রাজীব আহমেদ
নদীতে ইলিশ সারা বছরই মেলে, তবে সংখ্যায় কম। তেমনি বাজারেও ইলিশ সারা বছর পাওয়া যায়, তবে দাম থাকে নাগালের বাইরে। গড়পড়তা আয়ের পরিবারে মন ভরে ইলিশ খাওয়ার সুযোগ তৈরি হয় বর্ষার শেষ দিকে। তখন জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ছোট-বড় ইলিশ ধরা পড়ে। বাজারে দাম কমে। কেজি ছুঁই ছুঁই ওজনের একেকটি ইলিশ কেনা যায় পাঁচ-ছয় শ’ টাকার কাছাকাছি দরে।
ইলিশের ভরা মৌসুম সেপ্টেম্বর-অক্টোবর দুই মাস। অবশ্য তার কিছু আগেই নদীতে কিছু কিছু ইলিশ ধরা পড়তে থাকে। এবারের বর্ষার ইলিশের দিন শুরু হয়েছে গত সপ্তাহ থেকে। গত মঙ্গল-বুধবার থেকে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার আরো বেশি পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার ঘুরেও দেখা গেছে ইলিশের সমারোহ।
নদী ইলিশের বাসস্থান নয়। নদীতে এ মাছটি আসে ডিম ছাড়ার জন্য। মোহনা থেকে নদ-নদীর অনেক উজানে এবং উপকূল থেকে গভীর সমুদ্রে ইলিশ মাছ পরিভ্রমণ করে। তবে পদ্মাসহ কয়েকটি বড় নদীতে ইলিশ স্থায়ীভাবে বসবাস করে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে প্রায় সব প্রধান নদ-নদী ও উপকূলীয় এলাকায় প্রায় সারা বছ কমবেশি পরিমাণে ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। তবে আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিন মাসে প্রায় ৬০ শতাংশ ইলিশ ধরা পড়ে। পাশাপাশি ইলিশের বড় প্রজননকাল আশ্বিন-কার্তিক মাস। এ সময় শতকরা প্রায় ৬০-৭০ ভাগ ইলিশ মাছই পরিপক্ব ও ডিম ছাড়ার উপযোগী অবস্থায় থাকে।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা শুক্কুর আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, চাঁদপুরের জেলেরা আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে ইলিশ পেতে শুরু করেছে। বুধবার যা পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছে বৃহস্পতিবার। তিনি বলেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে অতিবৃষ্টির সময় ইলিশের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এক কেজি ওজনের একেকটি ইলিশের দাম উঠেছিল এক হাজার ৮০০ টাকায়। এখন আবার তা এক হাজার ১০০ টাকায় নেমেছে। তিনি বলেন, যেভাবে ধরা পড়া শুরু হয়েছে তাতে দাম আরো কমবে।
রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের কাঁচাবাজারে গত বৃহস্পতিবার প্রচুর ইলিশ দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছে, আগের চেয়ে সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম এখনো তেমন কমেনি। ছোট ইলিশ (তিনটায় এক কেজি) ৫৫০-৬০০ টাকা, মাঝারি ইলিশ ৭৫০-৮০০ টাকা ও বড় ইলিশ (৮০০ গ্রামের বেশি) ৯০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা কেজি চাইছে বিক্রেতারা। ‘টেম্পো’ ইলিশ (জাটকার চেয়ে বড়) ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি চাইছে বিক্রেতারা।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ভালো বৃষ্টি হলে অক্টোবর থেকেই ইলিশ পাওয়া শুরু হয়। এখন যে ইলিশ মিলছে তা মৌসুমের শুরুর। আগামীতে আরো ধরা পড়বে আশা করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমি গত কয়েক দিন মেঘনা নদী ঘুরে দেখেছি, জেলেরা ইলিশ পাচ্ছে। বড় ইলিশের পাশাপাশি ছোট ইলিশও ধরা পড়ছে।’
আনিছুর রহমান জানান, বিশ্বে ইলিশ মাছের উৎপাদন বছরে মোট প্রায় চার-পাঁচ লাখ টন। এর মধ্যে ৫০-৬০ শতাংশ ধরা পড়ে বাংলাদেশে। এ ছাড়া মিয়ানমারে ২০-২৫ শতাংশ, ভারতে ১৫-২০ শতাংশ ও বাকি ৫-১০ শতাংশ অন্যান্য দেশে ধরা পড়ে। বাংলাদেশের ৪০টি জেলার প্রায় সাড়ে চার লাখ জেলে ইলিশ ধরে। এদের প্রায় ৬৮ শতাংশ বর্ষা মৌসুমে ইলিশ ধরার কাজে নিযুক্ত হয়। অবশ্য দেশের সব জায়গায় এখনো তাদের ব্যস্ততা শুরু হয়নি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, বরিশাল অঞ্চলে এখনো খুব বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে না। চট্টগ্রাম এলাকায়ই ইলিশ বেশি ধরা পড়ছে। তিনি বলেন, নদীর স্রোত একটু কমলেই বরিশাল অঞ্চলের জেলেরা মাছ ধরতে নামবে। তখন সরবরাহ বেড়ে দাম আরো কমবে। সূত্র : কালের কণ্ঠ