Skip to content

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন

abo_01এম মাঈন উদ্দিন
দীর্ঘ সময় ধরে বন্দী মন খানিকটা ছুটি পেয়ে ছটফট করছে একটু আলো-বাতাসের ছোঁয়া পেতে। কত দিন বেড়ানো হয় না। ঈদের ছুটি সেই সুযোগটা করে দেয় অনেককে। আর ঘরে বসে থাকা যায় না। তাই এ ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের মিরসরাই। এখানে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া সেচ প্রকল্প, দেশের ষষ্ঠ সেচ ও প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প মুহুরী প্রজেক্ট, আট স্তরবিশিষ্ট জলপ্রভাত খৈয়াছড়া ঝরনা ও বাওয়াছড়া প্রকল্পে।
ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির অতি কাছাকাছি যে যেতেই হবে। অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত প্রকৃতির সাথে সখ্য, এমন চারটি পর্যটন স্থান নিয়ে প্রস্তুত মিরসরাই। এবার ঈদে তাই এখানকার মুখরিত জনপদ হয়ে উঠবে আরো মুখর। প্রাণের টানে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়া প্রকৃতিপ্রেমীদের আমন্ত্রণ মহামায়া, খৈয়াছড়া, বাওয়াছড়া ও মুহুরীর পক্ষ থেকে।

মহামায়ার প্রকৃতিতে রঙের ছড়াছড়ি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলার ঠাকুর দীঘি বাজারের এক কিলোমিটার পূর্বে। ছায়াঘেরা সড়ক। দেশের যেকোনো স্থান থেকে এসে লেকে যেতে রাস্তায় প্রস্তুত আছে সিএনজি অটোরিকশা।

কিছু দূর পর দেখা মিলবে রেলপথ। রেললাইন পেরোলেই কাছে টানবে মহামায়া। প্রাণের টানে ছুটে আসা পথ যেন ক্রমেই বন্ধুর হতে চাইবে মনের কোণে জাগা মৃদু উত্তেজনায়। দূর থেকে দেখা যায় প্রায় পাহাড়সম বাঁধ। উভয় পাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। বাঁধে উঠতেই…! আহ, কী অপরূপ শোভা। বাঁধের ধারে অপেক্ষমাণ সারি সারি ডিঙি নৌকা আর ইঞ্জিনচালিত বোট। ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের লেক কেবল শোভা ছড়ায়। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে স্বচ্ছ পানিতে তাকাতেই দেখা যায় নীল আকাশ।
পূর্ব-দিগন্তের সারি পাহাড়ের বুক চিরে যেতে যেতে একসময় হারিয়ে যেতেও মন চাইবে কল্পনায়। সঙ্গের সাথী পাশে নিয়ে গেলে তো কথাই নেই। পরিবার-পরিজন নিয়ে গেলেও কোনো বারণ নেই। কিছু দূরেই দেখা যাবে পাহাড়ের কান্না। অঝোরে কাঁদছে। অথচ তার কান্না দেখে নিজের কাঁদতে ইচ্ছে হবে না। উপরন্তু কান্নার জলে গা ভাসাতে মন চাইবে। তারও পূর্বে যেখানে লেকের শেষ প্রান্ত, সেখানেও বইছে ঝরনাধারা।

মাঝপথে থেমে গিয়ে পাহাড়চূড়ায় উঠে নিজেকে গর্ববোধ করতেও পারেন। কেননা সেখান থেকে দেখা মিলবে দূরের পথ। এক কিলোমিটার দূরের মহাসড়ক, তার অর্ধেকের রেলপথ, ট্রেনের ছুটে চলা, কৃষাণীর ধান মাড়ানো, কৃষকের ফলন, কিশোরের দুরন্তপনা সবই দেখা মিলবে চূড়া থেকে। তবে সাবধান! বৃষ্টিভেজা পাহাড়ের মাটি পিছলে ছিটকে পড়লে সত্যিকারের চোখের জলে ভাসতে হবে।

কী নীল, কী সবুজ, সব রঙের ছড়াছড়ি যেন ঢেলে দেয়া হয়েছে মহামায়ার প্রকৃতিতে। এর সাথে মিশতে গিয়ে মন এতটাই বদলে যাবে, যেন বারবার ঘুরে আসতে চাইবে ফেলে আসা স্মৃতিতে।

নান্দনিক সৌন্দর্যের আরেক নাম খৈয়াছড়া ঝরনা
প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন দেশের ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। অনেকে রাতে চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করছেন।

প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করে, সবুজের চাদরে ঢাকা বনানী রূপের আগুন ঝরায়, যেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে, ঝুমঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝরনাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলছে খৈয়াছড়া ঝরনায়।

গ্রামের সবুজ শ্যামল আঁকাবাঁকা মেঠোপথ পেরিয়ে শরীরটা একটু হলেও ভিজিয়ে নেয়া যায় নিঃসন্দেহে। আট স্তরের ঝরনা দেখতে দেশী-বিদেশী পর্যটকের ভিড় পড়েছে। দেশের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক ঝরনাটি দেখতে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন হাজার হাজার দেশী-বিদেশী পর্যটক। উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে ঝরনার অবস্থান। এর মধ্যে ১ কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হবে হেঁটে। বাঁশের সাঁকো, ক্ষেতের আইল, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, ছরা, অন্তত চারটি পাহাড় পেরিয়ে যখন ঝরনার স্বচ্ছ জলে গা ভেজাবেন পর্যটক তখন মনে হবে পথের এই দূরত্ব খুব সামান্য। ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারে প্রতিদিন ভিড় করছেন পর্যটকেরা।

