মো. জাভেদ-বিন-এ হাকিম
কন্যা রবিতার বায়না, ‘আব্বু লিচু বাগানে যাব।’ বোন, ভাগ্নি আর ভাগ্নেদেরও একই সুর। ওদিক দিয়ে আবার দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের বন্ধুরা মৌসুমের শুরু থেকেই এ আবদার করছে। এ দিকে মৌসুমি ফল লিচুর দিনও প্রায় ফুরালো বলে। কী যে করি!
দ্রুত ফোন দিই কাপাসিয়ার মিয়ার বাজারের দেওয়ানা গ্রামের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের কাছে। তিনি অভয় দিয়ে জানালেন এখনো দুর্গাপুর ইউনিয়নের চাটার বাগ গ্রামের কিছু বাগানে লিচু রয়েছে।
বৃহস্পতিবার খোঁজ পাওয়ার পর শুক্রবার সকালেই ভোঁ-দৌড়। একপাল পোলাপান নিয়ে মাইক্রো ছুটছে কাপাসিয়ার পথে। খুব ভোরে রওয়ানা দেওয়ায় পথ ছিল ফাঁকা। সকালের হিমেল হাওয়া গায়ে জড়িয়ে মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাই দেওয়ানা গ্রামের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে, অধ্যক্ষ সাহেবের সখের বাংলোতে।
বিশাল বাংলোর চারপাশে নানা ফলের গাছ। নদীর হাওয়া আর গাছের ছায়া এ যেন কোনো স্বর্গপুরীতে প্রবেশ করলাম। গাছে গাছে ঝুলছে কাঁঠাল, নানা জাতের কাঁচা-পাকা আম, কলা। এছাড়াও আছে আনারস বাগান। ফ্ল্যাটে বন্দী থাকা কচি-কাঁচারা যেন আজ বাঁধনহারা।
বেশ কয়েক ঘণ্টা হৈ-হুল্লোর করার পর সবাই মিলে দুপুরের খাবার নিয়ে বসলাম। নদীর মাছ, দেশি মুরগি আর খাসির গোস্ত; সঙ্গে আম ডাল দিয়ে ভাত।
এরপর ছুটলাম লিচুর খোঁজে চাটার বাগে। পিচঢালা সরু পথের দু’পাশে গাছে গাছে ঝুলে আছে নানা বর্ণ আর আকৃতির যত কাঁঠাল। এ যেন কাঁঠালেরই রাজ্য। মাত্র ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাই চাটার বাগে। আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন সোহেল।
তিনি হাসিমুখে কুশলাদি বিনিময় করেই আমাদের নিয়ে এগোলেন বাগানের দিকে। মূল সড়ক থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটা-পথ। বাগানে ঢুকতেই বাচ্চারা ঝাঁপিয়ে পড়ল লিচু গাছের উপর। আসলে বাগানের ছোট সাইজের গাছগুলোতে প্রায় মাটি ছুঁয়ে এমনভাবে লিচু ঝুলছে যে বাচ্চারা নিজ হাতে লিচু পাড়ার সুযোগ পেয়ে বেজায় খুশি। এভাবে ফল খাওয়ার আনন্দ অন্যরকম। তাদের সাথে সাথে আমরাও লিচুর রসের মজা নিলাম। বাগান দেখা ও লিচু খাওয়া দুটোই চলল সমান তালে। মূল্য কোনো বিষয় না, আনন্দটাই মুখ্য; সুতরাং আপনিও সময় থাকতে চলে যান লিচু বাগানে।
লিচু বাগানের খোঁজ
আরও এক সপ্তাহ থাকবে কাপাসিয়ার চাটার বাগ গ্রাম ও ঈশ্বরদী উপজেলার লিচু বাগানের লিচু এবং আরও পনের দিন পর্যন্ত লিচু মিলবে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলাতে। তবে আগে থেকে পরিচিত কোনো বাগান মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে গেলে ভালো হয়। সূত্র : ইত্তেফাক