ক্রমশ দীর্ঘমেয়াদী খরা পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া। পানিশূন্যতা রোধে ক্যালিফোর্নিয়ার অধিবাসীদের কমাতে হচ্ছে পানির ব্যবহার। গোটা রাজ্যে পরিস্থিতি এমন যে, পানির জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে অবিরত। কিন্তু এই পানিশূন্যতার জন্য দায়ি যে শিল্প তার বিরুদ্ধে কোনো কথাই বলা যাচ্ছে না। কারণ এই শিল্পের উপর নির্ভর করে ক্যালিফোর্নিয়ার স্থানীয় অর্থনীতি। বিশ্বের মোট আলমণ্ড চাহিদার ৮০ শতাংশই পূরণ হয় ক্যালিফোর্নিয়া থেকে।
তবে সম্প্রতি বাধ্য হয়েই ক্যালিফোর্নিয়ার কয়েকটি সংগঠন আলমণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, বিশ্বের আলমণ্ড বাদাম চাহিদা মেটানোর জন্য তারা নিজেরা পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ একটি আলমণ্ড বাদামের জন্য প্রায় এক গ্যালন পানি দরকার। ক্যালিফোর্নিয়ার যে পানি দরকার তার ১০ শতাংশ শুধু এই আলমণ্ড চাষেই ব্যয় হয়। গোটা লসঅ্যাঞ্জেলস শহরে যে পানি লাগে তা ক্যালিফোর্নিয়ায় শুধু আলমণ্ড চাষেই ব্যবহৃত হয়। যদিও আলমণ্ড চাষীরা এই পরিসংখ্যানকে তাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা হিসেবে বলছেন। চাষীদের ভাষ্য মতে, একটি আলমণ্ডের পেছনে এক গ্যালন পানি লাগে এই কথা মানতে নারাজ তারা। বাস্তবে পানির পরিমান আরও অনেক কম লাগে বলেও তারা দাবি করেন।
গোটা যুক্তরাষ্ট্রের ফল চাহিদার প্রায় অর্ধেকই পূরণ করে ক্যালিফোর্নিয়া। রাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার কৃষি বিষয়ক অধ্যাপক রিচার্ড হাওয়িত অবশ্য জানান যে, খরা পরিস্থিতির জন্য শুধুমাত্র একটি ফসলকে দায়ি করা মোটেও কাজের কথা নয়। আলমণ্ড বাজারে খুব ভালো চলে এবং মানুষ এই বাদাম পছন্দও করে। বাদাম উৎপাদনে অনেক পানির দরকার হয়, কিন্তু অন্যান্য অনেক ফল উৎপাদনেও অনেক পানির প্রয়োজন হয়।
বিগত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষদের মধ্যে আলমণ্ড বাদাম খাওয়ার প্রবনতা অনেক বেড়েছে। আর এই আলমণ্ড থেকেই জনপ্রিয় খাবার পিন্যাট তৈরি করা হয়। পাশাপাশি মানুষের স্থুলতা, ডায়াবেটিক এবং আর্থাইটিস, ক্যান্সার ও আলঝেইমারের ঝুঁকি কমাতেও আলমণ্ডের বিশেষ অবদান রয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুধু প্যাকেট ভর্তি নয়, উল্টো জারভর্তি আলমণ্ড বিক্রি হয়। এছাড়াও শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যও আলমণ্ডের দুধ খুবই দরকারি।
ক্যালিফোর্নিয়ায় উৎপাদিত আলমণ্ডের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই বিদেশে রপ্তানি হয়, বিশেষত চীনে। এবিসি’র দেয়া এক রিপোর্টে দাবি করা হয়, গত বছর ক্যালিফোর্নিয়া শুধু আলমণ্ড বিক্রি করেই ১১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা রাজ্যের অন্যান্য অর্থকরী সকল ফসলের মূল্যমানের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ায় টানা চার বছর ধরে খরা চলছে। খরা পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজ্যের গর্ভণর জেরি ব্রাউন সকল অধিবাসীকে ২৫ শতাংশ পানি কম খরচ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে অনেক সাধারণ অধিবাসীর দাবি, জনসাধারণ এই আহ্বান মেনে নিলেও আলমণ্ড চাষীরা তা মানছে না। সূত্র : বাংলামেইল