ইয়াছিন খন্দকার লোভা
কিংডম অব বাহরাইন। দেশটি আয়তনে খুব বেশি বড় নয়, অনেক ছোট। এ দেশটি হলো আরব গাল্ফ। আর এই আরব গাল্ফ বাহরাইনে আমার প্রবাসজীবনের প্রথম সফর।
প্রায় চার বছর হতে চলেছে বাহরাইনে প্রবাসী দিনযাপন। ডিউটি পাস, খাওয়া-দাওয়া আর ঘুমানো ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই বললেই চলে। ছুটির দিনেও এ দেশটির ভেতর আমার কোথাও ঘুরতে যাওয়া হতো না। সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার হওয়ায় সেদিন শুধুই রেস্ট নেয়া হতো। তা ছাড়া শুক্রবারের ছুটি ছাড়া টানা চার-পাঁচ দিন ছুটি মিললেও কোথাও ঘোরা হতো না, অথচ এ দেশটিতে ঘুরে দেখার মতো অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে, সেদিকে আমার কখনোই নজর দেয়া হয়ে ওঠেনি।
আমি শুধু অন্যের মুখেই শুনতাম, এ দেশে ঘোরার মতো অনেক জায়গা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবিকভাবে ঘুরতে গিয়ে সেই অজানা সুন্দর দেখার মতো দৃশ্যগুলো কখনো দেখা হয়ে উঠত না। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে নিজেই নিজের মাঝে ভেবে চলতাম। কিন্তু না, সেদিন আর ভাবনাগুলো নিয়ে বসে থাকিনি। নিজের ভাবনাকে দূরে ঠেলে দিয়ে সেদিন দূরে কোথাও ঘুরতে যাবো বলে একান্তেই সিদ্ধান্ত নিলাম।
গেল কোরবানির ঈদের ছুটি মিলল চার দিন। এই লম্বা ছুটি আমার প্রবাসজীবনে দ্বিতীয়। এত দিন ছুটি মেলায় ঈদের আগের দিন রাতেই মন খুব ছটপট করছিল। বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবছিলাম। ভাবতে গিয়ে এক প্রকার উপায় খুঁজে পেলাম। তাই নিজের ভাবনাকে শেয়ার করতে ছুটে যাই পুরনো রুমের বন্ধুদের কাছে। সেখানে উপস্থিত হতেই দেখি তারা সবাই মিলে বারান্দায় মিটিং করছে। আমিও উপস্থিত হলাম। তাদের পাশে উপস্থিত হওয়ার আগেই ঘুরে বেড়ানোর অফার এলো। আমি মহা আনন্দিত কণ্ঠে রাজি হয়ে গেলাম। যেন মনের চাহিদাই পূর্ণ হওয়ার পথে। তারপর ঈদের দিন জোহর নামাজের পরে ভ্রমণে যাওয়ার সময় ঠিক করা হলো। পরদিন দুপুরে এক এক করে সবাই উপস্থিত হলাম। যে বন্ধুরা উপস্থিত ছিলেন- মাসুদ ভাই, আশ্রাফ ভাই, মামুন ভাই, সুব্রত দা, ফারুক, হাফিজসহ সব মিলে ১৩ জন।
ঈদের আগের রাতেই একটা মিনিবাস (মাইক্রো) রিজার্ভ করে নেয়া হলো ঈদের পুরো দিনের জন্য। বেলা ১টায় আমরা ১৩ জন বন্ধু রওনা হলাম। প্রথমে সীমান্তকিনারায় আল আরিন পার্ক ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত ঠিক করা হলো। কেউই বাসা থেকে না খেয়ে যাওয়ায় পথে রেস্টুরেন্টে গিয়ে লাঞ্চ করলাম। তারপর প্রায় আধা ঘণ্টা পথ পেরিয়ে আল আরিন পার্কের গেটে উপস্থিত হলাম।
ভেতরে প্রবেশ করার আগেই বাইরের দৃশ্য দেখে আমি চমকিত হলাম। এত রূপবিলাসী জায়গা এর আগে বাহরাইনে কখনো দেখা হয়নি। তারপর সবাই একটা করে খাওয়ার পানির বোতল হাতে নিয়ে পার্কে প্রবেশ করলাম। তখন খুব গরম ছিল। ভেতরে ঢুকে জীবজন্তু দেখার সবার খায়েশ জাগল। টিকিট কেটে ইচ্ছেমতো দেখে নিলাম। হরেকরকম পশুপাখি আর জানোয়ারের অনেক ফটো তুললাম।
তারপর সবাই দুই-তিনজন করে আলাদাভাবে ভাগ হয়ে এদিক-ওদিক হয়ে গেলাম। ভাগেভাগে সারা পার্ক ঘুরে বেড়ানোর পর সবাই একসাথে অনেক ফটো তুললাম। পার্কের ভেতর সবাই আনন্দে ঘুরতে গিয়ে প্রায় সন্ধ্যা নেমে যায়। সময় কম বলে তারপর জালাক বিচে গিয়ে সাগরে গোসল করার ইচ্ছে হলো সবার। গাড়ি নিয়ে ছুটে চললাম জালাক বিচের উদ্দেশে। প্রায় ১৫ মিনিটে পৌঁছে গেলাম।
আমাদের পৌঁছার ১০ মিনিট পরই শুরু হলো মাগরিবের আজান। তারপর যাদের লোনাপানির সাগরে নামার ইচ্ছে ছিল সবাই এক এক করে নেমে পড়ল। প্রায় আধা ঘণ্টা ইচ্ছেমতো সাগরে সাঁতার কেটে সবাই আনন্দ করলাম। তারপর ১০ মিনিটে রেডি হয়ে রওনা দিলাম গন্তব্যে। আল্লাহর রহমতে সবাই সুস্থভাবে আবার যার যার রুমে ফিরে এলাম।
অনেক আনন্দের সেই প্রবাসভ্রমণ আজ বারবার মনে পড়ছে। আগামীতে নতুন কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে জাগে। আবার কোথাও ঘুরতে যাবো আগামীতে ইনশাআল্লাহ। সৌজন্যে : নয়া দিগন্ত