মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান
ওমান একটি মরুময় দেশ। দেশটির সুউচ্চ পর্বতমালার ঠিক পাশেই রয়েছে বালুর সমুদ্র সৈকত। বহু শতাব্দী ধরে ওমান ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যের একটি অন্যতম কেন্দ্র। ১৭শ’ থেকে ১৯শ’ শতক পর্যন্ত এটি একটি ঔপনিবেশিক শক্তি ছিল। ওমানের রাজা সুলতান উপাধি ব্যবহার করেন। দেশটির সরকারি নাম ওমান সুলতানাত।
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে ওমানের সুলতান কাবুস চিন্তা করেন তার দেশে একটি গ্র্যান্ড মসজিদ থাকা উচিত। তাই ১৯৯৩ সালে মসজিদটি নির্মানের উদ্দেশে বিভিন্ন স্থপতির নকশা নিয়ে একটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রতিযোগিতার পর ১৯৯৫ সালে রাজধানী মাস্কটের বাউশের নামক স্থানে মসজিদটির নির্মানকাজ শুরু হয়।
মসজিদটি নির্মানে দায়িত্ব পালন করেন কার্লিয়ন আলাওই এলএলসি। মসজিদটি নির্মাণে সময় লাগে ছয় বছর চার মাস।
মসজিদটি নির্মাণে তিন লাখ ভারতীয় পাথর ব্যবহার করা হয়।
প্রধান নামাজ ঘরটির স্থানীয় নাম ‘মুসালা’। যার আয়তন ৭৪ দশমিক চার বাই ৭৪ দশমিক চার বর্গমিটার। ঘরটির ছাদের মাঝখানে একটি কেন্দ্রীয় গম্বুজ আছে, যা ভূমি থেকে ৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। মসজিদটির ৯০ মিটার উচ্চতার একটি প্রধান মিনার ও ৪৫ দশমিক পাঁচ মিটার উচ্চতার চারটি পার্শ্ব মিনার রয়েছে।
প্রধান মুসালায় একসাথে সাড়ে ছয় হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটিতে মহিলাদের জন্যও একটি মুসালা রয়েছে যেখানে ৭৫০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এছাড়া বাইরের খোলা অংশে নামাজ আদায় করতে পারেন আট হাজার মুসল্লি। সীমানার ভেতরের অতিরিক্ত স্থান এবং করিডরসহ মসজিদটিতে মোট ২০ হাজার মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হাতে বোনা কার্পেট রয়েছে এই মসজিদে। মূল মুসালার এই কার্পেটটিতে ১৭০ কোটি সুতার বন্ধন রয়েছে যার ওজন ২১ মেট্রিক টন। এটি তৈরিতে সময় লেগেছে চার বছর। কার্পেটটি তৈরির সময় ক্লাসিক্যাল তাব্রিজ, কাশান এবং ইসাফাহান-এর ঐতিহ্য বজায় রেখে ডিজাইন করা হয়। ২৮টি বিভিন্ন স্তরের রঙের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে এই কার্পেটে। বেশিরভাগ রঙ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টুকরাবিহীন কার্পেট।
রয়্যাল কোর্ট অব সালতানাত অব ওমানের দেওয়ানের আদেশে কার্পেটটি তৈরি করেছে ইরান কার্পেট কোম্পানি। কার্পেটটির পরিমাপ ৭০ বাই ৬০ মিটার। এই এক টুকরা কার্পেট প্রধান মুসালার চার হাজার ৩শ’ ৪৩ বর্গমিটার মেঝেতে বিছানো।
মূল নামাজ ঘরের ছাদের সাথে লাগানো আকর্ষণীয় ঝাড়বাতিটি ১৪ মিটার লম্বা। এটি তৈরি করেছে জার্মানের কোম্পানি ফৌস্টিগ।
মসজিদটি নির্মাণে জমি ব্যবহার করা হয়েছে চার লাখ ১৬ হাজার বর্গমিটার। এছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্সটি এর আয়তন বৃদ্ধি করেছে ৪০ হাজার বর্গমিটার।
ওমানের সুলতান ২০০১ সালের ৪ মে মসজিদটি উদ্বোধন করেন। সুলতান কাবুসের নামেই মসজিদটির নামকরণ করা হয় সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মসজিদ।