Skip to content

কক্সবাজার ও রাঙামাটিতে বর্ষবরণে পর্যটকের ঢল

পর্যটন মৌসুমকে ঘিরে কক্সবাজার, রাঙামাটি, সেন্টমার্টিনসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নেমেছে পর্যটকদের ঢল। বছর শেষের ছুটি উদযাপনে প্রকৃতির কাছে পাহাড় আর সমুদ্রের কোলেই ছুটে যাচ্ছেন বেশিরভাগ পর্যটক। পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুনকে স্বাগত জানাতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের সমাবেশ ঘটেছে। পর্যটকদের বিনোদন, নিরাপত্তাসহ তাই সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরাও। এবার ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উপলক্ষে সৈকতে কোনো অনুষ্ঠান না থাকলেও তারকা মানের কয়েকটি হোটেলে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সুলতান জানান, ডিসেম্বরের শুরু থেকে কপবাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। থার্টি ফার্স্ট নাইটে এই সংখ্যা বাড়বে কয়েকগুণ। ইতিমধ্যে কপবাজারের ৪ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস অগ্রিম বুকিং দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘পর্যটন জোন, সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের ১১টি দল কাজ করবে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ৫ শতাধিক পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। সঙ্গে র‌্যাব, আনসার থাকবে বিপুল সংখ্যক।’

শুক্রবার ভোর থেকেই পর্যটকের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে সৈকত নগরীতে। প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও উপচে পড়া ভিড়। তবে অন্যান্য বারের মতো এবার কক্সবাজার সৈকতে কোনো কনসার্ট বা অন্য কোনো আয়োজন নেই শুনে হতাশ পর্যটকরা।

ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর কপবাজার সৈকতে তারকা শিল্পীদের অংশগ্রহণে কনসার্ট আয়োজন থাকেন। তা উপভোগ করার জন্যই বন্ধুদের নিয়ে এখানে আসি। এবার কোনো আয়োজন নেই শুনে কষ্ট পেয়েছি।’

কক্সবাজারের সংস্কৃতিকর্মী কলিম উল্লাহ বলেন, ‘কক্সবাজারকে ব্র্যান্ডিং করা মানে পুরো বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা। নিরাপত্তার অজুহাতে সমুদ্রসৈকতে উৎসবের অনুমতি না দেওয়া পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কর্তৃপক্ষের এ ধরনের সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ।’

তিনি বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে পর্যটকের জন্য উৎসবের আয়োজন করা দরকার ছিল। প্রয়োজন ছিল কক্সবাজারের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা।

এদিকে, কিছু হোটেল মালিকের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।

লোকে লোকারণ্য রাঙামাটি পর্যটন কেন্দ্র : শীত মৌসুম ও থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে রাঙামাটিতেও পর্যটকদের ঢল নেমেছে। প্রতিদিনই তাদের আগমন বাড়ছে দেশের অন্যতম প্রধান এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে। শহরের বিভিন্ন হোটেল-মোটেলগুলোতে জমে উঠেছে পর্যটন ব্যবসাও।

নানা রকম ডিসকাউন্ট আর প্যাকেজ সুবিধা দিয়ে কারা কত পর্যটক টানতে পারে, যেন তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। হোটেল মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও পর্যটকদের জন্য প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার স্বল্পমূল্যে রাঙামাটির দর্শনীয় স্থানসহ কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণের বিশেষ প্যাকেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইট-পাথরের শহর ও যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে বছর শেষের এ সময়টিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ পাহাড় আর হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে রাঙামাটি ছুটে আসেন। তবে চলতি বছরের ১৩ জুনের ভয়াবহ পাহাড়ধস ও কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে ঝুলন্ত ব্রিজ ডুবে যাওয়ায় রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসায় মন্দা চলছিল। পাঁচ মাস পর অবশেষে গত কয়েক সপ্তাহে রাঙামাটিতে পর্যটকের আগমন বাড়ায় সে মন্দা কাটতে শুরু করেছে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন নিয়ে আসা পর্যটকরা রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু, শুভলংয়ের মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা, রাজ বনবিহার, জেলা প্রশাসনের বাংলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

পর্যটকদের আরও আকৃষ্ট করছে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিসৌধ, বালুখালী কৃষি খামার, টুক টুক ইকোভিলেজ, সাংপাং রেস্টুরেন্ট এবং আদিবাসী শান্ত-সবুজ গ্রাম ও তাদের জীবনযাত্রা।

এ ছাড়া রাঙামাটি শহরের বাইরে বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের মনোরম পর্যটন স্পট, কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা পার্ক ও রেস্টুরেন্ট, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কর্ণফূলী পেপার মিল ও কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান।

হোটেল মতিমহলের স্বত্বাধিকারী শফিউল আজম জানান, থার্টি ফার্স্ট নাইট ও নতুন বছরকে কেন্দ্র তার হোটেলে পর্যটকদের জন্য শতকরা ৩০ ভাগ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সব রুম ইতিমধ্যেই ভাড়া হয়ে গেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর রাঙামাটির আবহাওয়া এবং দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ভালো থাকায় পর্যটকের ঢল নেমেছে।

রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক মুজিবুর রহমান জানান, পর্যটকদের আগমন বাড়ায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন স্পটে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকের চাপ থাকবে রাঙামাটিতে। সূত্র: সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *