আনিকা জীনাত
শস্য রক্ষার জন্য কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার সেই প্রাচীনকাল থেকে। তবে যুক্তরাজ্যে কাকতাড়ুয়ার জনপ্রিয়তা এতটাই বেশি যে জুলাইয়ের শেষ থেকে আগস্টের শুরু পর্যন্ত কাকতাড়ুয়া নিয়ে উৎসবের আয়োজন হয় এখানকার অনেক গ্রামেই।
কাকতাড়ুয়া সাধারণত খড় আর কাঠ দিয়ে তৈরি হলেও যুক্তরাজ্যে আগে বালকরাই কাকতাড়ুয়ার ভূমিকা পালন করত। ব্যাগে পাথরের টুকরা ভরে তারা গমের ক্ষেতে যেত। ক্ষেতে পাখি বসলেই দুই হাত নাড়িয়ে ও পাথরের টুকরা ছুড়ে তারা ক্ষেত পাহারা দিত। ১৩৪৮ সালের ভয়াবহ প্লেগ রোগে গ্রেট ব্রিটেনের জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে এলে খামারিরা তাদের ক্ষেত পাহারা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ছেলেপুলে পেল না।
তাই বিকল্প হিসেবে বস্তায় খড় ভরে তার ওপর লাউ বা শালগম বসিয়ে দিত। খুঁটির ওপর ভর দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকত এই হাতে তৈরি পাহারাদার বা কাকতাড়ুয়াগুলো।
কাকতাড়ুয়ার দেশে
ব্রিটেনের শত শত গ্রামে কাকতাড়ুয়ার এই উৎসব মানেই রং, প্রাণের স্পন্দন ও আনন্দ। সেখানকার মানুষ বিভিন্ন ধরনের জিনিস দিয়ে কাকতাড়ুয়া বানিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে। গাছের গুঁড়ি, হাঁড়িপাতিল, গাছের ডাল, ভাঙা আসবাব, ছেঁড়াফাটা কাপড়-সব কিছুই ব্যবহার করা হয় কাকতাড়ুয়া বানাতে। তৈরির পর আশপাশের সবাইকে দেখানোর জন্য তা নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির বাগানে বা রাস্তায়।
একেকটি বাড়ির কাকতাড়ুয়া দেখতে হয় একেক রকম। কোনোটি বাগানে বসে চা খাচ্ছে তো কোনোটি গাড়ি ঠিক করছে। কোনোটি দেখতে আদুরে তো আবার কোনোটি ভয়ালদর্শন। ইচ্ছা করলে একসঙ্গে কয়েকটি কাকতাড়ুয়াও বানানো যায় এই প্রতিযোগিতায়। মূলত একেকটি থিমের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় এই কাকতাড়ুয়াগুলো। উৎসবটি সাধারণত পালন করা হয় মে থেকে জুলাইয়ের মধ্যে। কিন্তু কিছু কিছু শহরে তা পালন করা হয় আগস্টেও। তবে শহরভেদে এর জনপ্রিয়তার তারতম্যও লক্ষ করা যায়। মূলত বার্টন মিলস, ব্রমইয়ার্ড ও ফ্লামস্টিডের মতো শহরগুলোতে এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। প্রতিটি শহরের আলাদা আলাদা ওয়েবসাইটে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলে সেখানে। তবে অবাক করা ব্যাপার হলো, কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার শত শত বছরের পুরনো প্রথা হলেও যুক্তরাজ্যে এই উৎসবের বয়স মাত্র ২০ বছর। ছোটদের সঙ্গে বড়রাও যোগ দেয় নিছক আনন্দের এই উৎসবে। এখান থেকে পাওয়া অর্থ দান করা হয় বিভিন্ন সাহায্য সংস্থায়। সূত্র : কালের কণ্ঠ