ভারতের রাজস্থান নামি জায়গা। বেড়াতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁরা রাজস্থানকে তালিকার ওপরের দিকে রাখেন। রাজস্থানের একটি জায়গা পুসকর। আগামী ১৮ নভেম্বর এখানে শুরু হচ্ছে উটের মেলা। চলবে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত। লিখেছেন মো. নাভিদ রেজোয়ান
সতীর মৃত্যুতে মহাদেব অনেক কেঁদেছিলেন। ফলে সৃষ্টি হয় দুটি পবিত্র জলাধার। একটির নাম কেতাকশা। এটি পাকিস্তানে। অন্যটির নাম পুসকর। এটি ভারতের রাজস্থানে। আজমির থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে পুসকর নগর। প্রতিবছর দেশ-বিদেশের বহু মানুষ এখানে পুণ্য লাভের আশায় সমবেত হয়। পুকুরের পাড় ধরে আছে চার শর বেশি মন্দির আর পুকুরে আছে ৫২টি স্নান ঘাট।
তবে পুসকর বেশি মানুষ টানে মেলার সময়। সারা বছরের মোট মানুষের চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ এ সময় জড়ো হয় পুসকরে। পুসকর মেলাকে লোকজন উটের মেলা নামেই বেশি চেনে। উটের সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু এ মেলায় ঘোড়া, গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষও বিক্রি হয়।
পুসকরের মেলা শুরু হয় উট দৌড়ের প্রতিযোগিতা দিয়ে। আরো হয় রাজস্থানি গান-বাজনা। মটকা ভাঙা, বড় গোঁফের প্রতিযোগিতা, বিয়ের প্রতিযোগিতা ইত্যাদিও মেলার গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ। পসরা নিয়ে বেপারিরা আসে দূর-দূরান্ত থেকে। যেমন নাগপুর থেকে আসে রুপার তৈরি অলংকার আর পুঁতির মালা, আজমির থেকে ছাপা কাপড়। বাচ্চাদের জন্য অনেক রকম খেলনা পাওয়া যায়। সোজা কথায় নানা বয়স আর রঙের মেলা এটি।
আট দিনের মেলায় উটের অনেক খেলা আর প্রদর্শনী থাকে। উটগুলোকে মাস ধরে ঝাড়পোছ করা হয়, পরানো হয় রংবেরঙের কাপড় আর অলংকার। আলাদাভাবে উটের অলংকারের দোকানও বসে। দোকানগুলোয় পাওয়া যায় রুপার তৈরি বেল্ট, চুড়ি, বালা ইত্যাদি। এ ছাড়া উটের পিঠে বসার জন্য অনেক ধরনের স্যাডেল, চামড়ার চিকন বেল্ট, কড়িও মেলে। পুসকর মেলার একটি বড় আকর্ষণ-উটের নাকে নথ পরানো। এ সময় অনেক উটের নাক নতুন করে ফোঁড়ানো হয়।
উট প্যারেডের কথাও ভুলতে পারে না অনেক পর্যটক। প্যারেডে অংশ নেওয়া উটগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে সুন্দর উটটিকে পুরস্কৃত করা হয়। তবে পিঠে একসঙ্গে অনেক মানুষ বসিয়ে কসরত দেখানোর উট খেলাটি বেশি জনপ্রিয়। যে উটটি সব থেকে বেশি মানুষ নিয়ে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে, সেটি হয় চ্যাম্পিয়ন।
উটের আরেকটি জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে নির্দিষ্ট বস্তু খুঁজে বের করা। উটের মালিক কোনো একটি বস্তু দূরে অন্য অনেক বস্তুর সঙ্গে একত্রে রেখে দেয়। সব কিছুর ভিড় ঠেলে উট সেটি ঠিকই খুঁজে বের করে। উটগুলো খেলা শেষে ঘাড় উঁচিয়ে সর্বসাধারণের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করে। খেলার আগে উট সাজানোও দেখে অনেক মানুষ ভিড় করে।
মেলায় পর্যটকরা স্থানীয়দের মতো ট্যাটু করাতে পারে। এসব ট্যাটুও অনেক জনপ্রিয়। অনেক বড় জায়গা নিয়ে মেলা হয়। তাই যারা হেঁটে হেঁটে হাঁপিয়ে ওঠে, তারা উট ভাড়া করতে পারে। অনেক ধরনের খাবারের দোকান বসে মেলায়। তবে আমিষের দোকান পাবেন না আর পাবেন না অ্যালকোহল। পুসকর লেকটিকে বলা হয় রাজতীর্থ। খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ বছর আগের মুদ্রাতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। মেলার শেষের দিন অর্থাৎ কার্তিকি পূর্ণিমায় এই লেকের জলে তীর্থযাত্রীরা স্নান সারে। লোকদের বিশ্বাস, এই জলে স্নানের মাধ্যমে কঠিন অসুখবিসুখ দূর হয়। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