:: আ ন ম আমিনুর রহমান ::
কাঞ্চনজঙ্ঘার বুকে একঝাঁক ধূসর টি-টি পাখির একাংশ l লেখকভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলোর পাশে কংক্রিটের বেঞ্চিতে বসে হিমালয়ের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার (৮ হাজার ৫৮৬ মিটার) অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছি। অপেক্ষায় আছি সূর্যোদয়ে সূর্যের লাল আভা ওর সাদা দেহকে কতটা রাঙায় তা দেখব বলে। ঘড়িতে ঠিক ছয়টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সূর্যি মামা উঁকি দিতে শুরু করল। আর মামার লাল আভা কাঞ্চনজঙ্ঘাকেও রাঙাতে থাকল। প্রায় ২০ মিনিট ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে রাঙিয়ে ধীরে ধীরে সূর্য ওপরে উঠে গেল। ছুটলাম তেঁতুলিয়া থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের শালবাহান ইউনিয়নের তুলসিয়া বিলের দিকে অন্য রকম এক উদ্দেশ্য নিয়ে।
সকাল আটটা নাগাদ তুলসিয়া বিলে পৌঁছালাম। কাঞ্চনজঙ্ঘার এত ভালো ভিউ এখানে ছাড়া অন্য কোথা থেকেও দেখিনি! তুলসিয়া বিলে বহু প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখির যেন মেলা বসেছে। ঝাঁকে ঝাঁকে সরালি ও হট্টিটি একবার পানিতে ভাসছে তো পরক্ষণেই আকাশে উড়ছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন ওরা কাঞ্চনজঙ্ঘার বুকেই উড়ে বেড়াচ্ছে। অথচ তুলসিয়া বিল থেকে নেপাল ও সিকিম সীমান্তের কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব কম করে হলেও ১৮০ কিমি। কাঞ্চনজঙ্ঘার সামনে বিশাল যে পাহাড়টি দেখা যাচ্ছে তা হলো দার্জিলিংয়ের কার্সিয়াং পাহাড়, তুলসিয়া বিল থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৬১ কিমি। যাহোক, বহুবার চেষ্টা করে কাঞ্চনজঙ্ঘার বুকে পরিযায়ী এক প্রজাতির হট্টিটি পাখির ছবি তুলতে সমর্থ হলাম।
কাঞ্চনজঙ্ঘার বুকে উড়তে থাকা পরিযায়ী এই হট্টিটি পাখির নাম ধূসর টি-টি বা ধূসর-মাথা হট্টিটি। ইংরেজি নাম Grey-headed Lapwing বা Grey-headed Plover। Charadriidae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Vanellus cinereus।
বাংলাদেশে আবাসিক ও পরিযায়ী মিলে যে পাঁচ প্রজাতির হট্টিটি দেখা যায়, ধূসর টি-টি তাদের মধ্যে বৃহত্তম। দৈর্ঘ্যে ৩৪ থেকে ৩৭ সেন্টিমিটার ও ওজনে ২৩৬-১৯৬ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা-ঘাড়-গলা ও বুকের ওপরের অংশ ধূসর। পিঠ বাদামি। ডানার প্রান্ত-পালকের ওপর-নিচ কালো। ডানার নিচ, লেজতল ও পেট সাদা। লেজের পালক সাদা হলেও শেষ প্রান্ত কালো। চোখ লাল। ঠোঁট উজ্জ্বল হলুদ, যার আগা কালো। পা ও পায়ের পাতা উজ্জ্বল হলুদ। নখ কালো। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ বাদামি। কান-ঢাকনি ছাই-ধূসর।
ধূসর টি-টি সচরাচর দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি। এরা ধানখেত, পতিত জমি, স্যাঁতসেঁতে চারণভূমি, অল্প পানির বিলে বিচরণ করে। এদের সচরাচর বড় দলে দেখা যায়। তুলসিয়া বিলে যে দলটি দেখেছিলাম তাতে ২৫০-৩০০টি পাখি ছিল। এরা হেঁটে হেঁটে পোকামাকড়, কেঁচো ও শামুকজাতীয় প্রাণী খায়। ধীরে ডানা নেড়ে ওড়ে।
মে-জুন প্রজননকাল। ডিম পাড়ে ৪টি। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ২৮-২৯ দিন সময় লাগে। বাচ্চাগুলো বেশ ইঁচড়ে পাকা, দেহের ভেজা ভাব দূর হলেই দাঁড়িয়ে যায় ও দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। এক মাস বয়সে উড়তে শেখে ও বড় পাখির দলে যোগ দেয়। আয়ুষ্কাল প্রায় ৯ বছর। সৌজন্যে : প্রথম আলো