Skip to content

ইনানীতে পাঁচ তারকা সৌন্দর্য

সায়েদ জালাল উদ্দিন
প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটন রাজধানী খ্যাত বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতনগরী কক্সবাজার। মূল শহরের দক্ষিণে ২২ কিলোমিটার দূরে পাথুরে বীচ ইনানীতে স্থাপিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ পাঁচ তারকা মানের হোটেল ‘রয়েল টিউলিপ সী-পার্ল বীচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা।’

Sea-Pearl

গত ১৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার এটির উদ্বোধন হয়। এখানে রয়েছে পর্যটকদের নিরাপত্তায় আলাদা ব্যবস্থা। উদ্বোধনের পর থেকেই দেশ-বিদেশের প্রচুর পরিমাণ পর্যটক হোটেলে আসতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে ঈদুল আজহার ছুটিতে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিদেশের পর্যটকরাও পুরো ইনানী বীচকে মাতিয়ে তুলেছেন।

আকর্ষণ : ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা এই হোটেলে বসেই প্রকৃতির অপরূপ শোভা উপলব্ধির সঙ্গে সমুদ্রের গর্জনও অনুভব করবেন। সাগরের ঢেউয়ের গর্জন আর পাহাড়ের আলিঙ্গন দৃশ্য দেখে জীবনে জমাটবদ্ধ সব দুঃখ গ্লানি মুছে যাবে। হোটেলের অপরূপ কারুকার্য সত্যিই পর্যটকের মন কাড়ছে। ভ্রমণপিয়াসীরা হোটেলের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন।

এই হোটেলে মোট ৪৯৩টি কক্ষ রয়েছে। সেখানে উদ্বোধনের দিনই ৫০টি বুকিং ছিল। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি কক্ষ বুকিং হচ্ছে। এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ দেশীয় ও ২০ শতাংশ বিদেশি পর্যটক। পর্যটকদের জন্য কর্তৃপক্ষের নিজস্ব নিরাপত্তা টিম রয়েছে। প্রায় ১৫ একর জমির ওপর নির্মিত বিশ্বমানের হোটেলটির কারণে উখিয়ার ইনানী শফির বিল এলাকা আজ আলোকিত। বিশ্বের সঙ্গে মিলিয়ে এখানকার মানুষগুলোও নিজেদের নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। ইন্টারন্যাশনাল টাইম শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে দেশের সবচেয়ে বড় হোটেল এটি।

ফাইভস্টার হোটেল : হোটেল নির্মাণে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে জোগান দেওয়া হয়েছে। বাকিটা বহন করেছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আমিনুল নিজে।

যা রয়েছে এখানে : ইনানী বীচকে বিদেশি পর্যটকদের জন্য এঙ্ক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোনে পরিণত করার প্রচেষ্টার একটি এটি। হোটেলের প্রতিটি কক্ষে নূ্যনতম চারজনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি রাতের সর্বনিম্ন ভাড়া ৯ হাজার টাকা। আধুনিক পর্যটনকেন্দ্রের সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত হোটেলটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এখানে দুটো ‘প্রাইভেট বীচ’ আছে। একটি দেশি ও একটি বিদেশি পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত। রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র সানকিন বারসহ ইন্টারন্যাশনাল বার, লবি জুস বার ও ক্যাফে। হোটেলটিতে আছে ১০ হাজার বর্গফুটের ব্যাংকুয়েট হল- যেখানে দেশি-বিদেশি সম্মেলন ও অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে।

হোটেলটিতে রয়েছে আধুনিক ফিটনেস সেন্টার, দুটি সুইমিংপুল, এমপিথিয়েটার, থ্রিডি গলফ এবং উন্নত ভিডিও গেমসসহ নানা ধরনের ইনডোর ও আউটডোর বিনোদনের ব্যবস্থা, ডেসটিনেশন স্পা, সেখানে থাকবে ট্র্যাডিশনাল থাই স্পা এবং নানা প্রকারের অ্যারোমা থেরাপি।

তা ছাড়া আইসক্রিম পার্লারসহ কন্টিনেন্টাল, প্যান এশিয়ান, ইতালিয়ান, বাংলা সী ফুড, ৮টি ভিন্ন স্বাদের রেস্টুরেন্ট। বাংলাদেশের একমাত্র সানকিন বারসহ ইন্টারন্যাশনাল বার এবং লবি জুস বার ও ক্যাফে।

এখানে নির্মাণাধীন রয়েছে কক্সবাজারের সর্বপ্রথম এবং বাংলাদেশের সর্বাধুনিক ওয়াটার পার্ক। এগুলোর সঙ্গে রয়েছে প্যারাসিলিং, ডিপ সী ফিশিং, হিল ট্র্যাকিং ইত্যাদি সার্ভিস।

কক্সবাজার মূল শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের ইনানী বীচে অবস্থিত এই পাঁচ তারকা হোটেলটির সদস্য যারা হবেন, তারা বিশ্বের দুই হাজার ৫০০-এর বেশি পাঁচ তারকা হোটেলে সাত রাত ফ্রি থাকতে পারবেন। সদস্যরা ‘এঙ্চেঞ্জ ফি’ বিনিময়ের মাধ্যমে এ সেবা উপভোগ করবেন। সী-পার্লের সদস্য হতে ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা লাগবে।

কক্সবাজারে ছোটবড় প্রায় ৪৫০টি আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। যেখানে প্রায় ২৭ হাজার কক্ষ রয়েছে। এরপরও পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের আবাসন সংকট তৈরি হয়। সারা বছরে কয়েক লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে আসেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অনুষ্ঠানসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান এখানে হয়ে থাকে।

আধুনিক আয়োজন : এখানে আধুনিক পর্যটন ব্যবস্থার সব আয়োজন রয়েছে। বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খাবারে। আটটি রেস্তোরাঁ আছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব স্পাতে। কয়েক ধরনের স্পার ব্যবস্থা রয়েছে। ব্যবসায়িক ভ্রমণ স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে ১০ হাজার স্কয়ার ফিটের ব্যানকোয়েট হল। যেখানে দেশি ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষভাবে ডেসটিনেশন ওয়েডিং-এর সুব্যবস্থা আছে হোটেলটিতে। এই হোটেলটি স্প্যানিশ আর্কিটেকচারের ডিজাইন করা।

যার ফলে সমুদ্র ও পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সেই সঙ্গে কক্সবাজারে এটিই সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা চেইনের হোটেল। এটি বিশ্ববিখ্যাত লোভার গ্রুপ অব হোটেলস-এর গোল্ডেন টিউলিপ ব্র্যান্ডের প্রিমিয়ার ব্র্যান্ড রয়েল টিউলিপ-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী গোল্ডেন টিউলিপ প্রায় ৪০টি দেশের এক হাজারেরও বেশি হোটেল সম্মানের সঙ্গে পরিচালনা করে আসছে।

হোটেলটি আন্তর্জাতিক ‘লোভার গ্রুপ অব হোটেলসের’ গোল্ডেন টিউলিপ হসপিটালিটি ব্র্যান্ডের প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড রয়েল টিউলিপের সঙ্গে যুক্ত। গোল্ডেন টিউলিপ বিশ্বের ৪০টি দেশে এক হাজারের বেশি হোটেল পরিচালনা করছে। সৌজন্যে : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *