
খিচুড়ির জন্য হাপিত্যেশ করা বাঙালিকে এখন নানা স্বাদের খিচুড়ি পরিবেশন করছে রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁ। ছবিটি শুক্রবার ভোজ রেস্তোরাঁ থেকে তোলা। ছবি: আশরাফুল আলম
:: সুহাদা আফরিন ::
তুমুল বৃষ্টিতে সুউচ্চ কোনো ভবনে ব্যাটম্যান দাঁড়িয়ে আছে। সেখান থেকেই সে আলফ্রেডের প্রতি হুংকার ছেড়ে বলছে, ‘আলফ্রেড, খিচুড়ি চড়া।’ কিন্তু ঘটনাটি সিনেমা বা কমিক বুকসের নয়। বাঙালির ফেসবুক নিউজফিডে ঘুরে বেড়ানো একটি ট্রল। বৃষ্টি হলেই আলফ্রেডদের উদ্দেশে বাঙালি ব্যাটম্যানরা এ বাণী ছাড়ে।
কতজন বাঙালি ব্যাটম্যানের ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁদের আলফ্রেডরা খিচুড়ি চড়িয়েছিল জানা যায় না। তবে খিচুড়ির জন্য হাপিত্যেশ করা বাঙালিকে এখন নানা স্বাদের খিচুড়ি পরিবেশন করছে রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁ।
রাস্তায় বা বাসার বাইরে যে যেখানেই থাকুক, বৃষ্টির দেখলেই বাঙালির চোখে আপনা-আপনি খিচুড়ি ভেসে ওঠে। আর এ ভরা বর্ষায় বৃষ্টির ঠিক-ঠিকানা নেই; যখন-তখন নামে। রাজধানীর রেস্তোরাঁগুলোও এখন খিচুড়ি পরিবেশনে প্রস্তুত থাকে।
আমের আচার, ধনেপাতা আর পুদিনাপাতা দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে সেগুনবাগিচার ‘ভোজ রেস্তোরাঁ’। সিরামিকের গোল বাটিতে পরিবেশিত এ খিচুড়ির সঙ্গে আছে মুরগি, হাঁস, গরু ও খাসির মাংস। সঙ্গে একটি ডিমও থাকবে। রেস্তোরাঁ ম্যানেজার সুভাষ শর্মা বলেন, ‘আমাদের খিচুড়ির চাহিদা সব সময়ই বেশি থাকে। বৃষ্টি হলে তা আরও বেড়ে যায়।’ তিনি জানালেন, গরুর মাংসের খিচুড়ির চাহিদা বেশি। এর দাম ২২৫ টাকা। মুরগির মাংসের খিচুড়ির দাম ২০০ টাকা, খাসির মাংসের খিচুড়ি ২৭৫ এবং হাঁসের মাংসের খিচুড়ি পাওয়া যাবে ২৮০ টাকায়। দুপুর থেকে এখানে খিচুড়ি খাওয়া যাবে।

মুন্সিগঞ্জের বিখ্যাত খুদের চালের খিচুড়ি খাওয়া যাবে ক্যাফে বৃত্ততে। ছবি: রেস্তোরাঁটির ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।
মুন্সিগঞ্জ এলাকায় খুদ দিয়ে ভাত বা খিচুড়ি বেশ প্রচলিত। স্থানীয়ভাবে তা পরিচিত ‘বউয়া ভাত’ নামে। ‘ক্যাফে বৃত্ত’ সেই খুদের চালের খিচুড়ির স্বাদ দিচ্ছে রাজধানীবাসীকে। আলু ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, সরিষা ভর্তা ও বেগুন ভর্তা থাকবে প্লেটের চারপাশে সাজানো। সঙ্গে অর্ধেক ডিম ভাজি। দাম ৬০ টাকা। আদাবর থানার পাশে এ রেস্তোরাঁয় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খুদের খিচুড়ি পরিবেশন করা হয়। রেস্তোরাঁর মালিক সাব্বির আহমেদ বলেন, মুন্সিগঞ্জের খাবার ঢাকাবাসীকে খাওয়ানোর পাশাপাশি নিজের রেস্টুরেন্টকে অন্যদের থেকে আলাদা করারও একটা চিন্তা ছিল। সেখান থেকেই খুদের খিচুড়ি। তবে তিনি বললেন, রাজধানীতে তাঁরাই এ বিশেষ খিচুড়ি করে থাকেন।
পুরান ঢাকার মাহুতটুলীর চুড়িওয়ালা গলিতে ‘শামশের আলীর ভুনা খিচুড়ি’ রেস্তোরাঁ। খিচুড়ির জগতে এর বেশ নামডাক। চিনিগুঁড়া চাল ও মুগের ডাল দিয়ে রান্না এর স্বাদ অন্যান্য খিচুড়ি চেয়ে একদমই ভিন্ন। সৌদি আরব থাকতে শামশের আলী দিল্লির এক বাবুর্চির কাছ থেকে বিশেষভাবে খিচুড়ি রান্না শিখেছিলেন। তবে সেটা ছিল স্রেফ নিজের খাওয়ার জন্যই। শামশের বলেন, ‘নিজেদের খাওয়ার জন্য হলেও দেশে আসার পরে ভাবলাম মানুষকেও খাওয়াই। ২০০৫ সালে আমি এইটা চালু করি। আমি আর আমার স্ত্রী মিলে রান্না করি।’ কিন্তু শামশের আলী এর রেসিপি কাউকে বলেন না। খাসির মাংস দিয়ে পরিবেশন করা হয়। লেগ পিসসহ খিচুড়ির দাম ২৪০ টাকা। শুধু খাসির মাংসসহ ১৯০ টাকা। সঙ্গে অতিরিক্ত খিচুড়ি ফ্রি। শুক্রবারে রেস্তোরাঁটি বন্ধ থাকে।
বিন্নি চালের খিচুড়ি পাওয়া যাবে গুলশান ১ নম্বরের ‘বিন্নি রেস্তোরাঁ’তে। শনি থেকে বৃহস্পতিবার পরিবেশন করা হয়। তবে শুক্রবারে কেউ বেশি করে ফরমাশ দিলে পাওয়া যাবে। এখানে খাসি মাংসের খিচুড়ি ২২০ টাকা, গরু ও মুরগির মাংসের ২০০ টাকা এবং হাঁসের মাংসের খিচুড়ি খাওয়া যাবে ৩০০ টাকায়। রেস্তোরাঁর অ্যাকাউন্টস ম্যানেজার মো. আলামিন বলেন, ‘আমাদের বিন্নি চালের খিচুড়ির চাহিদাই অনেক। ঢাকায় হাতে গোনা কয়েকটি জায়গা এ চালের খাবার পাওয়া যায়। তাই অনেকেই এটা খেতে আসে।’
ঘরোয়া হোটেল, হিরাঝিল, স্টার হোটেল অ্যান্ড কাবাব, স্বাদ তেহারি ঘর, বাবুর্চি, প্রিমিয়াম সুইটস, আফতাব, অষ্টব্যঞ্জনসহ রাজধানীর ছোট-বড় অনেক খাবারের দোকানেই খিচুড়ি পাওয়া যাবে। সৌজন্যে: প্রথম আলো