তাওহীদ মামুন
কাগজের নৌকার কথা আমরা সবাই জানি। ছোটবেলায় কাগজ ভাঁজ করে অনেকেই তখন নৌকা বানিয়েছিও। বড়রাও এসব নৌকা বানিয়ে ছোটদের দেন। কাগজের ছোট ছোট নৌকা পেয়ে কতই না আনন্দ করে ছোটরা! তবে কাগজের যে নৌকা নিয়ে আমাদের আজকে আয়োজন তা কিন্তু মোটেও ছোট নয়। রীতিমতো যাত্রিবাহী নৌকা।
জার্মানির কয়েকজন শিক্ষার্থী কাগজের এধরনের নৌকা বানিয়ে আনন্দভ্রমণও সেরে ফেলেছে।
জার্মানির এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দশজন ছাত্রছাত্রী যা করে দেখাল, তা সত্যিই অবাক হওয়ার মতো।
গত বছর থেকে ব্রেমারহাফেনের মেরিটাইম মিউজিয়ামে কাগজ আর কার্ডবোর্ড নিয়ে নৌকা বানানো শুরু করেছিল তারা। সঙ্গে অবশ্য নৌকা তৈরিতে পারদর্শী আক্সেল ডোরমানও ছিলেন। তার তত্ত্বাবধানে ছাত্রছাত্রীরাই বেশির ভাগ কাজ করেছে। কষ্ট হয়েছে, সময়ও লেগেছে অনেক।
তৈরি শেষ হলে ক্রেনে উঠিয়ে নৌকাটি নিয়ে আসা হয় নদীতে। কারণ নৌকা বানিয়ে রেখে দিলে তো হবে না! ওরা কাগজ আর কার্ডবোর্ড দিয়ে নৌকাটা বানিয়েছে তো ভ্রমণের আনন্দ উপভোগের জন্য।
অবশেষে এলো সেই দিন। আক্সেল ডোরমান এবং মেরিটাইম মিউজিয়ামের কর্মকর্তা গেরো ক্লেমকে-কে সঙ্গে নিয়ে পাকা মাঝিদের মতো নৌকা ভাসালো দশজন কিশোর-কিশোরী।
এ নৌকাটি বানানোর পেছনে ছিল তিন বছরের পরিকল্পনা। কাগজের নৌকা আগেও বানানো হয়েছে। তবে সেগুলো ছিল ছোট এবং স্বল্পস্থায়ী। সপ্তাহখানেক পানিতে রাখার পর আপনা-আপনিই নৌকার নানা অংশ ভিজে খসে খসে পড়ত। এবারের নৌকা সেগুলোর চেয়ে বড়। শুধু তাই নয়, ৩ দশমিক ২০ মিটার দীর্ঘ এই নৌকা টিকবেও বেশি দিন।
গেরো ক্লেমকে আশা করছেন, তিন বছর অন্তত টিকবে এটি এবং মাঝে মাঝে এটা পানিতে ভেসেও বেড়াবে।
প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা নৌকাটি তৈরি করাটা ছিল বড় রকমের চ্যালেঞ্জের মতো। আক্সেল ডোরমান এবং গেরো ক্লেমকের নেতৃত্ব এবং প্রেরণায় সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফলও হয়েছে গোর্চ-ফোক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।
নৌকার কাঠামোর একটি অংশ অবশ্য কাঠ দিয়ে তৈরি। কারণ কাঠ একেবারেই ব্যবহার না করলে নৌকাটি মানুষের ওজনই নিতে পারত না। ব্যবহৃত ওই কয়েক টুকরো কাঠের বাইরে আর যা যা লেগেছে তা হলো- খবরের কাগজের ৯ হাজারটি পৃষ্ঠা এবং ৮০ টুকরো ধূসর রঙের কার্ডবোর্ড।
নৌকা তৈরির মূল কাজটা হয়েছে মেরিটাইম মিউজিয়ামের এই কক্ষে। এখানেই ৯ হাজার কাগজে আঠা লাগিয়ে লাগিয়ে দাঁড় করানো হয় মূল কাঠামো। কাগজের ৩৪টি স্তর আঠা দিয়ে লাগিয়ে তৈরি করা হয় নৌকাটি। তৈরি শেষে নির্ধারিত দিনে ক্রেন দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রেমারহাফেন শহরের নদীতে। আর তারপর সেই আনন্দভ্রমণ! সৌজন্যে : যুগান্তর