Skip to content

গোলমরিচে আশার আলো

শাহ ফখরুজ্জামান
হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় গোলমরিচের আবাদ জনপ্রিয় হচ্ছে। উর্বর ভূমি, কম খরচ ও স্বল্প পরিচর্যায় অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এ মরিচ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। জানা গেছে, হবিগঞ্জের বাহুবলসহ কয়েকটি উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষকরা এ চাষাবাদ শুরু করেছে। বাহুবলের ভাদেশ্বর ইউনিয়নের আলীয়াছড়া খাসিয়া জনগোষ্ঠী এত দিন শুধু পান, আনারস ও লেবু চাষ করলেও তারা এবার গোলমরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছে। এ জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০০ পরিবার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ চাষাবাদ করে প্রচুর অর্থ আয় করছে।

ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের অদূরে প্রায় ৬০ একর জায়গাজুড়ে আলীয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জির অবস্থান। সেখানে মরিচের হাজার হাজার গাছ প্রকৃতিকে সাজিয়েছে নতুন রূপে। অনেকটা পান গাছের মতো দেখতে এ গাছ অন্য গাছকে অবলম্বন করেই বেড়ে ওঠে। কৃষকরা জানায়, অতি বৃষ্টির সময় গোলমরিচের চারা রোপণ করতে হয়। এ কারণে বছরের আষাঢ়-শ্রাবণ মাস উপযুক্ত সময়। প্রতিটি গাছ কমপক্ষে চার বছরে পূর্ণতা পায় এবং ২০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। প্রতি গাছে তিন থেকে চার কেজি পর্যন্ত মরিচ উৎপন্ন হয়।

Gol-Morich

হবিগঞ্জের বাহুবলের ভাদেশ্বর ইউনিয়নের আলীয়াছড়া খাসিয়া জনগোষ্ঠী এত দিন শুধু পান, আনারস ও লেবু চাষ করলেও তারা এবার গোলমরিচ চাষের দিকে ঝুঁকছে।

এ ব্যাপারে আলিয়াপুঞ্জির রূপসী বস্তির চাষি আব্দুল মজিদ জানান, তিনি তাঁর চার একর জমিতে পানের পরিবর্তে গোলমরিচ চাষ করেছেন। ফলন হয়েছে ভালো। মান ভালো হওয়ার কারণে বাজারে দামও পেয়েছেন বেশি। তিনি আরো জানান, গোলমরিচ উৎপাদন করে তিনি পানের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করেছেন।

হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র দেব জানান, গোলমরিচের বৈজ্ঞানিক নাম চরঢ়বৎ হরমৎঁস। ইংরেজি নাম ইষধপশ চবঢ়ঢ়বৎ। আদি নিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়। মূলত ভারত ও মিয়ানমারে আগে থেকেই গোলমরিচ চাষ হতো। এ কারণে পর্তুগিজ, ফরাসিসহ ইউরোপের বণিকরা ভারতবর্ষে মসলা বাণিজ্যের জন্য এসেছিল। হবিগঞ্জে ৬০টিরও বেশি পুঞ্জিতে পানের পরিবর্তে গোলমরিচ চাষ হয়েছে। এ ছাড়া সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে।

সুভাষ চন্দ্র দেব আরো জানান, মসলা ছাড়াও গোলমরিচ ঔষধিগুণসম্পন্ন। এটি জ্বর, সর্দি, পেটের পীড়া, গনোরিয়া এমনকি পেঁয়াজের রসের সঙ্গে মিশিয়ে চুলপড়া রোধে ব্যবহৃত হয়। সুভাষ চন্দ্র দেব বলেন, ‘আমাদের মাটি গোলমরিচ চাষের উপযোগী। তাই এর চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি করাও সম্ভব।’

হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহ আলম জানান, হবিগঞ্জের মাটি, পরিবেশ ও আবহাওয়া গোলমরিচ চাষের উপযোগী। এ অঞ্চলের চাষিরা এ মরিচসহ অন্যান্য মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদন করতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সহায়তা করতে প্রস্তুত। হবিগঞ্জে দুই ধরনের গোলমরিচ উৎপাদিত হয়। একটি জল সাদা ও অন্যটি কালো। কিন্তু গুণাগুণের দিক থেকে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

জানা গেছে, সরকার আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশে মসলা চাষের জন্য মাত্র চার শতাংশ সুদে ঋণ দিলেও অনেক কৃষক বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানে না। এ ব্যাপারে আলিয়াপুঞ্জির খাসিয়া মন্ত্রী উটিয়াম টমপেয়ার জানান, খাসিয়ারা ঋণ নেওয়ার বিষয়ে অবগত নয়। সরকারিভাবে যদি এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়ানো হয় তাহলে চাষিরা উপকৃত হতো।

এ দিকে দেশে গোলমরিচ চাষে সফলতা এলেও লাভজনক এ মসলার উৎপাদন প্রসারে মাগুরা কেন্দ্রের কোনো উদ্যোগ নেই।

এ ব্যাপারে মসলা গবেষণাকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, বিদেশি মসলার উন্নত জাত উদ্ভাবনের কাজ এ গবেষণাকেন্দ্রে হয়ে থাকে। ইতিমধ্যে গোলমরিচের জাত উন্নয়ন করা হয়েছে। এখন চলছে চাষি পর্যায়ে এই জাত জনপ্রিয় করার কাজ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলিয়াপুঞ্জির গোলমরিচ চাষের সফলতায় প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশে মসলাও উৎপাদন সম্ভব। সঠিক পরিকল্পনা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের মসলা দিয়ে চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করাও সম্ভব। সূত্র : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *