কঙ্কাল হ্রদ। শুনতে অবাক লাগছে? কঙ্কালের আবার হ্রদ হয় নাকি? হ্যাঁ সত্যি, আজ এমনই একটি হ্রদের কথা শুনাবো যাব ইতিহাস অনেক পুরনো।
১৯৪২ সালের ঘটনা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই মাইল উঁচু ভারতের রূপকুণ্ডে ব্রিটিশ গার্ডরা ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া একটি হ্রদের সন্ধান পান। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা এই হ্রদের আশেপাশে যা পাওয়া গেল, সেটি দেখে গার্ডদেরই ভয়ে জমে যাওয়ার অবস্থা। হ্রদটির আশেপাশে শত শত মানুষের কঙ্কাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। গ্রীষ্ম আসার সাথে সাথে দেখা গেল আরো ভয়াবহ দৃশ্যের। বরফ গলছে, আর ভেসে উঠছে বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকা মানুষের কঙ্কালগুলো। আর সেগুলো এসে জমা হতে লাগলো হ্রদের তীরে।
ওই সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। অনেকের ধারণা ছিল এগুলো হয়তো মৃত জাপানি সৈন্যদের কঙ্কাল, যারা লুকিয়ে ভারতে পালিয়ে এসেছিলেন। কেউ বলেছেন ভূমিধ্বস। কেউ বলেছেন মহামারী। আবার কেউ বলেছেন হয়তো ধর্মীয় রীতির মাধ্যমে আত্মাহুতি বা উৎসর্গের ফলে এই বীভৎস ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। রহস্য উদঘাটনে ব্রিটিশরা প্রতিনিধি দলও পাঠিয়েছিল। কিন্তু সবার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এই সময়ে দ্বীপটির নাম হয়ে যায় কঙ্কাল দ্বীপ বা Skeleton Lake। ছয় দশক ধরে রূপকুন্ডের এই কঙ্কাল হ্রদ এক রহস্য হয়েই ছিল।
২০০৪ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক থেকে একদল গবেষক এলেন রহস্য উন্মোচন অভিযানে। তারা হ্রদ থেকে প্রায় ৩০টির মত কঙ্কাল উদ্ধার করলেন। যেগুলোর কোনোটির গায়ে তখনো কিছু মাংস ও চুল ছিল। তারা যা বললেন তাতে আক্কেল গুড়–ম হওয়ার মতো অবস্থা। কঙ্কালগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করা হলো। আবিষ্কার হলো কঙ্কালগুলো দুটি আলাদা বৈশিষ্ট্যের দলভুক্ত। একদল ছিল কোনো একটি পরিবার, উপজাতীয় গোত্র অথবা নিকট সম্পর্কযুক্ত। এর বাইরে ছিল অন্যরা। কঙ্কালগুলোর সাথেই পাওয়া যায় আংটি, কাঠের তৈরি বিভিন্ন জিনিস, চামড়ার জুতা, লোহার তৈরি বর্শার মাথা বা ফলক ও বাঁশের পাত। গবেষকদের ধারণা, কঙ্কালগুলো ছিল একদল তীর্থযাত্রীর। যারা উপত্যকার উপরে উঠছিলেন। তাদের সহযোগিতা করছিলেন একদল স্থানীয় কুলি বা মালপত্রবহনকারী।
তাঁরা প্রায় সবাই একভাবেই মারা গেছেন। সবার মাথাতেই ভারি কোনো কিছুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেল। আর সেই ক্ষত পরীক্ষা করে পাওয়া গেল লোমহর্ষক তথ্য। কোনো অস্ত্রের আঘাতে এতগুলো মানুষ মারা যাননি। গোলাকার আকৃতির ‘কোনো কিছু’র আঘাতে মারা গিয়েছিলেন তারা। কঙ্কালগুলোর মাথা ও কাঁধ পরীক্ষা করে আরো জানা গেল, আঘাতটা এসেছে মাথার উপর দিক থেকে। সবকিছু পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা একটি অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন। শত শত তীর্থযাত্রী এক ভয়াবহ শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে মারা গিয়েছিলেন। শিলাবৃষ্টি সাধারণত প্রাণঘাতী হয় না। কিন্তু সেদিনের শিলাগুলোর আকার হয়তো অনেক বড় ছিল। যাত্রীদের কাছে কোনো ছাউনি ছিল না। ফলে তারা করুণ মৃত্যুর মুখোমুখি হন। প্রায় ১২০০ বছর আগের সেই ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আজো রূপকুন্ডের কঙ্কাল হ্রদের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে শত শত কঙ্কাল।
