Skip to content

একটি ই–লাইব্রেরির কথা

দেব দুলাল গুহ
জ্ঞানচর্চার জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। নানান বিষয়ের বই পড়ার জন্য লাইব্রেরির চেয়ে ভালো জায়গা আর কী হতে পারে? আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে নিজেকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি বাইরের দুনিয়ার খোঁজখবরও রাখতে হয়। মুহূর্তেই গোটা বিশ্বের তথ্যভান্ডারের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে এখন প্রচলিত হচ্ছে ‘ই-লাইব্রেরি’। তেমনই একটি ই-লাইব্রেরি চালু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে।

E-Library

ই–লাইব্রেরিতে পড়া যাবে সারা ​বিশ্বের নানা ধরনের ডিজিটাল বই এবং প্রকাশনা। ছবি : সুমন ইউসুফ

ই-লাইব্রেরি কী এবং কেন?

ই-লাইব্রেরি হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত এমন এক আয়োজন, যেখানে মুদ্রিত বইয়ের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক বই বা ই-বুক পড়ার সুযোগ থাকবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দুনিয়ার যেকোনো জায়গার নির্দিষ্ট লাইব্রেরি বা প্রকাশকের ডেটাবেইসে যুক্ত হয়ে ডিজিটাল প্রকাশনা পাওয়া যাবে। অনলাইনে পড়া যাবে বহু মূল্যবান বই, আবার কম্পিউটারে নামিয়ে নিয়েও (ডাউনলোড) পড়া যাবে। ফলে বাঁচে অর্থ, সময় ও স্থান।

বাংলাদেশে ই-লাইব্রেরি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ১০ আগস্ট ই-লাইব্রেরির উদ্বোধন করা হয়েছে। তবে লাইব্রেরিটি গড়ে তোলার কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ১০ জুলাই। স্বপ্নটা কিন্তু আরও আগের। দীর্ঘ দুই দশক ধরে জিইয়ে রাখা স্বপ্ন যেন বাস্তবে রূপ নিল। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন শীবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে তৈরি পোশাকশিল্পসহ কিছু দিকে আমরা এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে আছি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়েও আমরা পিছিয়ে। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে জ্ঞান-বিজ্ঞান, বাণিজ্য কিংবা গবেষণায় আমরাও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যেতে পারব। ই-লাইব্রেরি আমাদের এগিয়ে চলার সেই পথকে উন্মুক্ত করবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের জাতীয় জনপ্রশাসন ইনস্টিটিউট ভবনের তিনতলায় চালু করা হয়েছে এই ই-লাইব্রেরি। ১২ হাজার বর্গফুট জায়গার এই লাইব্রেরি শুক্র ও শনিবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। একই সময়ে ৩০৯ জন বসে লাইব্রেরির সুবিধা নিতে পারবেন। লাইব্রেরিটি বিশ্বের প্রায় ৩৫টি নামী লাইব্রেরির সঙ্গে যুক্ত। এসব লাইব্রেরির বিশাল বইয়ের ভান্ডার থেকে মহামূল্য বই-সাময়িকী-গবেষণাপত্রের ডিজিটাল সংস্করণ পড়া ও ডাউনলোড করা যাবে। শুরুতে শুধু ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের জন্যই নিবন্ধনপূর্বক লাইব্রেরি কার্ডের মাধ্যমে এই সুবিধা উন্মুক্ত থাকবে। আগামী মাস থেকে প্রতিদিন পাঁচজন অতিথি পাঠককেও লাইব্রেরি ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হবে।

এ যেন শুধু লাইব্রেরি নয়

ক্লাস চলাকালে ১৩ আগস্ট এই ই-লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখা গেল সুন্দর, ছিমছাম, নিরিবিলি পরিবেশে জ্ঞানচর্চা করছেন জ্ঞানপিপাসু শিক্ষক-গবেষক-শিক্ষার্থীরা। লাইব্রেরি কার্ড ছাড়া কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। দেয়ালে দেয়ালে খ্যাতিমান মনীষীদের অনুপ্রেরণাদায়ক বিখ্যাত সব উক্তি। বই পড়া, গবেষণা ও ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটির ফাঁকে খিদে পেলে এখানেই আছে খাবারের ব্যবস্থা। আছে শিক্ষকদের জন্য আলাদা লাউঞ্জ, সভাকক্ষ। আলাপ হলো গ্রন্থাগারিক ফেরদৌসী বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, এখানে শুধু কাগজে মুদ্রিত বইয়ের সংখ্যাই প্রায় পাঁচ হাজার। আর এই ই-লাইব্রেরির মূল পৃষ্ঠপোষকতা করেছে রবি। সঙ্গে আছে ওরিয়ন গ্রুপ। কম্পিউটারগুলো ডেলের দেওয়া। আর প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার জোগান দিয়েছে লজিক সফটওয়্যার।

দৃষ্টি বহুদূর

উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীদের দেখা গেল লাইব্রেরি কার্ড করতে লাইন ধরে ভিড় জমিয়েছেন। পার্বণ আচার্য পড়েন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষ চতুর্থ সেমিস্টারে। তিনি বলেন, ‘পড়তে গিয়ে চাহিদামতো ভালো বইয়ের সংকটের কারণে এত দিন অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হতো। এখন এই লাইব্রেরির মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বইয়ের বিশাল ভান্ডার উন্মুক্ত হওয়ায় সেই প্রতিবন্ধকতা দূর হবে বলে আশা রাখি।’

ফিরে আসছি যখন, তখন মনে হলো যেন তৈরি হচ্ছে আমাদের নতুন বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশ প্রযুক্তির হাত ধরে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সূত্র : প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *