Skip to content

খাল পেরিয়ে চরের বুকে

ফারুখ আহমেদ
জুন মাসের সকাল। চর কচ্ছপিয়া খালের ভেতর দিয়ে স্পিডবোট ছুটে চলেছে, চারপাশে সবুজ আর সবুজ। একসময় মেঘনার শাখানদী বুড়ি গৌড়াঙ্গতে এসে পড়ি। আমাদের চোখ চেয়ে আছে সামনে, দেখা কি যায় চর কুকরিমুকরি? সবুজ বন যেন একসময় গিলে নিল আমাদের স্পিডবোট। দুপাশে সবুজ বন মাঝখানে কুকরির খাল। অনেকে একে বলে ভারানির খাল। আগের দিন আমরা চর ফ্যাশন এসেছি। এখন আমরা কুকরির খালের ভেতর দিয়ে ছুটে চলেছি চর কুকরিমুকরির দিকে। বহু দূর বিস্তৃত এই কুকরির বন।

সবুজ বনের ফাঁকে বয়ে গেছে চিকন খাল, ছবি: লেখক

সবুজ বনের ফাঁকে বয়ে গেছে চিকন খাল, ছবি: লেখক

ঠিক ২০ মিনিট পর আমরা পা রাখলাম চর কুকরিমুকরিতে। আমাদের দেখে দৌড়ে ছুটে এলো একদল শিশু। তাদের সঙ্গে সঙ্গেই এগোই। এ গ্রামটার নাম বাবুগঞ্জ। এখান থেকে দূরের বন অসাধারণ। পাশেই গ্রামের একমাত্র মনিহারি দোকান। আমরা বেতের তৈরি সেই দোকানঘরটির ভেতর বসি। এখানকার চেয়ারম্যানের আতিথেয়তায় চলে এল ডাবের পানি। একটু জিরিয়ে মেঠোপথ ধরে চলে এলাম আবার কুকরির খালের পাড়।

খালপাড়ে বসে বিশ্রাম নিচ্ছি, তখনই এগিয়ে এলো পাতলা লিকলিকে ছেলেটি, নাম বলল আল আমিন। সেও আমাদের সঙ্গী হয়ে গেল। তার কথাতেই অনেকটা পথ হাঁটা শুরু করি। কেওড়া বনের ভেতর দিয়ে পায়ে হাঁটা সেই পথ। এভাবেই একসময় পেয়ে যাই ওয়াচ টাওয়ার। তারপর ১১০টা সিঁড়ি ভেঙে তার মাথায়। বিষয়টা আমার দুই সঙ্গী ফারাবী হাফিজ ও নূরে আলমের কাছে এভারেস্ট জয়ের কাছাকাছি। জীর্ণ টাওয়ারটির চারপাশের পুরোটাই খোলা। খুব ভয়ে আর সাবধানে পা ফেলে ওয়াচ টাওয়ারের ওপর উঠলেও, শেষ ধাপে পা রেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। তিন দিকে সবুজ বন, সামনে খোলা মাঠ। ওপর থেকে নিচে দেখতে পেলাম কয়েকটি ঘর। বহু দূরে আরও একটা দুটো চর চোখে পড়ল। একটু পর তো নামতেই হয়। কিছুটা হেঁটে আল আমিনের ট্রলারের যাত্রী হই। এবার বনের উত্তর পাশটায় সামাজিক বনায়ন দেখে তবেই ইউনিয়ন পরিষদ অফিস যাব মনস্থির করি।

আধঘণ্টা পায়ে হেঁটে এবং আরও আধা ঘণ্টা নৌকায় চেপে চলে আসি এখানকার সামাজিক বনায়ন প্রকল্পে। বনের ভেতর প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করেও দেখা পেলাম না হরিণের। আশপাশে ডাক শুনে কয়েকবার চমকে উঠেছি, এই বুঝি সামনে এল। নাহ, দেখা পাইনি। তবে বানর আর নানা রকম পাখি দেখলাম প্রচুর। আল আমিন জানায়, হরিণ দেখতে হলে খুব ধৈর্যের প্রয়োজন এবং যেতে হবে বনের আরও গভীরে। তবে শীতকালে হরিণ ও পাখি দেখা সাধারণ ঘটনা। সে সময় নাকি ওরা গ্রামের মাঠে গিয়ে শুয়ে-বসে রোদ পোহায়।

চর কুকরিমুকরির চেনা দৃশ্য যেন

চর কুকরিমুকরির চেনা দৃশ্য যেন

বনের এই জায়গাটায় প্রচুর বাবলাগাছ। হলুদ বাবলার ফুল বাতাসের দোলায় দুলছে। ঠিক তখনই আমরা হরিণের ডাকে চঞ্চল হয়ে সামনে এগোই। কোথায় হরিণ, মনে হলো এসব যেন বনের মায়া। বনের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে আল আমিন শেয়ালের গল্প শোনায়, শেয়ালের গর্ত দেখায়। একপর্যায়ে মনে হয় পেটেই যেন শেয়াল ডাকছে। সঙ্গে থাকা বিস্কুট কামড় দিয়ে গরম এক কাপ লেবুর চায়ের প্রয়োজন অনুভব করি। চা হলে খুব ভালো হতো ভাবতে ভাবতে একসময় দেখি আমরা ট্রলারের কাছে পৌঁছে গেছি। চরফ্যাশন আজই ফিরতে হবে। দুপুরের খাবার বিকেল বেলা সেরে ফিরতি পথে স্পিডবোটে চেপে বসি। এরই মধ্যে সূর্য পশ্চিম দিকে হেলেছে—ডুবন্ত সূর্যের লাল, হলুদ, কমলা আভা সবুজ রঙা চর কুকরিমুকরির বনে ছড়িয়ে পড়ে বনটিকে আরও মায়াবী করে তুলেছে।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে লঞ্চে সরাসরি যেতে পারবেন ভোলা জেলার চরফ্যাশনে। নামবেন বেতুয়া কিংবা গোঁসাইবাড়ি ঘাটে। সেখান থেকে মোটরসাইকেল কিংবা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে চর কচ্ছপিয়া। এরপর ট্রলারযাত্রায় পৌঁছে যাবেন চর কুকরিমুকরি। থাকতে পারেন ফরেস্ট রেঞ্জারের বাংলো কিংবা ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে। সূত্র : প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *