: গোলাম কিবরিয়া ও মিজানুর রহমান, কুয়াকাটা থেকে :
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাগর সৈকত কুয়াকাটায় আগামীকাল শনিবার থেকে ‘বিচ কার্নিভাল’ শুরু হচ্ছে। এ আয়োজনকে ঘিরে সাময়িকভাবে হলেও কুয়াকাটায় এখন উৎসবের আমেজ। কাল বেলা সকাল ১১টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এ উৎসবে লাখো পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।
পর্যটন নগরী কুয়াকাটা বাংলাদেশের এক অপার সম্ভাবনার স্থান। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় দিন দিন বেড়ে চলছে পর্যটকদের সংখ্যা। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য অবলকন করার বেলা ভূমি কুয়াকাটাকে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে এই মেগা বিচ কার্নিভালের আয়োজন। এ অনুষ্ঠানকে সফল করতে সংশ্লিষ্টরা পার করছেন ব্যস্ত সময়।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, পর্যটন মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এ উৎসবকে ঘিরে হাতে নেয়া হয়েছে নানা কর্ম পরিকল্পনা। বার বার হয়েছে প্রস্তুতিমূলক সভা। পাশাপাশি সহযোগিতা নিয়ে পাশে থাকছে কুয়াকাটা পৌরসভা, কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ, ট্যুরিজম বোর্ড, মালিক ও হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। কুয়াকাটাকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার এক দুর্লভ সুযোগ পাচ্ছে পর্যটনপ্রেমী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তাই এ সুযোগ কেউ হাতছাড়া করতে চাচ্ছেন না।
ট্যুরিজম বোর্ড ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন আশা করছে, এ উৎসবকে কেন্দ্র করে অন্তত: একলাখ মানুষের সমাগম হবে। তবে এ বিপুলসংখ্যক মানুষকে আবাসন সুবিধা দেয়ার বিষয়টি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। কারণ বর্তমানে এখানে আবাসন সুবিধা রয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার মানুষের। এই সুযোগে কতিপয় অসাধু হোটেল ব্যবসায়ী পর্যটকদের পকেট কাটতে তৎপর হয়ে ওঠেছে।
সৈকতের পূর্ব ও পশ্চিম অংশে শুরু হয়েছে সীমানা নির্ধারণ ও প্রস্তুতির কাজ। সৈকতের পশ্চিম পাশে মূল মঞ্চের কাজ শেষ পর্যায়ে। এ মঞ্চে হবে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতার জন্য বেছে নেয়া হয়েছে সৈকতের পূর্বাংশ। জলকেলি, হা-ডু-ডু ও ফুটবলসহ ১৭ ইভেন্টের খেলাধূলা ওই অংশে হবে বলে জানিয়েছে আয়োজক কমিটি। এ ছাড়া ‘বেজ ক্যাম্প বাংলাদেশ’ আয়োজন করতে যাচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী এক ইভেন্ট। এই ইভেন্টে থাকছে ট্রি টন এ্যাকটিভিটি, ক্যাম্প গ্রাউন্ড, ক্যাম্প ফায়ার, হিউম্যান ফুসবল, বারবি কিউ প্রোগ্রাম ও এ্যাডভেঞ্চার। বীচ কার্নিভালের প্রচারণার লক্ষ্যে একদল সাইক্লিস্ট ১৩ জানুয়ারি ঢাকা থেকে ব্যানার ফেস্টুনসহ র্যালি নিয়ে কুয়াকাটায় এসে বিচ কার্নিভালে যুক্ত হবেন বলে জানান বেজ ক্যাম্প বাংলাদেশের সহকারী ম্যানেজার সিরাজুল মুস্তাকিম।
সৈকতের উভয় অংশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সাজানো হয়েছে সারিবদ্ধভাবে। একাধিক সারির মাঝ বরাবর রয়েছে ছোট ছোট গলি। দু’পাশে পসরা সাজিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া পর্যটকদের চেয়ার-ছাতাগুলো সৈকতের নির্দিষ্ট পয়েন্টে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সৌন্দর্য বাড়াতে ওগুলো সারি করে সাজিয়ে রেখেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
