Skip to content

উপস্থাপক থেকে ফিফার সর্বময় কর্তা

Fifa

ফিফার সভাপতি নির্বাচনে জয়ী জিয়ান্নি ইনফান্তিনোকে অভিনন্দন পরাজিত প্রার্থী শেখ সালমানের। পরশু জুরিখে।

চকচকে কামানো মাথার ভদ্রলোক একেবারে অচেনা ছিলেন না ফুটবলপ্রেমীদের কাছে। তবে তাঁর পরিচয়টা তখন অন্য রকম ছিল। বিশেষ করে উয়েফার অনুষ্ঠানগুলোয় দেখা যেত তাঁকে। চ্যাম্পিয়নস লিগ আর ইউরোপা লিগের ড্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তবে উপস্থাপক পরিচয়ের বাইরেও যে তিনি উয়েফার বেশ বড় কর্মকর্তা, সেটি বোধ হয় খুব কম মানুষই জানতেন।

গত অক্টোবরে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ফিফা সভাপতি নির্বাচনে মিশেল প্লাতিনির অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই তাঁর উয়েফা মহাসচিব পরিচয়টা বড় হয়ে উঠল। শুধু কি তাই? ফিফা সভাপতি পদে প্লাতিনির বিকল্প প্রার্থী হিসেবেই নাম এল এই মুণ্ডিত মস্তক ভদ্রলোকের। সত্যি বললে, ওই সময়টাতেই অনেকে জানলেন, জিয়ান্নি ইনফান্তিনো শুধু উপস্থাপকই নন, উয়েফার মহাসচিব এবং প্লাতিনির ডান হাত। শেষ পর্যন্ত প্লাতিনি সভাপতি নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে যাওয়ায় উয়েফার প্রার্থী হিসেবে থাকলেন ইনফান্তিনোই। আর কী সৌভাগ্য তাঁর! পরশুর নির্বাচনে জিতে এখন তিনিই ফুটবল-বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি!

বয়স মাত্র ৪৫। ফুটবল প্রশাসক হিসেবেও ক্যারিয়ার খুব লম্বা বলা যাবে না, ২০০০ সালে উয়েফায় প্রথম যোগ দিয়েছিলেন আইনবিদ হিসেবে। সেখান থেকে মাত্র ১৬ বছরের মধ্যে বিশ্ব ফুটবলের সর্বময় কর্তা হওয়া ঈর্ষণীয় সাফল্য বৈকি!

অনেক দিক দিয়েই ব্ল্যাটারের সঙ্গে মিল আছে ব্ল্যাটারের উত্তরসূরির। ইতালিয়ান বংশোদ্ভূত হলেও জন্মসূত্রে ইনফান্তিনো ব্ল্যাটারের মতোই সুইস। সুইজারল্যান্ডের তাঁর বাড়িটাও ব্ল্যাটারের বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। ভাগ্য তাঁকে যেমন সঙ্গ দিয়েছে, উয়েফার সহযোগিতাও পেয়েছেন। ইনফান্তিনোর নির্বাচনী প্রচারণায় অঢেল অর্থ ঢেলেছে উয়েফা। সর্বশেষ দুই মাস প্রচারণার জন্য বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে বিভিন্ন ফেডারেশনে গেছেন, যেটি করতে গিয়ে উয়েফার তহবিল থেকে খরচ হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ইউরো। এই জায়গাতেও ব্ল্যাটারের কৌশল কাজে লাগিয়েছেন ইনফান্তিনো। ফিফা সদস্য ২০৯টি ফেডারেশনকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রতি ৪ বছরে তাদের প্রায় ৪৫ লাখ ইউরো করে দেওয়ার। তাঁর জয়ের পেছনে এই লোভনীয় প্রতিশ্রুতি যে বড় ভূমিকা রাখেনি, তা কে বলতে পারে!

তবে যে কৌশল নিয়েই জিতুন না কেন, ফিফা সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ইনফান্তিনো শুনিয়েছেন আশার কথাই, ‘আমি চাই সারা বিশ্বে ফুটবল ছড়িয়ে পড়ুক। আমি চাই ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ফুটবল লিগ হোক, আফ্রিকায় ফুটবল একাডেমি হোক, ওশেনিয়ায় বাচ্চারা ফুটবল নিয়ে মেতে থাকুক। আমি চাই, বিশ্বের প্রতিটি শিশুর কাছে খেলার জন্য ফুটবল থাকবে, মুখে থাকবে হাসি।’ জয়ের আনন্দের মধ্যে গুরু প্লাতিনিকে তিনি ভুলে যাননি, ‘আমি প্লাতিনিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তিনি আমাকে যা শিখিয়েছেন, আমার জন্য যা করেছেন, সবকিছুর জন্যই।’

উয়েফার সমর্থনপুষ্ট হলেও সভাপতি হিসেবে তিনি হতে চান সর্বজনীন, ‘আমি উয়েফার প্রার্থী নই, আমি ফুটবলের প্রার্থী ছিলাম। আর ফুটবল সবার।’

অবশ্য সবার সভাপতি হতে গেলে এখন তাঁর কৈশোরের প্রেম ও আজীবনের ভালোবাসা ইন্টার মিলানের প্রতি সমর্থনকেও একটু ঢেকে রাখতে হবে। তাতে মনে হয় না ইনফান্তিনোর খুব একটা আপত্তি আছে। ফিফা সভাপতি হিসেবে এখন তিনি চাইলেই তো ‘ভিআইপি’ মর্যাদায় যখন-তখন সান সিরোতে যেতে পারছেন প্রিয় ক্লাবের খেলা দেখতে! সূত্র : ডেইলি মেইল, রয়টার্স। সৌজন্যে : প্রথম আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *