Skip to content

ইনানিতে একদিন

Inani

মাকসুদা রহমান
কক্সবাজারের হোটেল সি প্যালেসের রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে উঠে বসলাম গাড়িতে। গন্তব্য ইনানি বিচ। দু-এক বছর পর পর কক্সবাজার আসা হলেও কেন যেন কখনোই ইনানি যাওয়া হয়নি। তাই এবারে ঢাকা থেকেই ঠিক করে এসেছিলাম, ইনানি বিচে যাবোই।

সাগরের পার দিয়ে চলে গেছে রাস্তা। চমৎকার। এ যেন সাগরকে সাথে নিয়ে পথচলা। দীর্ঘ ৩০০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ। পুরোটা পথে এক পাশে সাগর অন্য পাশে পাহাড়। অপূর্ব সে দৃশ্য যে কারোরই মন ভালো হয়ে যাবে। তবে পুরো রাস্তাটি এখনো তৈরি হয়নি। অনেক জায়গায় কাজ চলছে।

পথে হিমছড়িতে নামলাম। টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকলাম। দেখলাম অনেকটাই বদলে গেছে হিমছড়ি। শেষবার এসেছিলাম প্রায় আট বছর আগে। তবে যেটা খারাপ লাগল, সেটা হলো পুরা পরিবেশ অনেক নোংরা। ঝরনার পানিতে ভাসছে চিপস-চকোলেটের প্যাকেট, জুস, পানির খালি বোতল। আগেই ইনানি বিচের ‘লা-বেলা রিসোর্টে’ বুকিং দেয়া ছিল। তাই সরাসরি রিসোর্টেই উঠলাম। ছোট কিন্তু খুব সুন্দর রিসোর্ট। গাছপালা ছাওয়া ছোট ছোট কটেজ। তেমনিই একটি কটেজে উঠে মালপত্র রেখে বের হলাম বিচে যাওয়ার জন্য।

বিচে পৌঁছে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ইনানি বিচটি একেবারেই অন্য রকম। পুরো বিচে ছোট-বড় নানা আকারের অসংখ্য পাথর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কেউ পাথরে থেকে পাথর টপকাতে ব্যস্ত আবার কেউ বা তুলছে সেলফি। আমরাও বসলাম বড় পাথর দেখে। সমুদ্রে তখন জোয়ার শুরু হয়েছে। বাতাসের বেগও বাড়ছে। পানিতে পাথরগুলো আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে। একটু পরে সূর্যও ডুবে গেল। সন্ধ্যা নামতেই ফাঁকা হতে লাগল সৈকত। কারণ ইনানিতে সাধারণত কেউ থাকে না। সবাই কক্সবাজারেই ফিরে যায়। তাই আমরাও ফিরে চললাম।

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই চলে এলাম বিচে। কারণ আজকেই ফিরতে হবে ঢাকায়। এখন থেকে কক্সবাজার গিয়ে ঢাকার বাস ধরতে হবে। তাই হাতে সময় কম। কিন্তু বিচে এলে যে ফিরতে ইচ্ছা করে না। বাতাসের শব্দের সাথে সাগরের একটানা গর্জন আমাকে যেন অন্য জগতে নিয়ে যায়। একটু একটু করে বাড়ছে পানি। পানিতে পাডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। অদ্ভুত এক অনুভূতি। পাহাড়ে কিংবা অন্য যেখানেই যাই না কেন, বারবার তাই ফিরে আসা সাগরের কাছে। সবাই তাড়া দিচ্ছে আর সময় নেই। চলো। দেরি হয়ে যাবে। বাধ্য হয়ে ফিরে চলা। নাশতা সেরে সব কিছু গুটিয়ে এখনই উঠে বসতে হবে গাড়িতে। তারপর আবারো সেই ছকে বাঁধা জীবন আর নিরন্তন ছুটে চলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *