Skip to content

ঘুরে আসুন বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

রেজাউল করিম রাজা
রাজধানী থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে গাজীপুরে ঢাকা ময়মনসিংহ মহসড়কে পাশেই অবস্থিত বাঘের বাজার। নাম শুনে এত আনন্দিত হবার কিছুই নেই। ভাববেন না এই বাঘের বাজারেই আপনি বাঘের দেখা পেয়ে যাবেন। বাঘের দেখা পেতে হলে আপনাকে আরো একটু কষ্ট তো করতেই হবে। বাঘ দেখা বলে কথা তাই যেতে হবে আপনাকে আরো তিন কিলোমিটার পশ্চিমে।

Safari-Park

অনেকটা দূর থেকেই চোখে পড়বে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের দৃষ্টিনন্দন ফটক। সেটি পেরুলেই সারি সারি ফুল গাছ, আপনাকে স্বাগত জানাবে বাঘ, সিংহ, বাজপাখি, ক্যাঙ্গারু। এমনকি বহু আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত ডাইনোসরও রয়েছে আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য। তবে এগুলো প্রাণহীন, মাটি বালু ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য।

গভীর শালবনের ভেতর তৈরি করা হয়েছে সুবিশাল ইটের সীমানা প্রাচীর। ভেতর দিয়ে অসংখ্য সরু পিচঢালা সড়ক। দুদিকে শাল, গজারিগাছসহ নানা প্রজাতির গাছে আচ্ছাদিত।

বিশাল অরণ্যে আপনি বের হয়েছেন প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভের আশায়, হঠাৎ ক্ষুধার্থ কয়েকটি হিংস্র বাঘ বা সিংহ আপনার উপর আছড়ে পড়ল শিকারের আশায়, কিন্তু না পারল না, কাঁচের দেয়াল থাকার কারণে ২ ইঞ্চির জন্য আপনাকে গ্রাস করতে পারল না। আপনি ভয়ে তো অজ্ঞান, এমন সব রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা আপনাকে পাইয়ে দেওয়ার জন্যই থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশের গাজীপুরে নির্মিত হয়েছে এশিয়ার সর্ববৃহত্তম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক।

সাফারি পার্ক হচ্ছে বন্য প্রাণীর একপ্রকার অভয়ারণ্য। চিড়িয়াখানায় বণ্য প্রাণীরা থাকে বন্দি ও মানুষ থাকে খোলা অবস্থায়। সাফারি পার্কে মানুষ থাকে বন্দি আর বন্যপাণীরা থাকবে খোলা অবস্থায়।

Safari-Park3

কোর সাফারি পার্ক, সাফারি পার্ক কিংডম, বায়োডাইভারসিটি পার্ক, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক ও বঙ্গবন্ধু স্কয়ারসহ মোট পাঁচটি অঞ্চলের সমন্বয়ে, তিন হাজার ৬৯০ একর ভূমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক।

যা আছে ভেতরে

পার্কের প্রথমেই অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্কয়ার। পার্ক সমন্ধে যেকোনো তথ্য জানার জন্য এখানে রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও শিক্ষা কেন্দ্র। এখানে আরো রয়েছে পার্ক অফিস। জীববিজ্ঞানের নানা তথ্য ও গবেষণার জন্য রয়েছে ন্যাচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম। এই মিউজিয়ামে প্রায় দুই হাজার প্রজাতির মেরুদণ্ডি ও অমেরুদণ্ডি প্রাণীর দেহাবশেষ, স্পেসিমেন ও স্টাফিং সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে।

সাফারি পার্কের এক হাজার ৩৩৫ একর এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কোর সাফারি পার্ক। এখানে বন্য পরিবেশে বন্য প্রাণীরা স্বাধীনভাবে বিচরণ করে।

আপনি পার্কের গাড়িতে চড়ে বেষ্টনীর ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পারেন বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক, আফ্রিকান চিতা, চিত্রা হরিণ, সাম্বার ও গয়াল, হাতি, জলহস্থি, নীল গাই, বারো সিংগা, বন্য মোষ।

