Skip to content

কাইক্ষ্যন ঝরনার পথে

Kaikhan-Chara

মোজতাবা নাদিম
বর্ষাকালে বান্দরবান সেজে ওঠে এক অপরূপ সাজে। বৃষ্টির কারণে পাহাড় বেয়ে নেমে আসে বেশ কিছু নাম না জানা নানা রকম ঝরনা। আর সৌন্দর্যকে উপভোগ করার জন্যই নানা প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে পাহাড়ে ছুটে যাওয়া। কিছুদিন আগে বর্ষাকালেই দেখা হলো সেসব ঝরনার ছুটে চলা।

কাইক্ষ্যন বান্দরবানে গহিনের এক ঝরনা। ভরা বর্ষায় অমিয়াখুমের রূপ দেখার আশায় চলে গেলাম বান্দরবান শহরে। সেখান থেকে লোকাল বাসে করে থানচি বাজারে পৌঁছাতে বেলা চারটার বেশি হয়ে গেল। থানচি বাজার থেকে পর্যটকদের নৌকা বের হওয়ার অনুমতি বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। দেরি হয়ে যাওয়ায়, ওই দিন রাতটা থানচি বাজারে পার করে পরদিন সকালে ইঞ্জিনচালিত পাহাড়ি নৌকা নিয়ে বের হয়ে গেলাম পদ্মঝিরির দিকে। বর্ষায় সাঙ্গু নদীর পানির স্রোত অনেক তীব্র। পদ্মঝিরিতে নেমে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য প্রায় আট ঘণ্টা হাঁটাপথ পাড়ি দিয়ে থুইসাপাড়া গ্রামে। হাঁটা শুরু করলাম ঝিরি পথে। চারপাশে নানা রকম পাহাড়, মেঘগুলো অনেক কাছে, আশপাশে এক অন্য রকম নির্জনতার মাঝে মাঝে ভেসে আসা পাখির ডাক, হাঁটতে হাঁটতে মেঘের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছি এ রকম নৈসর্গিক পরিবেশের সঙ্গে আমরা শহরের মানুষগুলো একেবারেই অপরিচিত।

ঝিরি শেষে শুরু হলো পাহাড়ি রাস্তা। পিচ্ছিল, কাদাময়, জোঁকের উপদ্রব—আমাদের পথচলা খুব একটা আরামদায়ক ছিল না। থুইসাপাড়া পৌঁছাতে আমাদের রাত হয়ে গেল। উঠে পড়লাম এক বাড়িতে। রাতের বেলা বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে কখন যে চোখের পাতা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, খেয়াল নেই। সকালে উঠে দেখি বৃষ্টি তখনো পড়ছে। টানা বর্ষণে রাস্তা অনেক বেশি পিচ্ছিল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই আমাদের অমিয়াখুমের পরিকল্পনাকে বাদ দিতে হলো। স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে জানতে পারলাম এই গ্রাম থেকে অল্প দূরেই আছে কাইক্ষ্যন ঝরনা, পথ খুব একটা কঠিন নয়। বের হয়ে গেলাম ওই দিকে।

Kaikhan-Chara2

থুইসাপাড়া থেকে দুটি পাহাড় পাড়ি দিলেই কাইক্ষ্যন ঝরনা। দ্বিতীয় পাহাড় থেকে নামার সময় হঠাৎ দেখলাম দূরে আরও দুটি ঝরনা। গাইডকে জানালেন ওই দিকের রাস্তাও চেনা আছে তাঁর। পাহাড় থেকে নেমে ঝিরিপথে প্রায় ২০ মিনিট হাঁটার পর দেখা গেল কাইক্ষ্যন ঝরনা।

বান্দরবানে বেশ কিছু ঝরনা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, এই ঝরনার রূপ সত্যি একটু আলাদা। কয়েক ধাপে পানি নেমে আসছে এর স্বচ্ছ পানি। বেশ কিছুক্ষণ সময় পার করে ছুটলাম কাইক্ষ্যন ঝরনা ২-এর দিকে। দুটি ঝরনা পাহাড় বেয়ে নামছে একসঙ্গে। পাহাড়ে উঠে দুটো পাহাড় পার হয়ে আবারও ঝিরির রাস্তা। এই পথটায় মানুষজন, পর্যটকদের আসা-যাওয়া একেবারে নেই বললেই চলে। ঝিরিতে নেমে ডালপালা কেটে আমাদের এগিয়ে যেতে হলো। কখনো বৃষ্টি হচ্ছে, কখনো মেঘ—আবার রোদ। এদিকের ঝিরিপথটা অনেক পিচ্ছিল। বেশ কয়েকবার আছাড় খেয়ে, পোকার কামড় সহ্য করে পৌঁছে গেলাম কাইক্ষ্যন ঝরনা ২-এ।

অমিয়াখুম না দেখার আফসোস আমাদের মিটিয়ে দিল কাইক্ষ্যনের এই দুই ঝরনা। একটা বিষয় বলে রাখা ভালো, অভিজ্ঞতা না থাকলে বৃষ্টির সময় পাহাড়ে না যাওয়াটাই উত্তম।

কীভাবে যাবেন
বান্দরবানে থেকে বাসে অথবা চান্দের গাড়িতে করে থানচি বাজার। সেখান থেকে গাইড সঙ্গে নিয়ে বিজিবির অনুমতি নিয়ে নৌকা ভাড়া করে পদ্মঝিরিতে যেতে হবে। সেখান থেকে থুইসাপাড়া বা জিনাপাড়ায়। এ ক্ষেত্রে থুইসাপাড়াই ভালো কারণ এই গ্রামে পানির ব্যবস্থা রয়েছে। থুইসাপাড়া থেকে স্থানীয় গাইডকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে কাইক্ষ্যন ঝরনা। সৌজন্যে: প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *