Skip to content

ইউ অরণ্যে

U-Tree

সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
বিশাল আর প্রাচীন কোনো গাছের সামনে দাঁড়ালেই তার বয়স নিয়ে কত ভাবতে শুরু করে দিই আমরা। ওটার বয়স কী এক শ, নাকি তারও বেশি? এমনটাই চিন্তাভাবনা ঘুরপাক খেতে থাকে আমাদের মাথায়। তবে এবার যে স্থানটির কথা বলব, সেখানে গেলে এমন একটি নয়; বরং কয়েক শ গাছ দেখতে পাবেন আপনি, যেগুলোর বয়স শ নয়, হাজার পেরিয়ে গেছে। কারো কারো ধারণা, এগুলোর বয়স দুই হাজার বছর।

ইংল্যান্ডের পশ্চিম সাসেক্সের চিচেস্টারের প্রায় তিন মাইল উত্তর-পশ্চিমের গ্রাম ওয়েস্ট স্টক। এর ধারেই স্টক ডাউন ও বো হিলের মাঝখানে আটকে পড়া কিংলে উপত্যকার প্রাকৃতিক সংরক্ষণভূমি। একটি বা দুটি নয়, এখানে এলে কয়েক শ বিশাল বিশাল গাছের দেখা পাবেন আপনি। বিশাল আকৃতির হয়েই থেমে যায়নি গাছগুলো। নিজেদের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দিয়েছে আকাশ ও মাটিতে। মাটির নিচে সাপের মতো এঁকেবেঁকে ঢুকে পড়েছে শিকড়বাকড়। আর সেখান থেকে জন্ম হয়েছে নতুন সব গাছের। ইউগাছ এগুলো। ১৯৫২ সালে প্রথম প্রাকৃতিক সংরক্ষণভূমি ঘোষণা করা হয় একে। মোট আয়তন ১৬০ হেক্টর। ঝড়ঝাপটায় ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। তবে এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয় সামলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ঘন ছায়ায় আবৃত করে রেখেছে পুরো স্থানটিকে।

কিংলে উপত্যকার ইউগাছগুলোর সঠিক বয়স কত, তা কারো জানা নেই। সাধারণত ৪০০ থেকে ৬০০ বছর বাঁচলেও ইউগাছ মাঝেমধ্যে আরো অনেক বেশি সময় ধরে বেঁচে থাকে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ইউগাছের ভেতরটা ফাঁপা হয়ে যায়। ফলে গাছের রিংগুলো গোনা কিংবা আর কোনোভাবে বয়স বের করাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, ইউগাছ ইচ্ছামতো নিজেদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই চারপাশের পরিবেশ প্রতিকূল দেখলে হুট করে বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয় এরা। এ সময় বন্ধ থাকে গাছগুলোর রিং তৈরি আর গুঁড়ির বৃদ্ধিও। সব কিছু অনুকূল হলে তবেই আবার বাড়তে থাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়।

অনেকে মনে করেন, ৮৫৯ সালে ভাইকিংস আর স্যাক্সনদের ভেতরে সংঘটিত যুদ্ধের স্মারক হিসেবে কিংলে উপত্যকায় লাগানো হয়েছিল একটি ইউ গাছ। কারো কারো আবার ধারণা, আরো অনেক আগেই লাগানো হয় এখানে ইউগাছ। তবে বয়স যতই হোক না কেন, কিংলে উপত্যকা আর এখানকার এই ইউ জঙ্গল সবার কাছেই আশ্চর্যজনক এক জায়গা।

কিংলে উপত্যকার এই ইউগাছের জঙ্গল এখনো টিকে থাকাটাও রীতিমতো বিস্ময়কর। কারণ ১৪ শতকের দিকে তীরন্দাজরা তীর বানাতে নির্বিচারে ইউগাছের কাঠ ব্যবহার করা শুরু করলে ইউরোপের বেশির ভাগ পুরনো ইউগাছই কাটা পড়ে যায়। তখন রাজকীয় নির্দেশানুসারে পর্তুগাল আর স্পেন থেকে ব্রিটেন ইউ কাঠ আমদানি শুরু করে। আর এতেই রক্ষা পায় কিংলে উপত্যকার ইউ অরণ্য। আশা করা যায়, সব বাধাবিপত্তি এড়িয়ে আরো অনেক বছর টিকে থাকবে এই সংরক্ষিত এলাকা। সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *