এ রিয়াজ
কাজল কালো দিঘির কথা আমরা শুনেছি। দেখেছিও। শুনেছি টলটলে নীল জলের কথা। কিন্তু গোলাপি রঙের পানি কিংবা জলাশয়ের কথা আমরা ক’জন শুনেছি? শুনি বা নাই শুনি পৃথিবীতে কিন্তু সত্যিই আছে গোলাপি পানির হ্রদ। এমনই তিনটি জলাশয় বা লেকের কথা নিয়ে আজকের আয়োজন। লেকগুলো হচ্ছে- লেক রেটবা, লেগুনা কলোরাডা ও লেক হিলিয়ার।
লেক রেটবা : লেক রেটবা আফ্রিকার দেশ সেনেগালের একটি লেক। লেকের এক পাশে পাহাড়। আরেক পাশে আটলান্টিক মহাসমুদ্র। মাঝখানে সরু একটি করিডোর। বছরের প্রায় অর্ধেক সময় লেকটির পানির রং থাকে গোলাপি। মাথার উপরে নীল আকাশ, নিচে গোলাপি হ্রদ- সব মিলিয়ে এক অসাধারণ সৌন্দর্যমণ্ডিত দৃশ্য। এ দৃশ্য টেনে আনে দেশ বিদেশের পর্যটক। এ অনন্য বৈশিষ্টের জন্যে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কো লেকটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করার কথা ভাবছে।
স্থানীয় ভাষায় রেটবা অর্থ গোলাপি। এজন্য স্থানীয় লোকজন এটিকে রোজ লেক নামেও ডাকে। গোলাপি রং ছাড়াও লেকটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর লবণাক্ততা। লেকটির কোথাও কোথাও লবণাক্ততার হার প্রায় ৪০ শতাংশ। শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততার মাত্রা বেড়ে যায়। সমুদ্রের একেবারে কাছে হওয়ায় করিডোরের মাটি চুঁয়ে লবণ পানি হ্রদে আসে। অতিরিক্ত লবণের কারণে এ হ্রদে তেমন কোনো জলজ প্রাণী নেই।
চার-পাঁচ প্রজাতির মাছ থাকলেও সেগুলো আকারে স্বাদু পানির লেকের চেয়ে অনেক ছোট। তবে এসব মাছের রয়েছে শরীর থেকে মাত্রাতিরিক্ত লবণ বের করে দেয়ার ক্ষমতা। মাছ বা কোনো জলজ প্রাণী নেই বলে লেক রেটবার কোনো অর্থনৈতিক গুরুত্ব নেই, এমন নয়। লেকটি সেনেগালের লবণের চাহিদা পূরণ করে থাকে। সেনেগাল থেকে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে তা রপ্তানিও হয়। মূলত স্থানীয় অধিবাসীরা লেকের নিচ থেকে হাত এবং বেলচা দিয়ে লবণ সংগ্রহ করে। নৌকা এবং পশু চালিত গাড়িতে এ লবণ পরিবহন করা হয়। পানিতে নামার আগে স্থানীয় একটি ফলের তেল গায়ে মেখে নেয়া হয়।
এ জন্যে দীর্ঘ সময় পানিতে থাকা সত্ত্বেও তাদের গায়ে লবণে কোনো ক্ষত হয় না।
এ লেকের পানির রং গোলাপি কেন তার উত্তর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা অনেক দিন ধরে লেক রেটবার পানির রং নিয়ে গবেষণা করেছেন। অনেক গবেষণার পর তারা একমত হয়েছেন, পানির রং গোলাপি হওয়ার জন্য দায়ী এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এগুলোর রয়েছে লবণ সহিষ্ণুতা। এরা তাদের প্রয়োজনে আলো শোষণ করতে শরীর থেকে গোলাপি রঙের এনজাইম নিঃসরণ করে। এতেই পানির রং হয় গোলাপি।
লেগুনা কলোরাডা : লেগুনা কলোরাডার অবস্থান দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়ায়। লেকের অন্যপাশে চিলি। এর দৈর্ঘ প্রায় ১১ কিলোমিটার, প্রস্ত ৯ কিলোমিটার। লেকটির মোট আয়তন ৬০ বর্গ কিলোমিটার।
লেগুনা কলোরাডা নানা কারণে অনেক বেশি নান্দনিক। এ লেকের একপাশের পানি আবার গাঢ় নীল। লেক রেটবার মতো এ লেকে অত লবণাক্ততা নেই। তাই মাছসহ বেশ কিছু জলজ প্রাণী আছে এ হ্রদে। এ কারণে এতে পাখির আনাগোনা অনেক।
লেক হিলিয়ার : লেক হিলিয়ার পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার একটি দ্বীপে অবস্থিত। আয়তনে এ লেকটি লেক রেটবা এবং লেগুনা কলোরাডার চেয়ে অনেক ছোট। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ২০০০ ফুট। আর প্রস্থ ১২০০ ফুট। ধারণা করা হয়, এর পানি রঙিন হওয়ার পেছনেও রয়েছে এক প্রকার ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা। তবে অন্য দুটি হ্রদের সঙ্গে এর বেশ কিছু পার্থক্যও আছে। ওই হ্রদ দুটি সবার জন্য উন্মুক্ত হলেও লেক হিলিয়ার তা নয়। গবেষণার প্রয়োজনে অস্ট্রেলিয়া সরকার লেকটিকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাই বিদেশি পর্যটক তো বটেই, স্থানীয়দেরও এখানে যাবার তেমন সুযোগ নেই। সূত্র : যুগান্তর