Skip to content

কাদাজলে সাঁতরানো

নাবীল অনুসূর্য
কনকনে ঠাণ্ডা পানি। আর পানির যে চেহারা, কাদাজল বললেও কম বলা হয়। সে পানিতে ডুব দিলে চোখে কিছু দেখতে পাওয়া যায় না। সাঁতারের মাস্ক না পরে সে জলে সাঁতরানোর প্রশ্নই ওঠে না। সাঁতারের সাজপোশাক, বিশেষত পায়ে লাগানোর পাখনাটাও ভীষণ দরকারি হয়ে পড়ে। তার পরই সে থকথকে কাদাজলে সাঁতরানো যায়। আর এমন জলেই কিনা বছরের পর বছর হচ্ছে সাঁতরানোর প্রতিযোগিতা! তাও আবার সাধারণ সাঁতরানো নয়, মাস্ক পরে তাতে স্নরকেল (নিঃশ্বাস নেওয়ার নল) লাগিয়ে সাঁতরানো। এই মাস্ক পরে সাঁতরানোর একটা কেতাবি নামও আছে-বগ স্নরকেলিং। আর প্রতিবছর সে সাঁতারের যে প্রতিযোগিতাটা নিয়ম করে বসে, তার নামও তাই ওয়ার্ল্ড বগ স্নরকেলিং চ্যাম্পিয়নশিপ।

Swim

অদ্ভুত এই প্রতিযোগিতার আসর বসে গ্রেট ব্রিটেনের ওয়েলসে। সেখানকার পাউস প্রদেশের ফ্লানউলটেড অঞ্চলে। ওখানে অবশ্য শুধু এই একটিই অদ্ভুত প্রতিযোগিতা হয়, এমন নয়। প্রতি দুই বছরে সেখানে বসে ওয়ার্ল্ড অলটারনেটিভ গেমসের আসর। আর তাতেও থাকে এই বগ স্নরকেলিং। সঙ্গে আরো থাকে ম্যান ভার্সেস হর্স, ওয়োর্ম চার্মিং, হাইড অ্যান্ড সিক বা লুকোচুরি, স্নেইল রেসিং বা শামুক দৌড়, মাউন্টেইন বাইক বগ স্নরকেলিং, ওয়ার্ল্ড বাথটাবিং চ্যাম্পিয়নশিপ, ফিঙ্গার জস্টিং বা আঙুলের লড়াই, রক পেপার সিজারের মতো অদ্ভুত সব খেলা।

আসলে অনেক আগে থেকেই এই শহরে পর্যটকদের আনাগোনা ছিল। ১৭৩২ সালে রেভারেন্ড থিওফিলাস ইভান্স এখানে একটা কুয়া আবিষ্কার করেন। সেই কুয়ার জলের নাকি ঔষধি গুণ ছিল। মানে, সে জল খেলে, গোসল করলে শরীর-স্বাস্থ্য ভালো থাকত। আর সে কুয়ার জলের লোভেই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এখানে আসত। পরে একসময় কুয়াটা মজে গেল। তখন পর্যটকদের আনাগোনায়ও ভাটা পড়ল। আর সেই ভাটাপড়া রোধ করতেই শহরটিতে এ ধরনের অদ্ভুত সব খেলাধুলার প্রতিযোগিতার প্রচলন করা হয়। সেটা গত শতকের আশির দশকের কথা।

তখন থেকেই প্রতিবছরের আগস্ট মাসে এখানে বসে ওয়ার্ল্ড বগ স্নরকেলিং চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। আর তাতে ব্রিটেনের বিভিন্ন অঞ্চলের তো বটেই, অংশগ্রহণ করেন বাইরে থেকে আসা প্রতিযোগীরাও। গত বছর অংশগ্রহণকারীরা ব্রিটেন ছাড়াও এসেছিলেন ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, সুইডেন, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আমেরিকা, হংকং এবং মালি থেকে। এখানে সাঁতরাতে খুব বেশি যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হয় না। স্রেফ বয়স ১৪ বছরের বেশি হলেই চলে। এমনকি সবাইকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে হয় না। যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাঁদের সাঁতরাতে হয় ১২০ গজ। আর যাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা নেই, কেবল মনের খুশিতে নাম লেখান, তাঁদের ৬০ গজ সাঁতরালেই চলে। তাঁরা চাইলে ইচ্ছামতো সেজেও আসতে পারেন। প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে যিনি আগে সাঁতার শেষ করেন, স্বাভাবিকভাবে বিজয়ী হন তিনিই। আর যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন না, তাঁদের মধ্যে যাঁর সাজপোশাক সবচেয়ে ভালো হয়, তিনি জিতে নেন সেরা ফ্যান্সি ড্রেসের পুরস্কার।

Advertisement

তবে ৬০ গজ কি ১২০ গজ, যে দূরত্বই সাঁতরাতে হোক, সে কিন্তু সহজ কর্ম নয়। একে তো ঘোলা কাদাজল, তার ওপর দূরত্বটাও নেহাত কম নয়। ওখানে কাদাজলে ভরা ৬০ গজের দুটি নালা আছে। প্রথম নালাটা পাড়ি দেওয়া তুলনামূলক সহজ। ওটা সবাইকেই পাড়ি দিতে হয়। পরেরটুকু কেবল প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য। ওটা গভীরও বেশি। আর স্রেফ আনন্দ করার জন্য আয়োজিত হলেও এই প্রতিযোগিতায়ও কিন্তু বেশ কিছু নিয়মকানুন আছে। প্রতিযোগীরা মাস্ক, চশমা, ফ্লিপার আর স্নরকেল ছাড়া আর কোনো সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারবেন না। ফ্লিপার বা পাখনা দুই পায়ের আলাদা হতে হবে। জোড়া লাগানো পাখনা চলবে না। বুকসাঁতার, বাটারফ্লাই সাঁতারও চলবে না। চলবে না কাদা ঠেলে ঠেলে হেঁটে যাওয়া। সাঁতার কাটতে নেমে অবশ্যই পাখনার সাহায্যে এগোতে হবে।

এ বছর ওয়ার্ল্ড বগ স্নরকেলিং চ্যাম্পিয়নশিপের ৩০তম আসর বসতে যাচ্ছে। অংশগ্রহণকারীদের নিবন্ধনের কাজও শেষ। আজ ৩০ আগস্টই হবে প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগীরা মুখে মাস্ক পরে, তাতে স্নরকেল লাগিয়ে, পায়ে ফ্লিপার পরে সাঁতরাবে ওয়েলসের পাউসের ভীষণ ঘোলা কাদাজলের নালায়। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *