Skip to content

ইবন বতুতার দেখা বাংলাদেশ

Ibn-Batutaইবন বতুতা। পুরো নাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবন বতুতা। একজন বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি একজন চিন্তাবিদ, বিচারক এবং ধর্মতাত্ত্বিকও বটে। ১৩০৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী মরোক্কোর তাঞ্জিয়ারে জন্মগ্রহন করেন তিনি।

ইবন বতুতা সারা জীবন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেরিয়েছেন। পৃথিবী ভ্রমণের জন্যই তিনি মূলত বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি ২১ বছর থেকে শুরু করে জীবনের পরবর্তী ৩০ বছরে প্রায় সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন।

বর্তমান পশ্চিম আফ্রিকা থেকে শুরু করে মিশর, সৌদি আরব, সিরিয়া, ইরান, ইরাক, কাজাকিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীন ভ্রমণ করেছিলেন।

উপরোল্লিখিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সফর ছিল তার ভ্রমণজীবনের অন্যতম একটি অধ্যায়। ভারতীয় উপমহাদেশ ও বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে তিনি একটি ভ্রমণকাহিনী রচনা করেন। ইতিহাসে যা ‘রিহালা-ই-ইবন বতুতা’ নামে পরিচিত।

মরক্কোর এ পর্যটক ১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় সফর করেন। তিনি তার ভ্রমণ কাহিনীতে বাংলায় সফর সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, টানা তেতাল্লিশ রাত সাগরে কাটিয়ে অবশেষে আমরা বাংলাদেশ পৌছালাম। সবুজে ঘেরা বিশাল এক দেশ, প্রচুর চাল পাওয়া যায়। অন্য সব জিনিষও এত সস্তায় পাওয়া যায় সে দেশে যে এরকম আর কোথাও দেখি নি।

বাংলার যে শহরে ইবনে বতুতা প্রথম পৌঁছেন (৯ জুলাই ১৩৪৬) তার নাম তিনি উল্লেখ করেছেন সাদকাঁও (চাটগাঁও)। সেখান থেকে সরাসরি তিনি কামারু (কামরূপ) পার্বত্য অঞ্চল অভিমুখে রওনা হন। সাদকাঁও থেকে কামারু তাঁর বর্ণনায় এক মাসের পথ।

এরপর সেখানে তিনি সুফিসাধক শেখ জালালউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর খানকায় সাক্ষাৎ করেন।হযরত শাহজালালের (রঃ) সাথে সাক্ষাৎ করে ফেরার পথে ইবন বতুতা একটি ছাগলের পশমের কোট উপহার পান।

Ibn-Batuta2

ইবন বতুতার বর্ননা মতে শেখ জালাল উদ-দিন একটি পাহাড়ের গুহায় বসবাস করতেন যেখানে তারা ছাগল পূষতেন দুধ এবং মাখনের জন্য। তার সহযোগীরা প্রত্যেকেই সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন এবং কেউই এদেশীয় ছিলেন না।

দরবেশের খানকায় তিন দিন অবস্থানের পর তিনি আন-নহর উল-আয্রাক (নীল নদী অর্থে) নদীর তীরবর্তী হবঙ্ক শহর অভিমুখে রওনা হন। এ নদীপথে ১৫ দিন নৌকায় ভ্রমণের পর তিনি সুনুরকাঁও (সোনারগাঁ) শহরে পৌঁছেন (১৪ আগস্ট ১৩৪৬)। সোনারগাঁ থেকে একটি চীনা জাহাজে করে তিনি জাভার উদ্দেশে রওনা হন।

যখন ইবন বতুতা বর্তমান বাংলাদেশে এসে পৌছান তখন এখানকার সুলতান ছিলেন ফখর-উদ-দিন। তৎকালীন মুসলিম শাসনামলে মানুষের আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত স্বচ্ছল। দেশে খাদ্যশস্যের প্রাচুর্য এবং দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্যের সস্তা দর উল্লেখ করে তিনি বলেছেন যে, পণ্যের এমন প্রাচুর্য ও সস্তা দর তিনি পৃথিবীর আর কোথাও দেখেন নি।

তার বর্ননায় পাওয়া যায় মাত্র এক দিরহাম দিয়ে তখন বাংলাদেশ আটটি স্বাস্থবান মুরগী পাওয়া যেত, এছাড়াও এক দিরহামে পনেরোটা কবুতর, দুই দিরহামে একটি ভেড়া এবং এক স্বর্নমূদ্রারও কম মূল্যে দাসদাসী কিনতে পাওয়া যেত। ইবনে বতুতা তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে বাংলার জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দৃশ্যেরও বর্ণনা দিয়েছেন। সূত্র : সকালের খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *