মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান
বরিশাল সদর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের বানারীপাড়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন গুঠিয়া। এখানে আপনি কেন যাবেন? সেটা বরিশালে এলেই টের পাবেন। অথবা ভোজনরসিক হলে আপনার জানাই আছে। কারণ গুঠিয়া আর সুস্বাদু সন্দেশ যেন একাকার। কেউ কেউ বলেন, বরিশালের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলো গুঠিয়ার সন্দেশ। স্বাদে ও গুণে অনন্য এ সন্দেশে লেগে থাকে গরুর দুধের টাটকা ঘ্রাণ। তাই বরিশালে আসা পর্যটকরা গুঠিয়ার সন্দেশ নিয়েই বাড়ি ফিরেন।
গুঠিয়া সন্দেশের প্রধান বিক্রেতা বাংলাদেশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী পরিমল ভদ্র জানান, গুঠিয়া সন্দেশের রেসিপি এসেছে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া অঞ্চল থেকে। আমার কাকা সতীশ ভদ্র আমাদের এ দোকানেই ছিলেন। এরপর বিএম কলেজের সামনে দোকান দেন। কাকার (সতীশ ভদ্র) মুখে শুনেছি, পাকিস্তান আমলে তিনি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া এলাকায় এক কারিগরের কাছে তিনি এর রেসিপি শিখে নেন। পরে ১৯৬২ সালে তিনি দেশে এসে নতুন ধরণের এই সন্দেশ তৈরি শুরু করেন। অচিরেই এই সন্দেশের খ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে গুঠিয়া ছাড়াও বরিশাল নগরীর বেশ কয়েকটি শো’রুমে এই সন্দেশ পাওয়া যায়।
সন্দেশ তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিমল চন্দ্র ভদ্র জানান, গুঠিয়া সন্দেশের রেসিপি অত্যন্ত সাধারণ। পরিমাণ মত ‘আঁচ ও পাক’ই ভালো সন্দেশ তৈরির প্রধান রেসিপি। ভালো সন্দেশ তৈরি করতে খাঁটি দুধের প্রয়োজন। সাধারণত ছয় থেকে সাত কেজি খাঁটি দুধে এক কেজি ছানা হয়। ছানার সাথে সমপরিমাণ চিনি মিশিয়ে অল্প জাল দিতে হয়। ২০ থেকে ৩০ মিনিট জ্বালে পাক দিয়ে অল্প আঁচে পাঁচ মিনিট রাখলেই গুঠিয়া সন্দেশের কাঁচামাল তৈরি হয়।
এরপর পরিমাণ মত কাঠের বাটার উপরে নিয়ে সন্দেশের আকার তৈরি করা হয়। সৌন্দর্যের (ডেকরেশন) জন্য সন্দেশের উপর কিশমিশ দেয়া হয়।
তিনি জানান, গুঠিয়া সন্দেশ টাটকা থাকলে তা থেকে টাটকা গরুর দুধের সুঘ্রাণ আসবে। অত্যন্ত মুখরোচক এই সন্দেশে খাঁটি ছানা ও চিনি ছাড়া অন্য কোনো প্রকার উপকরণ থাকে না। গরুর দুধ ছাড়া অন্য কোনো দুধ দিয়ে গুঠিয়ার সন্দেশ তৈরি করা হয় না।
বর্তমানে নগরীতে ও গুঠিয়া এলাকায় এ সন্দেশের বহু দোকান থাকলেও বাংলাদেশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারকে এর সুতিকাগার বলা যায়। ১৯৬২ সাল থেকে এই দোকানটি গুঠিয়া ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে সন্দেশ বানিয়ে আসছে। বর্তমানে প্রতিদিন আট থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত সন্দেশ বানিয়ে থাকেন তারা। প্রতিকেজি সন্দেশ বিক্রি হয় ৪০০ টাকা করে। এক কেজিতে ২৫ পিস পর্যন্ত সন্দেশ ওঠে।
আদি গৌরনদী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সত্বাধিকারী শ্রীধাম ঘোষ জানান, ভোজন বিলাসীদের কাছে গুঠিয়ার সন্দেশ লোভনীয় একটি নাম। এ খাবার দেখলে জিভে পানি আসে না এমন ভোজন বিলাসীদের সংখ্যা অতি নগন্য। বরিশালে ভোজন বিলাসী কেউ এলে গুঠিয়ার সন্দেশের স্বাদ নিতে ভোলে না। মানুষ বরিশালে কাজে বা বেড়াতে এলে ফেরার সময় গুঠিয়ার সন্দেশ নিয়ে যায়। আর ধীরে ধীরে এভাবেই গুঠিয়ার সন্দেশের এর সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।