এদিকে কার্নিভাল উপলক্ষে কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে সৈকত পর্যন্ত বিজলি বাতির আকর্ষণীয় সাজ লক্ষ্য করা গেছে। উৎসবের প্রস্তুতি দেখতে ভীড় জমিয়েছে স্থানীয় লোকজন। নয়নাভিরাম আলোক সজ্জা দেখে আনন্দে মেতে ওঠেছে এলাকাবাসীসহ আগত পর্যটকরা। পর্যটকদের সুষ্ঠু ভ্রমণ সেবায় প্রস্তুত আছে কুয়াকাটার টুর অপারেটরগুলো। তাছাড়া নৌপথে নিরাপদ ভ্রমণে পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে স্থানীয় ট্যুরিজম বোট মালিক সমিতি।
তিনদিনব্যাপী এ উৎসবে বেইজক্যাম্প বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। বেইজক্যাম্পের পক্ষ থেকে ‘কুয়াকাটা বিচ কার্নিভাল’ এর উদ্দেশে ১২ জানুয়ারি ভোর ৬টায় ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরু করেছে পাঁচ জন সাইক্লিস্ট। সাইক্লিস্ট শাহজালাল নোমানের নেতৃতে জিয়াউল ইসলাম, আদনান হোসেইন, গোলাম রহমান ও মাহাদি হাসান এই যাত্রায় অংশ গ্রহণ করছেন। যাত্রার শুরুতে তাদের হাতে ফেস্টিভ্যাল ও বেইজক্যাম্পের পতাকা তুলে দেন বেইজক্যাম্প বাংলাদেশ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক স্পন্দন। এসময় বেজক্যাম্পের ডিরেক্টর এস, এম মোবাশ্বের হুসেইন ও তারিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। আগামীকাল তারা উৎসবস্থলে পৌঁছবেন।
এ উৎসব উপলক্ষে উপকূলের বিভিন্ন দর্শনীয় স্পটগুলোতে পড়েছে ইতিবাচক প্রভাব। লাখো পর্যটকের বিচরণে মুখরিত হয়ে ওঠবে ওই স্পটগুলো এমন প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছে পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীরা। তাই কুয়াকাটার বাউলি বন, গঙ্গামতির ঝাউবন, লাল কাকড়ার চর, শুঁটকি পল্লী, লেম্বুর চর, আন্ধারমানিক নদীর মোহনা, সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল খ্যাত ফাতরার বন, বৌদ্ধ মন্দির, সাবমেরিন কেবল স্টেশনসহ অন্য স্পটগুলো হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের।
এছাড়াও কুয়াকাটার রামনাবাদ চ্যানেলে ‘পায়রা সমুদ্র বন্দর’ বিশেষ আকর্ষণ নিয়ে যুক্ত হয়েছে এ পর্যটন অঞ্চলে।
অপরদিকে কুয়াকাটায় বিচ কার্নিভাল সফল করতে প্রস্তুতিমূলক সভায় স্থানীয় প্রশাসন গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। কুয়াকাটাকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রশাসনের এমন ভূমিকা সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের লোকজনকে হতাশ করেছে।
উপরন্তু এ উপমহাদেশে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার বিরল সুযোগের এ পর্যটন কেন্দ্রটি বিদেশীদের কাছে আকর্ষণীয় করতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ আশপাশের এলাকাগুলোর নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের আহ্বান জানান হয়েছে ট্যুরে অপারেটরদের তরফ থেকে। পর্যটন কেন্দ্রটিতে বর্তমানে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ, নৌপুলিশ ও টুরিস্ট পুলিশের ত্রিমুখী নজরদারীর মধ্যেই পর্যটকগণ নানা হয়রানিসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর ফসিউর রহমান বলেন, বিচ কার্নিভাল উপলক্ষে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে তাদেরকে মোতায়েন রেখে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেস্টনী গড়ে তোলো হবে।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও বিচ কার্নিভাল আয়োজক কমিটির সভাপতি এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দিকী বলেন, সারা বিশ্বে কুয়াকাটাকে হাইলাইট করতে এ উৎসবের আয়োজন। সফলভাবে এ উৎসব সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।