সৌরভ মাহমুদ
ঘন ঘোর বর্ষার দিন। ঢাকা শহর থেকে গাছপালার খোঁজে বেরোনোর তেমন উপায় না পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের বাগানে যাই। এখানে অনেক বাহারি গাছপালা আছে। তা ছাড়া বনবাদাড় থেকে নানান জাতের বিরল গাছপালা সংগ্রহ করে এখানে লাগানো হয়েছে। বনভূমি উজাড় করার কারণে নানান তরুলতা দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। উলটচন্ডাল আমাদের দেশের খুবই সুন্দর একটি বনফুলের লতা। তবে লতাটি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক বন থেকে। এটি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার জঙ্গলে জন্মে। শালবনে ও চট্টগ্রামের কোনো বনে দুবার দেখেছি।
ভেষজ ব্যবহারের জন্য মাত্রাতিরিক্ত আহরণের কারণে লতাটি এখন বনের পরিবেশে কম দেখা যায়। জানামতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বাগানে ও গুলশানের কয়েকটি অভিজাত বাড়ির দেয়ালে কয়েকটি ঝাড় আছে। গুলশান ১ নম্বরের ৭ নম্বর সড়কের একটি বাড়িতে এক মাস ধরে এ ফুল ফুটতে দেখেছি।
এই ফুলের কদর বিশ্বব্যাপী। ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের জাতীয় ফুলও এটি। তবে তার চেয়ে বড় কথা হলো, এটি জিম্বাবুয়ের জাতীয় ফুল। ১৯৪৭ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ রোডেশিয়ায় (জিম্বাবুয়ের পূর্ব নাম) ভ্রমণে গেলে এই ফুলের আকৃতির একটি হীরা উপহার পান।
সাধারণত বর্ষায় ফুল ধরে, লতাজুড়ে। লাল-হলদে রঙে মিশ্রিত ফুল। ফুলের আগার রং লাল এবং গোড়ার অংশ হলুদ বর্ণের। এ লতার আদি আবাস ভারতীয় উপমহাদেশে ও আফ্রিকায়। আদি আবাস নিয়ে মতভেদ থাকলেও ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপ, বিশেষ করে আন্দামান এলাকা থেকে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তবে ভারতের আসাম, হিমালয় থেকে উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় বিশেষ করে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কায় প্রাকৃতিকভাবে উলটচন্ডাল জন্মে। এ ফুলের রয়েছে অনেক ইংরেজি নাম। যেমন: ফ্লেইম লিলি, মালাবার লিলি, ক্লাইবিং লিলি, ক্রিপিং লিলি, গ্লোরি লিলি, ফায়ার লিলি। Colchicaceae পরিবারের এ ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Gloriosa superb। নানান ভেষজ গুণে গুণান্বিত এ লতা। এ লতার মূল কুষ্ঠ রোগে ব্যবহৃত হয়। পাতার রস মাথার উকুন ধ্বংসে অত্যন্ত কার্যকর। সূত্র : প্রথম আলো