Skip to content

ইরাবতী নদীর শুশুক

Dolphin

মেকং নদীর ডলফিনদের দিন কি শেষ হতে চলেছে? কাম্বোডিয়ায় তারা সুরক্ষিত – অন্তত কিছুটা৷ কিন্তু লাওস যদি তার বাঁধ প্রকল্প সত্যিই বাস্তবায়িত করে – যার লক্ষণ স্পষ্ট – তাহলে মেকং নদীর মাছেদেরই বা কী হবে?

চলেছি মেকং নদীর শেষ ডলফিন, মানে শুশুকদের খোঁজে। কাম্বোডিয়ার এই অঞ্চলে মেকং আজও একটি দুর্দান্ত, খরস্রোতা নদী। ৮০টি শুশুকের একটি দল নাকি আজও এখানে বেঁচে রয়েছে। নৌকাচালকের নজর ঠিক থাকা চাই, কেননা বর্ষা গেলে নদীর অনেক জায়গায় জল কমে যায়। কিম্ভুতভাবে ব্যাঁকানো সব গাছের শিকড় দেখলে বোঝা যায়, বর্ষায় নদীর স্রোত কী মারাত্মক আকার ধারণ করে।

ক্রাটি-তে আমরা নৌকা বদলালাম। কাম্বোডিয়া সরকার নদীর এই অংশটিকে বছর কয়েক আগে একটি শুশুক সংরক্ষণ এলাকা বলে ঘোষণা করেছেন। জেলেদের মাছ ধরা ছেড়ে পরিবেশ-বান্ধব পর্যটনের দিকে মনোযোগ দিতে হয়েছে। ডলফিন সুরক্ষা এলাকার গাইড ডিব গয় জানালেন, ‘মাছ ধরার বদলে আমি আজকাল টুরিস্টদের ডলফিন দেখাতে নিয়ে যাই। আমি আগে জেলে হিসেবে যা রোজগার করতাম, আজ তার চাইতে কম রোজগার করি না। তবুও আমার আশা, আরো অনেক পর্যটক আসবেন। তা আমাদের পক্ষে ভালো হবে: একগাদা নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে।’

মেকং – মানে ইরাবতী নদীর শুশুক! তাদের চ্যাপটা মাথা দেখলে শুশুকের বদলে তিমি মাছের কথাই মনে হয়। জল থেকে লাফ দিয়ে বেরনো, লাফঝাঁপ করা, এ সব মেকং শুশুকদের কাজ নয়। কাজেই ‘ফ্লিপার’ ছবির ফ্যানরা হতাশ হবেন। মেকং শুশুকরা ছোট ছোট কাঁকড়া ইত্যাদি খেয়ে বেঁচে থাকে, তবে মাছেও তাদের আপত্তি নেই। মেকং শুশুকরা নিয়মিতভাবে জলের ওপর মাথা তোলে নিঃশ্বাস নেবার জন্য।

দুই দেশের সীমান্তে
আরো খানিকটা গেলে কাম্বোডিয়া আর লাওসের সীমান্তে শুশুকদের জন্য আরেকটি সংরক্ষিত এলাকা আছে। এখানে নাকি এখনও চারটি মেকং শুশুক থাকে। যে কারণে রক্ষীরা নিয়মিত টহল দেয়। ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফান্ড ফর নেচার যোগায় বোটের তেল, আর সেই সঙ্গে একটি জিপিএস নেভিগেটর। রক্ষীদের পাঠানো হয়েছে কাছাকাছি গ্রাম ও জেলেদের কমিউন থেকে। রক্ষীদের কাজ হলো, বিশেষ করে কিছু কিছু জেলের বেআইনি মাছ ধরার ওপর নজর রাখা।

নদীরক্ষীদের প্রধান নরং ডেট জানালেন, ‘আমরা এখন সীমান্তে। এই বোতলগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, এখানে কানকো-জাল লাগানো হয়েছে: সরাসরি ঝোলানো জাল যাতে মাছেরা তাদের কানকোয় আটকে যায়। এগুলো লাওসের তরফে থাকায় আমরা এগুলো বাজেয়াপ্ত করতে পারছি না। এই জালগুলো শুশুকদের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক৷ জালে আটকা পড়ে তারা অসম্ভব কষ্ট পেয়ে দম আটকে মরে। কোনো কোনো জেলে আবার ইলেকট্রিক শক আর বিস্ফোরকও ব্যবহার করে – শুশুকদের পক্ষে যা মারাত্মক।’র্

বাঁধ তৈরির স্বপ্ন – নাকি দুঃস্বপ্ন?
শুশুকদের আরো একটা বিপদ ঘনাচ্ছে, অনেক বড় বিপদ। মেকং-এর বিপুল স্রোত দেখে সেই স্রোতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সাধ জেগেছে কাম্বোডিয়ার প্রতিবেশী লাওস রাজ্যের। দরিদ্র লাওসের স্বপ্ন হলো গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। সেজন্য মালয়েশিয়ার সাহায্য নিয়ে সীমান্তের অদূরে ডন সাহং বাঁধ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে লাওস। বাঁধ তৈরির সাইটে ছবি তোলার অনুমতি নেই – তবে কাম্বোডিয়ার দিকে অবকাঠামোগত নির্মাণকার্য দেখে আন্দাজ করা যায়, আর্থমুভাররা সাইটে নামলে অবস্থা কী দাঁড়াবে।

ও’স্ভে কমিউনের প্রধান সুন রাট জানালেন, ‘আমি তিন হাজার ২০০ মানুষের বেশি সদস্য সম্বলিত ৬০০টি পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করি। আমি খুব চিন্তায় আছি: লাওস যদি সত্যিই বাঁধ তৈরি করে, তাহলে আমাদের জল আরো খারাপ হবে, বিশেষ করে নানা জৈবিক পদার্থ পচার ফলে৷ শুশুকরা উধাও হবে, মাছেরা উধাও হবে। গরমকালে নদীর জল কমে যাবে; বর্ষাকালে জলের চাপ কমানোর জন্য যখন বাঁধ থেকে জল ছাড়বে, তখন নদীপাড়ের মানুষ আর জীবজন্তুদের প্রাণসংশয় হবে।’

পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা প্রতিবাদ প্রদর্শন করেছেন। এলাকার গাঁয়ের মোড়লরা জমায়েত হয়েছেন। প্রায় ২০০ মানুষের প্রতিবাদ মিছিল, তবে নৌকায় চড়ে৷ যদিও প্রতিবাদ দেখিয়ে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি – লাওস তার বাঁধ প্রকল্প ছাড়ছে না। শুধু শুশুকরাই যে বিপন্ন হবে, এমন নয়; বিপন্ন হবে মাছেরাও। কাম্বোডিয়ার মানুষদের একটা প্রধান খাদ্য হলো মাছ। মেকং নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নদীর স্রোত ধরে বহুদূর অবধি যায়-আসে। বাঁধ তৈরি হলে তা সম্ভব হবে না।

শুশুক ছাড়া মেকং যেন আরো কিছুটা শ্রীহীন হয়ে পড়বে – পরিবেশের কথা না হয় বাদই দেওয়া গেল। সৌজন্যে : ডয়চে ভেলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *