Skip to content

ইউরোপের দেশ আর্মেনিয়ায় একমাত্র মসজিদ

: : সাইফুল্লাহ সাদেক : :

আর্মেনিয়ায় সময়গুলো দ্রুতই কেটে গেলো। ২৮ জুলাই দেশের উদ্দেশ্যে ফ্লাইট। ১০দিন দারুণ কেটেছে পূর্ব ইউরোপের সুন্দর এই দেশটিতে। মূকাভিনয় উৎসবের আগে-পরে এবং উৎসব চলাকালীন সময়ে অনেক জায়গায় ঘোরার সুযোগ হয়েছে। পুস্পের উপত্যকা- সাঘকাদজর, লেক সেভান, আর্মেনিয়ার সুইজার‌ল্যান্ড খ্যাত ডিলিজান এবং আর্মেনিয়ার বাংলাদেশ জেলা ভ্রমণ ছিলো সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত। একবার নয় শুধু দুই বার ভ্রমণের সুযোগ হয়েছে বাংলাদেশ জেলা।

দেশে ফেরার আগেরদিন তথা ২৭ জুলাই ইয়েরেভানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্রমণ করেছি। ইয়েরেভান স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইয়েরেভান স্টেট লেংগুয়েজ ইউনিভার্সিটি এন্ড সোস্যাল সায়েন্সেস এবং আর্মেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি অব ইকোনোমিকস। যদিওবা এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। তবুও ঘুরে এসেছি। তবে দেশে ফেরার পূর্ব মুহূর্তে আর্মেনিয়ার একটি মাত্র মসজিদ রাজধানীর ইয়েরেভানের ব্লো বা ‘নীল মসজিদ’ দেখা ছিল বাড়তি অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ।

দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের দেশ আর্মেনিয়ার পশ্চিমে তুরস্ক, উত্তরে জর্জিয়া, পূর্বে আজারবাইজান এবং দক্ষিণে ইরান। এই দেশ মেরিল্যান্ড রাষ্ট্রের তুলনায় সামান্য বড়, কিন্তু তার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের দিক থেকে খুব সমৃদ্ধ এবং অনন্য। এটি বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ রাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম। ৩০ লাখ লোকের বসবাস এখানে। এই দেশটিই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম খ্রিষ্টান ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে। এই খ্রিষ্টান দেশটিতে মুসলিমদের সংখ্যা কম হবে সেটাই স্বাভাবিক। মাত্র ৩ হাজার। আর পুরো আর্মেনিয়াজুড়ে রয়েছে একটি মাত্র মসজিদ, যেটিকে বলা হয়; নীল মসজিদ।

এটি শিয়া মসজিদ হিসেবেও পরিচিত। আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানে অবস্থিত মসজিদটি নির্মিত হয় ১৭৬৪-৬৮ সালের মধ্যে। ইরানের শাসক নাদির শাহের আমলে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তখন আর্মেনিয়ায় ইরানের প্রভাব ছিল।

চতুর্দশ শতকের পর থেকে আর্মেনিয়ায় বিভিন্ন মুসলিম শাসকদের নিয়ন্ত্রণ ছিলো। ১৬ শতকের প্রথমার্ধ থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত আর্মেনিয়ায় ইরানের শাহদের প্রভাব ছিলো। এসময়ই মূলত মসজিদটি নির্মিত হয়।

কতিপয় মুসলিম ঐতিহাসিকদের মতে, সপ্তম শতকে মুসলমানরা আর্মেনিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে। মধ্যযুগে আর্মেনিয়াতে মুসলিম উপাদান ক্রমবর্ধমানভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠে। ১০৭১ সালে বাইজেন্টাইনের পরাজয়ের পর, মধ্য এশিয়া এবং উত্তর ইরানের মধ্য থেকে তুর্কিদের যাত্রা শুরু হয় এবং আর্মেনিয়া ও আনাতোলিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

অটোমানদের সময় আর্মেনিয়া পদানত হয়। ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় খ্রিস্টানদের ওপর। পৃথিবীর নৃশংস গণহত্যার মধ্যে আর্মেনিয়ার গণহত্যা ছিলো ভয়ানক। সেসময় অটোমানরা অনেক মসজিদ নির্মাণ করেন আর্মেনিয়ায়।

এক পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকের মতে, উনিশ শতকের মাঝামাঝি ইয়ারেভানে আটটি মসজিদ ছিল; আব্বাস মির্জা মসজিদ (দুর্গের মধ্যে), মোহাম্মদ খান মসজিদ (দুর্গের মধ্যে), জালি খান মসজিদ, শাহ আব্বাস মসজিদ, নোভুজ আলী বেগ মসজিদ, সার্তপ খানের মসজিদ, নীল মসজিদ, হাজী ইমাম বরদি মসজিদ,হজ্বী জাফর বেগ মসজিদ (হাজী নাসরুলা বেগ)।

এর মধ্যে নীল মসজিদটিই অক্ষত রয়েছে। এটিও বহু বছর বন্ধ ছিলো। পরে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং আর্মেনিয়ার স্বাধীনতার পর মসজিদটি পুনরায় চালু হয়।

ব্লো তথা শিয়া মসজিদটি রাজধানী ইয়েরেভানের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। আর্মেনিয়ায় আসার পর থেকে চিন্তা করছিলাম মসজিদটি ঘুরে দেখবো। শেষ পর্যন্ত সময় পেয়ে দেখতে গেলাম। অসাধারণ নকশা। ইরানি স্থাপত্যের অনন্য দৃষ্টান্ত এটি।

রাতে মসজিদের ভেতরে গিয়ে দেখি বয়ান চলছে। একজন শিয়া আলেম বয়ান দিচ্ছেন। বয়ান শেষ হলে কথা বলি মসজিদের ইমাম আলি নায়েজ এর সঙ্গে। বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে খুশি হলেন। দেশের বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলেন। আমরা বললাম অনেক কথা। পরে মসজিদেই ডিনারের আমন্ত্রণ করলেন আমাদেরকে। প্রতি জুমার রাতে এই মসজিদে ডিনার আয়োজন করা হয়।

রাত হয়ে যাওয়ায় মসজিদের ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। ফলে সকালে উঠে আবারও গেলাম। ছবি তুললাম। মসজিদের সঙ্গে লাগোয়া ঘরগুলেতে সারা বছর চলে ইরানি ঐতিহ্যের ছবি প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে ব্লো মসজিদ নির্মাণ, পুনঃনির্মাণের ছবি সহ ইরানি নানা, আর্মেনিয়ায় একসময় মুসলিম বিজয়, সাফল্য সহ ইরানি বিভিন্ন সংস্কৃতির ছবি স্থান পেয়েছে।

একটি তথ্য দিয়ে লেখাটি শেষ করতে চাই। আর্মেনিয়া আসার জন্য ইরানিদের কোন ভিসার দরকার পড়ে না। একইসঙ্গে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র সহ ইউরোপের অনেকগুলো দেশ এই সুবিধা পেয়ে থাকে। আর বাংলাদেশিদের জন্য দেশটির ভিসা পাওয়া দূরহ ব্যাপার। সৌজন্যে : চ্যানেল আই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *