Skip to content

ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিদর্শন সমৃদ্ধ রাজশাহীর বাঘা

রয়েছে শাহী মসজিদ, সুবিশাল দীঘি, সমৃদ্ধ জাদুঘর আরো কত কি। লিখেছেন নুরুজ্জামান

রাজশাহীর বাঘা পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে স্বীকৃতি না পেলেও এবার ইতিহাস-ঐতিহ্যের নিদর্শন সমৃদ্ধ এই স্থানে নতুন করে যুক্ত হয়েছে প্রাচীন নিদর্শন সমৃদ্ধ জাদুঘর। আর সেই জাদুঘর উদ্বোধনের মঞ্চে ঘোষণা করা হয়েছে এখানে শিল্পকলা মঞ্চসহ একাডেমিক ভবন তৈরির। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এ ঘোষণা দিয়েছেন। বাঘায় এলেই দেখা মিলবে ঐতিহ্যবাহী শাহী মসজিদ, সুবিশাল দীঘির স্বচ্ছ পানি, আর সমৃদ্ধ প্র্রাচীন জাদুঘর ।

Baghaহযরত শাহদৌলাহ্র মাজার আর প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন সমৃদ্ধ দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান রাজশাহীর বাঘা। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো শাহী মসজিদ এখানকার সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান। ঐতিহ্যবাহী শাহী মসজিদ ঘিরে সুবিশাল দীঘি, প্রাচীন অন্দরমহল, পুকুরের ধ্বংসস্তূপ, হযরত আব্দুল হামিদ দানিশ মান্দ এবং হযরত মুয়াজ্জেম দানিশ মান্দসহ শাহেদৗলাহ্র মাজার ও উত্সব পার্ক ভ্রমণপ্রিয় এবং ধর্মানুরাগী মানুষের জন্য এক সেরা আকর্ষণীয় স্থান। এবার নতুন করে যুক্ত হলো জাদুঘর। এখন দর্শনীয় স্থান হিসেবে বাঘায় কেউ বেড়াতে আসলে একসঙ্গে দেখা মিলবে এসবের।

রাজশাহী শহর থেকে ৫০ কিলোমিটারের পথ বাঘা উপজেলা সদর। পদ্মানদীর কোল ঘেঁষে এ উপজেলার অবস্থান। এমনিতে দর্শনীয় স্থান হিসেবে খ্যাত তার সঙ্গে জাদুঘর নির্মাণ এ উপজেলাকে করেছে আরো সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ইতোমধ্যে জাদুঘরের ভিতরে কারুকার্যে খচিত বিভিন্ন উপকরণ যেমন-পোড়ামাটির তৈজসপত্র, মুঘল ও সুলতানি আমলের মুদ্রা, পনের-ষোল শতকের টাইলস, আলঙ্কারিক ইট, ব্রোঞ্জের পাত্র এবং দেশের ঐতিহ্যবাহী মসজিদের ছবি ও প্রকৃতির লীলাভূমির নিদর্শন সম্বলিত ছবি রয়েছে এখানে।

হাজার বছরের পুরাকীর্তি ও মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন দিয়ে সাজানো হয়েছে জাদুঘরটি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে এই জাদুঘরের নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে গড়ে তোলা হয়েছে জাদুঘরের অবকাঠামো। বাঘার ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ ও বিশাল দীঘিকে ঘিরে আগত দর্শনার্থীদের পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধিসহ অতীতের ঐতিহ্য আর সুন্দর পরিবেশের ছোঁয়া দেয়ার জন্য দীঘির পশ্চিম পাড়ে ও হযরত শাহ আব্দুল হামিদ দানিশ মান্দ (রহঃ)’র মাজারের ঠিক উত্তরে নির্মিত হয়েছে জাদুঘরটি।

উপজেলায় স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম আকর্ষণ শাহী মসজিদ। বাঘার এই বিখ্যাত শাহী মসজিদ এককালে এতদঞ্চলে ইসলাম প্রচারে নিবেদিত এক সাধকের প্রতি বাংলার সুলতানি আমলের অন্যতম সুযোগ্য শাসকের শ্রদ্ধার নিদর্শন, যা বর্তমানে দেশের ৫০ টাকার নোটে ও ১০ টাকার ডাক টিকিটে শোভা পাচ্ছে। পদ্মানদীর তীরে প্রায় ২৫৬ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত দর্শনীয় শাহী মসজিদ ও অন্য আউলিয়াদের সমাধি, মূল দরগাহ্ (মাজার) রয়েছে। সমতলভূমি থেকে প্রায় ১০ ফুট উঁচু বেদির উপরে এ মসজিদ তৈরি করা হয়েছে। এর দুই পাশে দুটি বিশাল গেট রয়েছে। মসজিদের গায়ে রয়েছে তত্কালীন টেরাকোটা তথা পোড়ামাটির কারুকাজের দেশজ নিদর্শন এবং পারস্য খোদাই শিল্পে ব্যবহূত হাজার রকম কারুকাজ। সমপ্রতি মোজাইক বিশিষ্ট এখানে আরো দুটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে নামাজ পড়েন মহিলারা।

এখন ঐতিহাসিক ও সুরম্য এইসব মসজিদ দর্শন করতে ও মাজার জিয়ারত করতে দূর দূরান্তের লোকজন আসেন প্রতিদিন। প্রতি শুক্রবার বসে মুসলিম মিলনমেলা। তারা শরিক হন শুক্রবারের জুমার জামায়াতে। প্রতি ঈদে এখানে লক্ষাধিক লোকের আগমন ঘটে এবং বিশাল জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়।

বাঘার অন্যতম আকর্ষণ স্বচ্ছ পানির সুবিশাল দীঘি। বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দীন হুসাইন শাহ্র ছেলে নাসিরউদ্দীন নুসরত শাহ্র মসজিদের সঙ্গেই জনকল্যাণের নিমিত্তে খনন করেন এ দীঘি। দীঘিটি ৫২ বিঘা জমির উপরে রয়েছে। প্রতি শীত মৌসুমে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে এ দীঘিতে আগমন ঘটে অসংখ্য পরিযায়ী পাখির।

১৯৯৪ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে দীঘিটি পুনঃখনন করানো হয়। নতুন করে বাঁধানো হয় পাড়। চারিধারে লাগানো হয়েছে সারি সারি নারকেল গাছ। ফলে বৃক্ষরাজি পরিবেষ্টিত দীঘি ও মসজিদের সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। সূত্র : ইত্তেফাক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *