কেমন কাটবে আপনার প্রিয় ক্রিকেট তারকার এবারের ঈদ? জানাচ্ছেন তৌহিদা শিরোপা ও রানা আব্বাস।
মাশরাফি বিন মুর্তজা : প্রাণের বন্ধুর আড্ডায়
ঈদ ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রশ্ন, ‘১৫ বছর ধরে একই কথা বলছি, নতুন করে কী বলার আছে?’ এরপর তাঁর রসিকতা, ‘আগেরগুলো দেখে লিখে দিন!’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায় ১৫ বছর কাটিয়ে দিলেন মাশরাফি। প্রায় প্রতিবছরই ঈদ নিয়ে তাঁকে কিছু না কিছু বলতে হয়েছে। আসলেই নতুন করে বলার কী আছে! এবারও ঈদ নিয়ে তাঁর ভাবনায় খুব একটা পরিবর্তন নেই। যেহেতু খেলার ব্যস্ততা নেই, দুই দিন আগে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে যাবেন নড়াইলের বাড়িতে।
ঈদের সকালে মামা নাহিদুর রহমান, ছোট ভাই মুরসালিন বিন মুর্তজার সঙ্গে যাবেন নামাজ পড়তে। বাবা গোলাম মুর্তজা অবশ্য ঈদের নামাজ পড়েন তাঁদের গ্রামের বাড়ি চারখাদায়। মাশরাফি জানালেন, দাদা-দাদির কবর আছে, এ কারণে বাবা নামাজ পড়েন সেখানে।
সাধারণত বিকেল পর্যন্ত পরিবারকে সময় দেবেন মাশরাফি। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে বের হবেন কি না নিশ্চিত নন। তাঁর ঈদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে আড্ডা! বাসার সামনে বন্ধুদের সঙ্গে চলবে ধুমসে আড্ডাবাজি। নড়াইলে ঈদ করলে মাশরাফির আড্ডাসঙ্গী হন সাধারণত রাজু, ওয়াসিম, সাজু, সুমন, কমল, মানস—এ মানুষেরাই তাঁর প্রাণের বন্ধু।
প্রথাগত কেনাকাটায় আগ্রহ নেই মাশরাফির। রচনাটা যখন লেখা হচ্ছে তখনো পরিবারের জন্য কিছুই কেনেননি। কেনাকাটার সে রকম পরিকল্পনা নেই বলেও জানালেন। তাঁর ঈদ পোশাকেও নেই জাঁকজমক কিছু। নামাজের পর পাঞ্জাবি আর লুঙিতেই হয়তো কাটিয়ে দেবেন দিনটা।
মাশরাফির কাছে এখনকার ঈদ কীভাবে ধরা দেয়? সময়ের সঙ্গে বদলেছে তাঁর আনন্দের রং, ‘একটা সময় খুব হইচই করতাম। এখন সন্তানেরা করে, আমরা দেখি।’
মাহমুদউল্লাহ : বাড়ি ফেরার আনন্দ
ঈদ এলেই ময়মনসিংহ শহরের বাড়িটা যেন ফিরে পায় পুরোনো পরিবেশ। সারা বছর কর্মব্যস্ত ছেলেরা ফেরেন বাড়িতে। আরাফাত বেগম ও মো. উবায়েদউল্লাহর চোখে-মুখে খেলে যায় খুশির ঢেউ। তাঁদের বড় ছেলে আহসানউল্লাহ, মেজ ছেলে এমদাদউল্লাহ তো আছেনই; বাড়ির আনন্দ যেন দ্বিগুণ করে দেন ছোট ছেলে মাহমুদউল্লাহ!
প্রায় সারা বছরই মাহমুদউল্লাহকে ব্যস্ত থাকতে হয় খেলা নিয়ে। ভাইয়েরাও ব্যস্ত থাকেন যাঁর যাঁর পেশা নিয়ে। ঈদের সময়টাতে যা একটু ফুরসত মেলে সবার। মাহমুদউল্লাহ জানালেন, এ সময় তাঁদের বাড়ির চেহারাটাই যায় বদলে, ‘ঈদে বাড়ির পরিবেশ অন্য রকম হয়ে যায়। আগের আমেজটা ফিরে আসে।’
ঈদের দিনের রুটিনটা অবশ্য মাহমুদউল্লাহর সব সময়ই এক। মা ঘুম থেকে ওঠাবেন। বাবা-ভাইদের সঙ্গে নামাজ পড়তে যাবেন। এরপর খাওয়া-দাওয়া, খানিকটা বিশ্রাম। বিকেলে হয়তো স্ত্রী জান্নাতুল কাউসার ও ছেলে রায়ীদকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবেন।
তবে মাহমুদউল্লাহ চাইলেও পারেন না ইচ্ছেমতো ঘুরতে। যেখানেই যান মুহূর্তে জমে যায় মানুষের ভিড়। এ কারণে অনেক সময় অস্বস্তিতে পড়তে হয় তাঁর পরিবারকে, ‘আগের মতো ঘুরতে পারি না। তবে আমার চেয়ে বেশি অস্বস্তিতে পড়ে পরিবারের সদস্যরা।’
গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টেস্ট সিরিজের কারণে চট্টগ্রামে ঈদ করতে হয়েছিল মাহমুদউল্লাহকে। তবে বাংলাদেশ দলের এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে কখনো বিদেশে ঈদ করতে হয়নি। এবার অবশ্য নেই ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যস্ততা। অসাধারণ ঈদই হবে মাহমুদউল্লাহর। ঈদটা আরও রঙিন করতে বিশেষ পরিকল্পনা আছে তাঁর, ‘এবার ঈদ একটু স্পেশাল হবে। ঈদের পরপরই স্ত্রী-বাচ্চাকে নিয়ে যাব দেশের বাইরে ঘুরতে।’
তামিম ইকবাল : রোমাঞ্চকর ঈদ
আরহামের কারণে এবারের ঈদ খুব স্পেশাল তামিম ইকবালের কাছে। আরহাম ইকবাল তামিমের চার মাস বয়সী ছেলে। এ বছর দুজন থেকে তিনজন হয়েছেন তাঁরা। তাই নতুন বাবা তামিম খুব রোমাঞ্চিত। যদিও এখনো ঠিক করতে পারেননি এবারের ঈদ কোথায় করবেন। ‘চট্টগ্রামে সবাই মিলে ঈদ করা আমাদের পরিবারের বহু বছরের ঐতিহ্য। কিন্তু এবার ঈদে পরিবারের অনেক সদস্য দেশের বাইরে ঈদ করছেন। সবাই যখন থাকছেন না, তাই আমারও একটা পরিকল্পনা আছে দেশের বাইরে ঈদ করার। ব্যাংকক বা দুবাই—কোথায় করব, সিদ্ধান্ত নিইনি। আবার এমনও হতে পারে, চট্টগ্রামেই ঈদ করলাম।’ বলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা খেলোয়াড় তামিম ইকবাল।
ঈদের সময় তামিম তাঁর বাবাকে খুব মিস করেন। ছোটবেলার ঈদগুলোতে বাবার সঙ্গে কত আনন্দ করতেন। বাবার আদর্শ, মূল্যবোধ—এগুলো তামিম সব সময় মনে রাখেন। তিনি চান, আরহামের মনেও যেন বাবা তামিমের প্রতি সেই শ্রদ্ধা, ভালোবাসা থাকে। ছেলের সঙ্গের কাটানো প্রতিটি মুহূর্তই বিশেষ তামিমের কাছে। একটা মজার গল্প বললেন এই বাবা। তামিম একনাগাড়ে বেশিক্ষণ খেলতে পারেন না আরহামের সঙ্গে। এঘর-ওঘর ঘুরে ওর সঙ্গে খুনসুটি করেন। সেই সময় আরহাম খিলখিল করে হাসে। এতে রেগে যান আয়েশা। গাল ফুলিয়ে বলেন, সারাক্ষণ কোলে নিয়ে থাকা, রাত জাগা—সব আমিই করি। আর বাবাকে দেখলেই খুশি। এই হাসি তো মায়ের সঙ্গে দেয় না।’ এতে খুব মজা পান তামিম।
আয়েশা সিদ্দিকা ও আরহামের সঙ্গে খুব একটা সময় কাটাতে পারেন না ব্যস্ত ক্রিকেটার তামিম। ঈদের ছুটি তাই পুরোপুরি তাদের জন্য। তামিমের কাছ থেকে জানা গেল, কেনাকাটার দায়িত্ব মা আয়েশার। নতুন মায়ের জন্য কী উপহার কিনবেন? বললেন, ‘আয়েশা ও আরহামুর জন্যই তো সব। আরহামকে আমি আর আয়েশা আদর করে আরহামু ডাকি। আয়েশার জন্য বিশেষ কিছু একটা তো থাকবেই। সেটা নয় গোপনই থাকল। তা না হলে চমক থাকবে না তো।’