ছুটির দিনগুলোতে তারা সবুজের সমারোহ পাহাড় ও ঝরনা দেখতে সেখানে প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করে। পাহাড়ের সবুজ রঙ আর ঝরনার স্বচ্ছ জল মিলেমিশে একাকার হয়েছে মিরসরাইয়ের প্রাকৃতিক জলপ্রপাত খৈয়াছড়া ঝরনায়।

প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা এ ছবি দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন দেশের ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। যারা একবার খৈয়াছড়া ঝরনা দেখেছেন তাদের মনে একটিই প্রশ্ন উঁকি দেয় বারবারÑ ‘দেশে এমন সৌন্দর্যের ঝরনা দ্বিতীয়টি আর আছে কি না।’ এমনই এক নান্দনিক ঝরনা পর্যটকদের আকর্ষণ করছে, যা খৈয়াছড়া ঝরনা নামেই পরিচিত।

খৈয়াছড়া এলাকার পাহাড়ে অবস্থান বলে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছড়া ঝরনা। খৈয়াছড়া এলাকার বাসিন্দা ডা: আলমগীর বলেন, ভূঁইয়ার টিলায় প্রায় ৫০ বছর ধরে প্রবাহিত হচ্ছে ঝরনাটি।

পাহাড়ি ঝোপের কারণে মানুষ তখন খুব একটা ওই জায়গায় যেত না। চার-পাঁচ বছর ধরে সেখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। কয়েক মাস ধরে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি।

খৈয়াছড়া ঝরনাকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে কিছু স্কুলশিক্ষার্থী ও এলাকার বেকার যুবকেরা গাইড হিসেবে কাজ করছেন। পর্যটকদের ঝরনায় নিয়ে যাওয়া-আসায় সহায়তা করছেন তারা। এ জন্য পর্যটকভেদে প্রতিবার ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তাদের। স্থানীয় খৈয়াছড়া উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হোসেন বলেন, স্থানীয় প্রায় ২০ জন ছেলে গাইড হিসেবে কাজ করছে। এদের ১০ জন স্কুলশিক্ষার্থী। প্রতি শুক্রবার পর্যটকের ভিড় বেশি থাকে। তাই তারা গাইড হিসেবে কাজ করে। দিনে দু’বার পর্যটকদের নিয়ে গেলে তাদের আয় হয় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। স্কুলশিক্ষার্থী তারেক, সোহেল ও হাসান জানায়, দেশের পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশীরা ঝরনা দেখতে আসছেন। দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানায় তারা।

মুহুরীর চরে জল আর রোদের খেলা
প্রকৃতির আরেক নাম মুহুরী। যেখানে আছে আলো-আঁধারির খেলা। আছে জীবন-জীবিকার বিভিন্ন চিত্র। মুহুরীর চর, যেন মিরসরাইয়ের ভেতর আরেক মিরসরাই। অন্তহীন চরে ছোট ছোট প্রকল্প।

এপারে মিরসরাই, ওপারে সোনাগাজী। ৪০ দরজার রেগুলেটরের শোঁ শোঁ আওয়াজ শোনা যায় দূর থেকে। পশ্চিমে মৎস্য আহরণের খেলা, আর পূর্বে মন কাড়ানিয়া প্রকৃতি। নুয়ে পড়া মনোবল জেগে উঠবে পূর্বের জেগে ওঠা চরে। ডিঙি নৌকায় ভর করে কিছু দূর যেতেই দেখা মিলবে সাদা সাদা বক। এখানে ভিড় করে সুদূরের বিদেশী পাখি, অতিথি পাখি বলেই অত্যধিক পরিচিত এরা। চিকচিকে বালুতে জল আর রোদের খেলা চলে সারাক্ষণ। সামনে-পেছনে, ডানে-বামে কেবল সৌন্দর্য আর সুন্দরের ছড়াছড়ি। এ অবস্থায় মন আঁধারে ঢেকে যেতে পারে, যদি ক্যামেরা সাথে না থাকে। মুহুরীর প্রকৃতির ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত স্মৃতিগুলো যেন হারিয়ে
যাওয়ার নয়। এসব ক্যামেরার ফিল্মে আটকে রাখার মতো হাজার বছর ধরে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (পুরনো) জোরারগঞ্জ বাজারে নেমে ধরতে হবে সংযোগ সড়কের পথ। জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক নামে এ সড়কে দেখা মিলবে হরেক রকম মোটরযানের। ভাঙাচোরা আঁকাবাঁকা আধাপাকা সড়ক পাড়ি দিতে হবে প্রায় আট কিলোমিটার। এরপর মুহুরী প্রকল্পের বাঁধ। যেতে যেতে দুই কিলোমিটার পরই দেখা মিলবে আসল সৌন্দর্য।

বাওয়াছড়ার অপরূপ দৃশ্য পর্যটকদের নজর কাড়ে
উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর বাওয়াছড়া পাহাড়িয়া এলাকায় যুগ যুগ ধরে ঝরনা প্রবাহিত হচ্ছে। সবুজ শ্যামল পাহাড়িয়া লেকে পাখিদের কলতানে আবালবৃদ্ধবনিতার প্রাণ জুড়িয়ে যাবে।  প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ স্থানে ছুটে আসেন শত শত পর্যটক। এবার আরো পর্যটক বাড়তে পারে বলে জানান বাওয়াছড়া প্রকল্পের উদ্যোক্তা চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন সেলিম।

লোকেশন : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় কমলদহ বাজার থেকে থেকে ২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে এটি অবস্থিত।
পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তার বিষয়ে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, আসন্ন ঈদে মিরসরাইয়ের পর্যটন স্পট ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। সূত্র : নয়া দিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *