এ রিয়াজ
এ কেমন কথা! দ্বীপ কিনলেই মরতে হবে! আমরা জানি, দ্বীপ মানেই অপরূপ সুন্দর একটি জায়গা। দ্বীপের সৌন্দর্যে আমরা বিমোহিত হই। কিন্তু মৃত্যু! ভাবাই যায় না।
ইতালির নেপলস নামক স্থানে অপরূপ সুন্দর একটি দ্বীপ আছে। এ দ্বীপটির নাম ‘গাইওলা’। দ্বীপটি এতই সুন্দর যে কারো কাছে টাকা না থাকলেও মন চাইবে, আহা, দ্বীপটি যদি কিনতে পারতাম! আর যাদের টাকা আছে তারা যদি দ্বীপটি কেনেন তাহলে অল্প সময়ের মধ্যেই হয় তিনি মারা যাবেন, নয়তো দেউলিয়া হয়ে পথের ফকির হয়ে যাবেন।
সৌন্দর্যের দিক দিয়ে কোনো অংশে কমতি নেই এ দ্বীপটির। কিন্তু কোনো এক অভিশপ্ত কারণে যে ব্যক্তি এ দ্বীপটি কিনেছেন হয় তিনি মারা গেছেন নয়তো দেউলিয়া হয়ে পথের ফকির হয়েছেন। এমন কথা হয়তো অনেকের বিশ্বাস হবে না। বিশ্বাস না হবারই কথা। বিচিত্র এ বিশ্বে কত বিচিত্র রহস্য রয়েছে যা আমাদের অজানা। হয়তোবা এটি লোকমুখে প্রচারিত কোনো এক ভ্রান্ত ধারণা। কিন্তু একের পর এক ঘটে যাওয়া ঘটনা কিভাবে অবিশ্বাস করা যায়? একটা বা দুটো ঘটনা ঘটলে হয়তো তা কাকতালীয় বলে মেনে নেয়া যেত। কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণ যা বলছে তা বিশ্বাস না করে উপায় নেই। স্থানীয় লোকজনের মতে এ দ্বীপটি ভয়াবহভাবে অভিশপ্ত। এখন পর্যন্ত যতজন এ দ্বীপর মালিকানা লাভ করেছেন ততজনই মারা গেছেন আকস্মিক ও অপঘাতে অথবা দেউলিয়া হয়েছেন ধনসম্পদ সব হারিয়ে।
ঘটনার শুরু ১৯২০ সালে। তখন সুইজারল্যান্ডের এক নাগরিক এ দ্বীপটির মালিকানা লাভ করেন। তার নাম ছিল হ্যানস ব্রাউন। বেশ কয়েক বছর স্বাভাবিকভাবেই দ্বীপে বসবাস করেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ একদিন তার মৃতদেহ পাওয়া যায় কার্পেটে মোড়ানো অবস্থায়। এটাকে নাশকতা হিসেবেও ধরা যায়। কিন্তু যখন তার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার স্ত্রীও সমুদ্রে ডুবে মারা যান তখন এ ঘটনা যে কোনো অভিশাপেরই ফল এমন কথা লোকমুখে প্রচারিত হতে থাকে। তখন থেকেই লোকজনের মনে ‘এ দ্বীপটি অভিশপ্ত’ এমন ধারণা বাসা বাঁধে।
এ ধারণা আরও পাকাপোক্ত হয় যখন দ্বীপটির পরবর্তী মালিক অটো গ্রানব্যাক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। এর পরের মালিক মরিস ভেজ স্যান্ডোজ নামের এক ওষুধ কোম্পানির মালিকও একটি মানসিক হাসপাতালে আত্মহত্যা করে মারা যান।
মৃত্যুর তালিকা এখানেই শেষ নয়। এরপরও ঘটেছে অনেক মৃত্যু। অনেক ঘটনা।
দ্বীপটি এতই সুন্দর যে, এটি কেনার লোভ সামলানো খুবই কঠিন। মানুষের মুখে এর অভিশাপের কথা শোনার পরও একজনের পর আরেকজন দ্বীপটি কিনেছেন এবং একে একে মৃত্যুবরণ করেছেন।
তারপরও জার্মানির এক ইস্পাত শিল্প মালিক ব্যারক কার্ল পল ল্যাঙ্গহেইম এই দ্বীপটি কেনেন। তবে তিনি মারা যাননি। বেহিসেবি আচরণের কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেউলিয়া হয়ে যান। এছাড়া পরবর্তী মালিক জিয়ানই আগনেলির বহু আত্মীয় অস্বাভাবিকভাবে মারা যান। এরপরের মালিক পল গ্যাটিকের নাতিকে অপহরণ করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। তার খোঁজ আর পাওয়া যায়নি।
এ দ্বীপের অভিশাপের কথা আবার আলোচনায় আসে ২০০৯ সালে। ফ্র্যাঙ্কো এম্ব্রোসিও ও তার স্ত্রী জিওভান্নো সাচো খুন হন। এরা এ অভিশপ্ত দ্বীপের বিপরীতে একটি ভিলা বসবাসের জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন।
দ্বীপটির সর্বশেষ মালিক জিয়ান প্যাসকেল গ্র্যাপোনকে পুলিশ আটক করে। বর্তমানে দ্বীপটিতে কেউ বসবাস করে না। সূত্র : যুগান্তর