সাব্বির রহমান : ঈদের সেলামি
রাজশাহী ছাড়া অন্য কোথাও ঈদ ভালো লাগে না। সাব্বির রহমানের কাছে ঈদ মানেই রাজশাহীর ঈদ। অন্য কোথাও ঈদ করার কথা ভাবতে পারেন না। খেলা থাকলে অবশ্য ভিন্ন কথা। মা-বাবা, ভাই, বন্ধুদের নিয়ে কাটে সাব্বিরের ঈদ। বাড়ির ছোট ছেলে সাব্বির। পরিবারের সবার জন্য ঈদের কেনাকাটা ঢাকায় করেন তিনি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কেনাকাটা সেরে গিয়েছেন রাজশাহী।
‘প্রতিবার ঈদে নামাজ পড়ে ঘুরতে বের হই। এবারও তাই করব। সব সময় প্রিয় বাইকে চড়েই ঘোরাঘুরি করি। গাড়ি চালানো শিখে গিয়েছি। এবার সবাইকে নিয়ে গাড়িতে চড়ে ঘুরব।’ বলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাব্বির রহমান।
সাব্বিরের ঈদ আক্ষরিক অর্থেই তিন দিনের হয়। প্রথম দিন শুধু আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে কাটাবেন। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ঈদের পরদিন বন্ধুদের সঙ্গে এলাকার কোনো বড় ভাইয়ের বাংলোবাড়ি বা আশপাশে কোথাও ঘুরতে যান। এই দিনটি শুধুই বন্ধুদের জন্য। ঈদের তৃতীয় দিন চাচাতো, মামাতো ভাইবোনরা সব চলে আসে তাঁদের বাড়িতে। পুরো বাড়িতে হইহুল্লোড়, আড্ডা লেগে থাকে।
এখনো নানির কাছে ঐতিহ্য অনুযায়ী দুই টাকা সালামি পান। মা-বাবা, বড় ভাই, ভাবির কাছ থেকে সালামির টাকা বেড়েছে। কিন্তু সাব্বিরও সালামি দেওয়া থেকে রেহাই পান না। দুই ভাতিজা, ছোট খালাতো-মামাতো ভাইবোনদের সালামি দিতে হয় তাঁকে।
মুস্তাফিজুর রহমান : ‘বড়’ মুস্তাফিজের ঈদ
এবারও আবুল কাসেম গাজী ও মাহমুদা খাতুন থাকবেন অপেক্ষায়—কবে বাড়ি ফিরবে তাঁদের ছোট ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান। বড় ছেলে মাফুজার রহমান থাকেন খুলনায়; ঈদের ছুটি শুরু হলেই তিনি ফিরবেন। মেজো ছেলে জাকির হোসেন ও সেজো মোখলেছুর রহমান তো বাড়িতেই থাকেন। অপেক্ষা শুধু মুস্তাফিজের জন্য।
মুস্তাফিজের ঈদের ছুটি শুরু কবে? নিশ্চিত নন মুস্তাফিজ নিজেও। আইপিএল থেকে চোট নিয়ে ফেরা বাংলাদেশ দলের এই বাঁহাতি পেসারের চলছে পুনর্বাসন-প্রক্রিয়া। তবে মুস্তাফিজের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেটি হতে পারে আজই।
গত রোজার ঈদে বাড়িতে যাওয়া হয়নি মুস্তাফিজেরও। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টেস্ট সিরিজ থাকায় ঈদ করতে হয়েছে চট্টগ্রামে। এবার যেহেতু বাংলাদেশের খেলা নেই, নিশ্চয়ই ঈদ করতে হবে না বাড়ির বাইরে!
বাড়ি গেলে মুস্তাফিজের ঈদ কাটবে আগের মতোই। ঘুম থেকে উঠে মায়ের হাতে সেমাই খাওয়া। এরপর বাবা ও ভাইদের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া। বিকেলে প্রতিবারের মতো এবারও পরিকল্পনা আছে বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে নানাবাড়িতে যাওয়ার। যেহেতু বাড়ির সবচেয়ে ছোট ছেলে, আগে অনেক সালামি পেতেন। কিন্তু এখনকার ছবি কিছুটা ভিন্ন। মুস্তাফিজ ‘বড়’ হয়ে গেছেন! তাঁকেই সালামি দিতে হয় ছোটদের।
আগে স্বাধীনভাবে যেকোনো জায়গায় ঘুরতে পারতেন মুস্তাফিজ। কিন্তু এখন সে উপায় নেই। বাধ্য হয়েই ঘোরাঘুরি করতে হয় অনেক বেছে। যদিও কোথাও যান, সঙ্গে থাকবেন ভাইয়েরা। সৌজন্যে : প্রথম আলো