Skip to content

এক শান্ত স্নিগ্ধ শহর কারবালা

Karbala2

আলি আব্বাসউদ্দৌলা
সব কিছুই সাজানো-গোছানো, পরিপাটি কারবালায়। ইরাকের পাহাড় আর মরুভূমিঘেরা এবং গাছও আছে অনেক। লোকজন বেশ সচেতন। যেখানে-সেখানে পলিথিন বা বর্জ্য ফেলে না। পথে পথে সুপেয় পানির বন্দবস্ত। শহর ঘুরে বেড়ানোর সময় আব্বাস নামের যুবকের সঙ্গে দেখা। নামের সঙ্গে নাম মিলে যাওয়ায় দ্রুতই দোস্ত বনে গেলাম। আমার দুই গালে চুম্বন করে আপনা থেকে গাইড হয়ে যায়। দিনটি ছিল জুমাবার। প্রচুর লোক শহরে এসেছে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর রওজা জিয়ারত করতে। নামাজের আগে সব দোকান বন্ধ হয়ে গেল। নামাজ শেষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিনা মূল্যে খাবার বিতরণ করা হলো। গরিব লোকদের জন্য কারবালায় বিনা মূল্যে মিনিবাস, অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনে যাতায়াতের ব্যবস্থা আছে। কারবালায় সাতসকালে দূর-দুরান্ত থেকে নারী-পুরুষ খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করতে আসেন। সকালের নাশতায় তন্দুর রুটি, মাখন আর সেদ্ধ ডিম লোকজনের পছন্দ। গাধার গাড়ি এখানে জনপ্রিয় বাহন।

কারবালার রাস্তায় উটও দেখা যায় অনেক। উটের দুধ পুষ্টিকর। কারবালায় জবাফুল অনেক। সকালবেলা হোটেলের বাইরে এসে জবার ওপরেই নজর গিয়েছিল। জবা ছাড়া গোলাপ, সূর্যমুখী, গাঁদা, নয়নতারা, শিরীষ ফুলসহ আরো অনেক ফুলের মেলা। ইরাকে বসন্তকাল দীর্ঘমেয়াদি। অনেক দিন গাছে গাছে ফুল থাকে। সোনালুও দেখেছি।

Karbala

কারবালার বাজার

কারবালায় ইমাম হোসাইন (রা.)-এর রওজা, তিল্লে জায়নাবিয়া, হজরত আব্বাসের রওজা, মাকামে ইমাম জামানা, নেহরে ফোরাত নদী ইত্যাদির কথা অনেকেই জানবেন। আরো আছে ভাস্কর্য, পার্ক, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, মনমাতানো সৌরভের বাহারি সব ফুলের বাগান। আর আছে হাজার হাজার পাখি। পায়রাই বেশি। পবিত্র রওজার ভেতরে ও বাইরে দিনে-রাত সব সময় পায়রারা ঘুরে বেড়ায় ঝাঁক বেঁধে। ইরাকিরা আরবি ভাষায় কথা বলে। পায়রাকে বলে হামামা, গাধাকে হামার, উটকে জামাল। লটকনের মতো ফলকে ইরাকিরা বলে গাওজে। খেজুরকে বলে কামার, আর শসাকে খায়ার। চালকে বলে তিমমান আর মুরগির মাংসকে দাজাজ। ইরাকিরা দুধ দিয়ে তৈরি খাদ্যকে বলে গোমার। কারবালার মাছের বাজারে অনেক কার্ফু মাছ দেখলাম। মাছ ওরা ভাজা খেতে পছন্দ করে। সবজির বাজারে দেখলাম আলু, বেগুন, ধনিয়াপাতা, টমেটো, ক্ষিরা ইত্যাদি। সবজিকে তারা মারেক বলে। দুপুর ও রাতের বেলায় ইরাকিদের আহার তালিকায় থাকে মাংস (লাহাম), বেগুন তরকারি আর টাটকা শাক-সবজির সংমিশ্রণে তৈরি ‘সালাদ’ বা মোকাববেলা। সালাদে তারা লেবুর টক ব্যবহার করে থাকে। শসা ও ধনেপাতার মিশ্রণে তৈরি সালাদে দধি ব্যবহার করে। ম্যাকারনি জাতীয় নুডলসও তারা খুব খায়। মাংসের মধ্যে ভেড়ার মাংসই বেশি পছন্দ তাদের। আর আমাদের দেশের মতো তাদের রুটি মোলায়েম নয়।

তারা খাবারে অনেক কাঁচা মরিচ বা মরিচ গুঁড়া ব্যবহার করে। কারবালায় অনেক আইসক্রিম পারলার আছে। এগুলোয় চকোলেট ও টাটকা ফলের জুসও পাওয়া যায়। বাজার ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ চোখে পড়ে বিশাল গোল গোল জিলাপি। এত বড় জিলাপি জীবনে দেখিনি। আরো দেখলাম মাঝারি ত্রিকোনাকার নানরুটি। রুটিটি পেঁচিয়ে ছোট ছোট বড়া, টাটকা সবজি মিশ্রিত সালাদ, তেঁতুলের টক ভরে আমাকে খেতে দিল বন্ধু আব্বাস। ইরাকি কায়দার এ রোল খেতে দারুণ ভালো। ইরাকিরা শিশু-কিশোরদের খুব মায়া করে। তাই তো আমার সাথের বাংলাদেশি শিশুদের তারা গালে চুম্বন করে উপহার দিতে ভোলে না।

Karbala3

গাধায় করে মাল পরিবহন

নবাব সিরাজউদ্দৌলার আম্মা আমিনা বেগম মানত করেছিলেন, সিরাজ নবাব হলেই কারবালার প্রান্তরে ছেলেসহ যাবেন মাজার জিয়ারত করতে। নবাব হয়ে তাই প্রিয় আম্মার মানত পূরণে কারবালা গিয়েছিলেন সিরাজ। পাশাপাশি কারবালা প্রান্তরের মাটি দিয়ে মুর্শিদাবাদে তৈরি করেন মদিনা মসজিদ। সন্ধ্যা রাত থেকেই কারবালার রওজাগুলোর চারপাশের ফুলের বাগানগুলো রঙিন আলোয় ভরে যায়। ইমাম হোসাইনের রওজার বেশ কিছু অংশজুড়ে সোনা-রুপার বাহারি সব আলংকারিক কাজ দেখতে পেলাম। বড় বড় ঝাড়বাতিও দেখলাম শ্বেতপাথরের মেঝেয় দাঁড়িয়ে। কারবালার রওজাগুলো ইরাকি কর্তৃপক্ষ রক্ষণাবেক্ষণ করলেও ইরান ও ভারতের সহায়তাও পাওয়া যায়। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *