এ রিয়াজ
দক্ষিণ আমেরিকার আন্ডিস পর্বতমালায় বৃক্ষরেখার উপরে যে তুন্দ্রা বা তৃণভূমি সে এলাকাটিকে বলে পারামোস। এটির অবস্থান কলম্বিয়ায়। এ পারামোসের কিছু গাছপালা মেঘ থেকে আর্দ্রতা সঞ্চয় করে তা ধরে রাখতে পারে।
কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটার বোটানিক্যাল গার্ডেনের গবেষকরা এমন একটি উদ্ভিদের খোঁজে ছিলেন, যা গত ৫০ বছর ধরে দেখা যায়নি। গবেষকরা এবার সেই দুষ্প্রাপ্য গাছটির সন্ধান পেয়েছেন। গাছগুলো আকাশের মেঘ থেকে আর্দ্রতা শুষে নিয়ে তা ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে। এভাবেই আন্ডিস পর্বতমালার আর্দ্র এলাকাগুলো গ্রীষ্মেও ঝর্ণা ও নদীগুলোতে পানি থাকার ব্যবস্থা করে। এই আর্দ্র এলাকাগুলো কলম্বিয়ায় পানীয় জলের সবচেয়ে জরুরি উৎস।
পার্বত্য এলাকার এ অ্যালপাইন তুন্দ্রা বা নিওট্রপিক্যাল হাইল্যান্ড এলাকাগুলো যে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপে পড়েছে, এমন নয়। সেই সঙ্গে রয়েছে কয়লা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থের খনি এবং ক্রমবর্ধমান কৃষিকাজ। বোটানিস্ট মাউরিসিও দিয়াসগ্রানাদোস জানান, ‘এখানকার চাষীরা পারামোসে আগুন ধরিয়ে পরে সেখানে গরু চরানোর ব্যবস্থা করেন। পশুপালনের ফলে জমি, গাছপালা সবই বদলে যায়। যার ফলে পারামোসগুলো আরও কম পানি ধরে রাখতে পারে। গোটা পরিবেশ প্রণালীটা আর কাজ করে না।’
আন্ডিস পার্বত্য এলাকার বাসিন্দারা চিরকালই চাষবাস করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখানকার ছোট চাষীরা কলম্বিয়ার দরিদ্রতম মানুষদের অন্যতম। বোগোটার বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রকল্পটির কর্মীরা এই ছোট চাষীদের নিয়ে কাজ করছেন। তারা চাষীদের পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে চান। বোগোটার বোটানিকাল গার্ডেনের কর্মী সল লিনারেস বলেন, ‘আমাদের বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। চাষীরা তাদের চাষবাস ছেড়ে দেবেন না। কেননা সেটা তাদের জীবিকা- চাষের মাধ্যমেই তাদের অন্নসংস্থান হয়। কাজেই আমাদের একটা যৌথ নীতি উদ্ভাবন করতে হবে, যাতে চাষবাসও থাকে, আবার পানি সম্পদের সুরক্ষা হয়।’
পাহাড় থেকে আসা পানি দিয়েই রাজধানী বোগোটার মানুষদের প্রয়োজন মেটে। বোগোটার ৮০ লাখ মানুষ পারামোস থেকে আসা পানির উপর নির্ভর করেন। অপরদিকে বোগোটার বোটানিক্যাল গার্ডেন শুধু শহরের মাঝখানে একটি সবুজ মরুদ্যানই নয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কেন্দ্রও। বিজ্ঞানীদের চিন্তা হল পারামোসগুলোর সংরক্ষণ নিয়ে।
পাহাড়ি তুন্দ্রাতে পাওয়া যায় এমন প্রায় এগারো হাজার বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও গাছপালা নথিবদ্ধ করেছেন গবেষকরা। প্রতিদিনই নানা নতুন নমুনা আসে ল্যাবরেটরিতে। সেক্ষেত্রে গবেষণা কেন্দ্রের এই এয়ারকন্ডিশন করা কক্ষটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এখানে লুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের চারা তৈরি করা হয়- কিছুটা গবেষণা, আবার কিছুটা সংরক্ষণের জন্য। বেশির ভাগই আসে পারামোস থেকে। বোটানিস্ট বেলকিস পেরেস মার্তিনেস জানান, ‘ওষুধ তৈরিতে এসব গাছপালা কাজে লাগে, আবার খাদ্য হিসেবেও। আন্ডিস পার্বত্য অঞ্চলে এমন বহু উদ্ভিদ ও গাছপালা পাওয়া যায়, যেগুলো ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে কিনা তা আমাদের জানা না থাকলেও, সেগুলো আমাদের খাদ্যের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
গাছটিকে বলে ‘ক্রেস্টেড রোজ’ বা এস্পেলেশিয়া। গবেষণা পরিচালক দিয়াসগ্রানাদোস এগুলোর উপর নজর রাখেন। উদ্ভিদটি উচ্চ পার্বত্য এলাকায় তাপমাত্রার ওঠানামা অনায়াসে সামলে নিতে পারে, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এড়াতে অক্ষম।
দিয়াসগ্রানাদোস বলেন, ‘আমরা জানি, আগামী কয়েক বছরে আরও কয়েক প্রজাতির গাছপালা লোপ পাবে। এ গাছগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে কিভাবে রক্ষা করা যায়, আমরা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি।’
গাছপালার বৈচিত্র্যের বিচারে কলম্বিয়া বিশ্বের সমৃদ্ধতম দেশগুলোর মধ্যে পড়ে। গবেষকরা এখানে প্রায়ই নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ আবিষ্কার করেন। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের আশা, জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়ার ফলে এই মূল্যবান পরিবেশ বাঁচানো সম্ভব হবে। কেননা পারামোস হল কলম্বিয়ার কয়েক লাখ মানুষের জীবনাধার। সূত্র : যুগান্তর