Skip to content

ক্যান্সারমুক্ত জীবনের জন্য যা প্রয়োজন

অধ্যাপক ডা: জি এম ফারুক
প্রতি বছরের মতো এ বছরও বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার দিবস পালিত হয়েছে ৪ ফেব্রুয়ারি। গত বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় : Not beyond us, মানে আমরাই পারি রুখতে। এর আগের বছরের বিষয় ছিল Debunk the myths বা কুসংস্কার পরিহার করুন। ২০১৬ সালের বিষয় : We can, I can.

ক্যান্সার মানবজাতির জন্য একটি অভিশাপ। এ অভিশাপের পরিসমাপ্তির চেষ্টা চলছে বিশ্বজুড়ে। চিন্তা, চেতনা, গবেষণা এবং জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তনের মাধ্যমে বিশ্ব এখন ক্যান্সার জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্যান্সার রোগের কারণের সাথে জড়িত রয়েছে খাবারদাবার (৩৫%), ধূমপান (৩০%), সংক্রমণ (১০%), যৌনসংক্রান্ত (৭%), পেশাগত দূষণ (৪%), অ্যালকোহল (৩%), পরিবেশ দূষণ (২%), ওষুধ বা চিকিৎসা বিভ্রান্তি (১%)। তাহলে দেখা যাচ্ছে, খাবারদাবার ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমেই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমাদের ইচ্ছাশক্তি এবং ইতিবাচক চিন্তাধারাই পারে ক্যান্সারকে জয় করতে।

Cancer-Cell-Culture

ক্যান্সারমুক্ত জীবনের জন্য যা প্রয়োজন
ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, ক্যান্সারের সাথে জীবনযাত্রার যোগসূত্র রয়েছে। আপনার খাবার, পানীয়, বায়ু গ্রহণ এবং ধূমপানের মতো অভ্যাসের সাথে রয়েছে ক্যান্সারের সম্পর্ক এবং আপনার প্রতিদিনের জীবনযাত্রার পরিকল্পনাই আপনাকে ক্যান্সারমুক্ত জীবনের সুসংবাদ দিতে পারে, যদি আপনি আপনার জীবনকে ঢেলে সাজাতে পারেন এভাবে :

(১) অধিক হারে টাটকা শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন : বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছেÑ সবুজ, হলুদ ও পাতাজাতীয় শাকসবজি অন্ত্র, পায়ুপথ, প্রোস্টেট, পাকস্থলী, শ্বাসযন্ত্র, স্তন এবং জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। এ জন্য বাঁধাকপি ও ফুলকপি বেশি উপকারী।

(২) অধিক আঁশজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন : অধিক আঁশজাতীয় খাবার অন্ত্র ও পায়ুপথ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এ জন্য লাল আটা, গম, চাল, শস্যদানা, ভুট্টা, গোলআলু, মটরশুঁটি, কিশমিশ, আপেল, কমলা, টমেটো ইত্যাদি খাবার অধিক গ্রহণে ক্যান্সার প্রতিরোধ হতে পারে।

(৩) ভিটামিন ‘এ’জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করুন : মুখ, অন্ননালী, শ্বাসনালী, পাকস্থলী, অন্ত্র, পায়ুপথ, প্রস্রাবথলি এবং জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে ভিটামিন ‘এ’জাতীয় খাবার, যেমনÑ ডিমের কুসুম, দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, কলিজা, টাটকা ফলফলাদি এবং সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। মনে রাখবেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ার চেয়ে ভিটামিন ‘এ’সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ অধিক উত্তম।

(৪) ভিটামিন ‘সি’ জাতীয় খাবার অধিক গ্রহণ করুন : ভিটামিন ‘সি’ যেসব অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে; তার মধ্যে রয়েছে মুখ, অন্ননালী, অন্ত্র, পাকস্থলী পায়ুপথ ও জরায়ুমুখ। ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে আমলকী, আমড়া, আম, পেয়ারা, ফুলকপি, কমলা, লেবু, কাঁচামরিচ, পেঁপে, টমেটো ইত্যাদি।

(৫) শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন : মোটা মানুষের অন্ত্র, জরায়ু, পিত্তথলি ও স্তনের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এ জন্য নিয়মিত ব্যায়াম (হাঁটার অভ্যাস বেশ উপকারী) এবং অধিক ক্যালরি যুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।

প্রতিদিনের জীবন থেকে পরিহার করুন : (১) উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন : চর্বিযুক্ত খাবার স্তন, অন্ত্র ও প্রোস্টেটের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করুন। (২) ধূমপান থেকে বিরত থাকুন : ধূমপানে সর্বাধিক ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। ফুসফুস এবং মূত্রথলির ক্যান্সারের প্রধান কারণ ধূমপান। (৩) পান, জর্দা, তামাক সেবন বন্ধ করুন : মুখ, মাঢ়ি ও গলনালী ক্যান্সার প্রতিরোধে পান, জর্দা, তামাক সেবন বন্ধ করুন। (৪) মদপানে বিরত থাকুন : লিভার ক্যান্সার ও সিরোসিস প্রতিরোধে অবশ্যই মদপান থেকে বিরত থাকুন। (৫) আচার, কাসুন্দি, শুঁটকি ও লবণ দেয়া মাছ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন : কারণ এর দ্বারা অন্ননালী এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে।

ক্যান্সারের সাতটি সতর্ক লক্ষণ : (১) পায়খানা-প্রস্রাবের অভ্যাসের পরিবর্তন; (২) কোনো ক্ষত না শুকানোর প্রবণতা; (৩) অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ; (৪) স্তনে কোনো শক্ত দলা অথবা শরীরের অন্য কোনো জায়গায় শক্ত পিণ্ড বর্তমান থাকা; (৫) পেটের অজীর্ণতা কিংবা ঢোক গিলতে অসুবিধা; (৬) আঁচিল বা তিলের অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন; (৭) বিরক্তিকর অবিরত কাশি কিংবা গলা বসে যাওয়ার প্রবণতা।

নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ করুন : ক্যান্সার নির্ণয়ে নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ জরুরি। বছরে অন্তত একবার মেডিক্যাল চেকআপ হওয়া আবশ্যক। কোনো কারণে ক্যান্সার বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয় : (১) শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা; (২) প্রতিদিন ব্যায়াম করা কিংবা এক ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস; (৩) কোমলপানীয় ও চিনিসমৃদ্ধ পানীয় বর্জন করা; (৪) লাল গোশত (গরু, ছাগল, মহিষ) এবং কৃত্রিমভাবে সংরক্ষিত খাবার পরিহার করা; (৫) উদ্ভিজ্জ খাবার ও ফলফলাদি বেশি বেশি খাওয়া; (৬) মদপান বর্জন করা; (৭) ধূমপান, তামাক, জর্দা, সাদাপাতা ইত্যাদি তামাকজাতীয় দ্রব্য পরিহার করা; (৮) মানসিক চাপমুক্ত থাকা; (৯) আগুনে ঝলসানো মাছ, গোশত, গ্রিল, শিক কাবাব এড়িয়ে চলা; (১০) ইতিবাচক চিন্তা করা; (১১) ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা; (১২) সমাজের উপকারী কাজ বেশি বেশি করা; (১৩) বেশি বেশি ওষুধ সেবন সম্পর্কে সতর্ক থাকা; (১৪) রঙমিশ্রিত খাবার পরিহার করা; (১৫) নিয়মিত মধু সেবন করা।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক ক্যান্সার সোসাইটি, রোড-১১, বাড়ি-৩৮, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯।
ফোন : ০১৭১২৮১৭১৪৪। সৌজন্যে : নয়া দিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *