গোলাম সারোয়ার সম্রাট
ঠাকুরগাঁও শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে জামালপুরে রয়েছে মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন জমিদারবাড়ির প্রাচীন মসজিদ। প্রায় ২৩০ বছরের পুরনো এ মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজো।
মসজিদটির শিল্পকলা দৃষ্টিনন্দিত ও মনোমুগ্ধকর। মসজিদে বড় আকৃতির তিনটি গম্বুজ আছে। গম্বুজের শীর্ষদেশ কাচ পাথরের কাজ করা। এই মসজিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এর মিনারগুলো। মসজিদের ছাদে আটাশটি মিনার আছে। একেকটি মিনার ৩৫ ফুট উঁচু এবং প্রতিটিতে আছে নকশা। গম্বুজ ও মিনারের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য। এত মিনার সচরাচর কোনো মসজিদে দেখা যায় না। মসজিদটির চারটি অংশ হলো মূল ক, মূল করে সাথে ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা এবং ছাদবিহীন বারান্দাটি অর্ধ প্রাচীরে বেষ্টিত যার পূর্বাংশে মাঝখানে চার থামের ওপর ছাদবিশিষ্ট মূল ফটক। খোলা বারান্দার প্রাচীরে এবং মূল ফটকের ছাদে ছোট ছোট মিনারের অলঙ্কার রয়েছে। মূল করে বাইরের দিকের মাপ হচ্ছে ২৯x৪৭ ফুট এবং ছাদবিহীন বারান্দার মাপ ২১x৪৭ ফুট। মূল করে কোণগুলো তিন থামবিশিষ্ট। এর জানালা দু’টি, দরজা তিনটি, কুলুঙ্গি দু’টি। মসজিদটির ভেতরে দরজায়, বারান্দায় এবং বাইরের দেয়ালগুলোতে প্রচুর লতাপাতা ও ফুলের সুদৃশ্য নকশা রয়েছে। ভারতের উত্তর প্রদেশের হংসরাজ এবং তার পুত্র রামহিৎ মসজিদটির মূল কারিগর। দ্বারভাঙা এলাকার কারিগরেরাও নির্মাণকাজে অংশ নেন। মসজিদটি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক লোক এসে ভিড় জমায়।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে ১৭৮০ সালে জমিদার আবদুল হালিমের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয় এই মসজিদ। তিনি এই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করলেও পূর্ণাঙ্গ মসজিদ দেখে যেতে পারেননি।
জমিদার আবদুল হালিম ১৭৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইন্তেকাল করেন। মারা যাওয়ার পর জমিদারির দায়িত্ব পান নূর মোহাম্মদ চৌধুরী। তিনি জমিদারির দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পর আবার মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন এবং দীর্ঘ ২১ বছর নিখুঁতভাবে কাজ চালানোর পর ১৮০১ সালে ঐতিহ্যবাহী কারুকার্যময় জমিদারবাড়ি মসজিদের কাজ সমাপ্ত হয়।
জমিদার নূর মোহাম্মদ চৌধুরীর ইন্তেকালের পর এই মসজিদ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পড়ে জমিদার এমদাদুর রহমান চৌধুরী, জমিদার করিম উদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী ও জমিদার বদিউদ্দীন আহম্মদ চৌধুরীর ওপর। সর্বশেষ জমিদার বদিউদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী এলাকায় সর্বাধিক আধ্যাত্মিক বুজর্গ বলে পরিচিতি লাভ করেন। বিভিন্ন আপদ-বিপদে ভক্তরা তার কাছে ছুটে আসতেন পরামর্শ ও নসিহত গ্রহণ করতে।
দর্শনার্থী রেজাউল করিম, সোলেমান আলী, রোকসানা আক্তারসহ অনেকে জানান, মসজিদটি দেখতে অনেক সুন্দর। মসজিদটির চার দিক অপরূপ সুন্দর। সুযোগ পেলেই তারা এই মসজিদ দেখতে চলে আসেন। তারা আরো জানান, একবার এই মসজিদটি দেখলে মনে হয় যেন বারবার দেখি।
জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দবিরুল ইসলাম জানান, ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ দেখার জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থী আসেন। তিনি আরো জানান, ১৮০১ সালে মসজিদটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত কোনো সংস্কার করা হয়নি। ঐতিহ্যবাহী মসজিদ সংস্কার করার জন্য তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান। সূত্র : নয়া দিগন্ত