাহাড়ে এসে জড়ো হতো। গ্রামটিতে সর্বশেষ রহস্যময় ঘটনাটিও বেশি দিনের পুরনো নয়। কে বা কারা গ্রামটির পাশের শস্যক্ষেতজুড়ে নিখুঁত জ্যামিতিক নকশা কেটে গিয়েছিল। মানে শস্য কেটে আঁক কষেছিল আর কি!
স্কটল্যান্ডের বনিব্রিজ
বনিব্রিজের অবস্থান স্কটল্যান্ডের দুই শহর এডিনবার্গ ও স্টারলিংয়ের মাঝামাঝি। এই বনিব্রিজে ইউএফও দেখা দিতে শুরু করে অনেক পরে। এখানে প্রথম ইউএফওর দেখা মেলে ১৯৯২ সালে। পরের বার দেখা মেলে ১৯৯৩ সালের শেষ দিকে। তখন থেকেই কেন জানি, ভিনগ্রহবাসীর এই জায়গাটা খুবই পছন্দ হয়ে গেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখন প্রতিবছর গড়ে বনিব্রিজে ইউএফও দেখার প্রায় ৩০০ ঘটনা ঘটে।
চিলির ইউএফও ট্রেইল
চিলিতে ইউএফও দেখতে পাওয়ার ঘটনা তো অনেক পুরনো। তবে গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে আন্দিজ পর্বতমালার দিকে একটু বেশিই ইউএফও দেখা যাচ্ছে। সব দেখেশুনে ২০০৮ সালে দেশটির স্যাম ক্লেমেন্তে শহরে একটা ইউএফও ট্রেইল-ই চালু করা হয়েছে। ১৯ কিলোমিটার লম্বা পথটি চলে গেছে একেবারে আন্দিজ পর্বতমালা পর্যন্ত। সবার ধারণা, ভিনগ্রহবাসী এই পর্বতমালার পাদদেশ ব্যবহার করে ইউএফও অবতরণ করার জন্য। ইউএফও দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য পথটিতে থাকা-খাওয়ার সব বন্দোবস্তই করা আছে। তবে এই পথে গেলে যে ইউএফও দেখা যাবে সে নিশ্চয়তা দিতে দেশটির পর্যটন বিভাগ একেবারেই রাজি নয়। সূত্র : কালের কণ্ঠ