উম্মে হানি কণা
আয়নার সামনে দাঁড়ালে বোঝা যায় বয়সের তুলনায় চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ। বার্ধক্যের কারণ হিসেবে অতিরিক্ত মানসিক চাপ আর উদ্বিগ্নতাকে দায়ী করে থাকি। কিন্তু খাবারেও যে বার্ধক্য আসতে পারে তা চিন্তাই করতে পারি না। জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু খাবার সম্পর্কে যা আপনার তারুণ্য ধরে রাখতে পারে অথবা বাড়িয়ে দিতে পারে বয়স।
যে খাবার বার্ধক্য ডেকে আনে…
মিষ্টি : আমরা অনেকেই মিষ্টি বিলাসী। মিষ্টি পেলে অন্য সব ভুলে যাই। নিঃসন্দেহে এটি খুব খারাপ খবর। কিন্তু বাঁচতে হলে জানতে হবে। তাই অতিরিক্ত মিষ্টি এড়িয়ে চলাই ভালো। মিষ্টি শরীরের গ্লাইসেশন বাড়ায়। শরীরের কোষ যে পরিমাণে মিষ্টি গ্রহণ করতে পারে, তার থেকে বেশি মিষ্টি প্রোটিনের সঙ্গে মিলে অ্যাডভান্সড গ্লাইসেশন অ্যান্ড প্রোডাক্ট তৈরি করে। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে চেহারায় চলে আনবে বার্ধক্যতা।
মদ : মদ এমনিতেই খারাপ। তারপরও আমরা অনেকেই মদের নেশায় আসক্ত হয়ে থাকি। শরীরকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখার জন্য রহস্য লুকিয়ে থাকে সুস্থ লিভারে। অতিরিক্ত মদপান করলে লিভারে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। যার ফলে অসুস্থ লিভারে আপনার তারুণ্য হারিয়ে অচিরেই ত্বকে বাসা বাঁধে বার্ধক্যতা। অতিরিক্ত মদপানের প্রভাবে চুল পড়া, রিঙ্কল এবং ত্বক হয়ে ওঠে নির্জীব।
হোয়াইট ওয়াইন : অতিরিক্ত হোয়াইট ওয়াইনও আপনার তারুণ্য নষ্ট করতে পারে। এটি মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করলে আপনাকে বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক দেখায়। এ ছাড়া হোয়াইট ওয়াইন এনামেল নষ্ট করে দাঁতেরও ক্ষতি করে। এতে আপনার দাঁত উজ্জ্বলতা হারিয়ে হলুদে হয়ে যায়।
অতিরিক্ত লবণ : আমরা অনেকেই লবণ ছাড়া খাবার খেতে পারি না। যাদের এই অভ্যাসটি আছে তারা অচিরেই খাবারে অতিরিক্ত লবণের অভ্যাস ত্যাগ করুন। এ ছাড়া কাঁচা লবণ শরীরে পানি জমতে থাকে। দেখতে ফোলা ফোলা লাগে।
লাল মাংস : লাল মাংস খেতে অনেক সুস্বাদু হয়। তাই বলে কি শরীরের ক্ষতি করে? আমাদের অনেকেরই জানা নেই যে, অতিরিক্ত লাল মাংস শরীরে ফ্রি র্যাডিকলসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে ত্বক স্বাভাবিকভাবে কোলাজেন তৈরি করতে পারে না এবং ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে যায় সহজেই।
ক্যাফেন : ক্যাফেন এমনিতেই ত্বককে রুক্ষ করে তোলে। তার ওপর অতিরিক্ত ক্যাফেন শরীরের স্বাভাবিক ময়েশ্চার নষ্ট করে দেয়। এতে ত্বক স্বাভাবিকভাবেই শুষ্ক হয়ে যায়। আপনার ত্বকে তখন বার্ধ্যক্যের ছাপ পড়ে যায়।
কার্বোহাইড্রেট : আপনার দেহে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করার ফলে ত্বকের কোলাজেন এবং ফাইবার ইলাস্টিসিটি খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ খুব তাড়াতাড়ি পড়ে যায়। তাই খাবারে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলুন।
তারুণ্য ধরে রাখতে যা খাবেন…
তারুণ্য ধরে রাখতে আর ত্বকের বার্ধক্যতা এড়াতে সবসময় শাকসবজি ও ফলমূল খেতে পারেন।
সামুদ্রিক মাছ : সামুদ্রিক মাছ শরীর গঠনে যেমন উপযোগী করে তোলে তেমনি শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ বার্ধক্য প্রতিরোধ করে।
সবুজ শাকসবজি : সবুজ শাকসবজি সবসময়ই শরীরের জন্য উপকারি। সবুজ শাকসবজি ত্বকে বয়সের ছাপ সহজে পড়তে দেয় না। কারণ এসব রক্তে কলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
গ্রিন টি : গ্রিন টিতে রয়েছে বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটা ত্বকের নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। এতে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে লাবণ্যময়।
আঙ্গুরের জুস : আঙ্গুরে আছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করে। তাই নিজের উচ্ছল তারুণ্য ধরে রাখতে বেশি বেশি আঙ্গুরের জুস খেতে পারেন।
দই : দইয়ে রয়েছে ভরপুর ক্যালসিয়াম। এটি হাড়ের ক্ষয়রোধ করে। দইয়ে রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারি ব্যাকটেরিয়া; যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করে।
কমলালেবু : কমলালেবু শুধু একটি সুস্বাদু খাবারই নয়, এটি আপনার বার্ধক্যের শত্রু। ভিটামিন সি উপাদানে ভরপুর; কমলালেবু ত্বকের ক্ষতিকর উপাদান নষ্ট করে আপনার ত্বককেও রাখে সুস্থ। এতে তারুণ্য থাকে দীর্ঘদিন।
বাদাম : চেহারায় তারুণ্য ধরে রাখতে বাদামের জুড়ি নেই। এর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ত্বককে ভিতর থেকে মসৃণ করে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রেখে বলিরেখা প্রতিরোধ বার্ধক্যকে হার মানায়। সৌজন্যে : বাংলাদেশ প্রতিদিন