কোর সাফারি পার্ক অঞ্চলে আছে আফ্রিকান সাফারি পার্ক। এখানে রয়েছে আফ্রিকান বন্যপ্রাণীর বিশাল সংগ্রহ। বিশাল দেহ আর লম্বা গলার জিরাফ আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য সদা প্রস্তুত। এখানে আরো বিচরণ করে বন্যপ্রাণী জেব্রা।

Safari-Park4

৫৭৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সাফারি কিংডম। এখানে রয়েছে প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র, জিরাফ ফিডিং স্পট ও পেলিকেন আইল্যান্ড। আপনি যদি পাখি প্রেমিক হয়ে থাকেন তাহেলে চলে যান পাখিশালায়। পাখির খাঁচার কাছে যেতেই আপনার মন আনন্দে ভরে উঠবে নানা প্রজাতির রং-বেরঙের দেশি-বিদেশি পাখি দেখে।

বিরল, বিলুপ্তপ্রায় ও বিপন্ন প্রজাতির গাছের জিনপুল সংরক্ষণের জন্য ৯৬৫ একর জায়গাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে বায়োডাইভারসিটি পার্ক।

আপনি বণ্যপ্রাণী দেখতে দেখতে ক্ষুধার্ত আর ক্লান্ত হয়ে গেলে আপনার জন্য আছে টাইগার ও লায়ন রেস্টুরেন্ট। নাম শুনে ভয় পেয়ে গেলেন? ভাবছেন সেখানে গিয়ে খাবার হয়ে বাঘ সিংহের পেটে যাওয়ার কথা তাই না? না ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই, বাঘ ও সিংহ আপনাকে খাবে না। আপনি খাবার খাবেন আর বাঘ ও সিংহ আপনাকে পাহারা দেবে, মাঝখানে থাকবে কাঁচের দেয়াল।

খাবার পর আপনি এখন শক্তি সঞ্চয় করে ফেলেছেন নিশ্চয়? চলুন তাহলে এবার উঠা যাক ওয়াচ টাওয়ারে। এই টাওয়ার থেকে আপনি দেখতে পাবেন সমগ্র সাফারি পার্কের মনোরম দৃশ্য। দেখতে পাবেন পার্কের ভিতর বিচরণরত বাঘ, সিংহ, হাতি, জেব্রা, জিরাফ, হরিণ ইত্যাদি বন্যপ্রাণী।

এশীয় তৃণভোজী এবং ছোট মাংসাশী প্রাণী, পাখি সরিসৃপ ও উভয়চর প্রাণী নিয়ে ৮২৪ একর জমির ওপর এক্সটেনসিভ এশিয়া সাফারি প্রতিষ্ঠিত। এ ছাড়া বৃক্ষরাজিসমৃদ্ধ প্রায় ১৫০ একর জায়গায় তৈরি করা হয়েছে হাতির আশ্রম।

সাফারি পার্কে বিচরণরত বন্য পশুপাখির পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করার জন্য আছে আটটি জলধারা ও দুটি কৃত্রিম হ্রদ। যেখানে বিভিন্ন জাতের দেশি বিদেশি বুনো হাঁসের ওড়াউড়িসহ নানা রকম জলকেলি আপনার মন ভরিয়ে দিবে।

Safari-Park2

আপনি যদি সাহসী হয়ে থাকেন আর ভয় না পান তাহলে চলে আসেন স্নেক পার্কে- এখানে আপনি হরেক রকম ও বর্ণের সাপ দেখতে পাবেন। এ ছাড়া আপনাকে আনন্দিত করবার জন্য সাফারি পার্কে আছে বাটারফ্লাই পার্ক যেখানে প্রতিনিয়ত হয় রঙের উড়াউড়ির খেলা। আছে ক্রোকোডাইল ও লিজার্ড পার্ক।

শালবনের বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বাংলাদেশের বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সাধন, রাজধানীর অতি নিকটে ইকো-ট্যুরিজমের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ, দারিদ্র্যবিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাসহ সারাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টিই মূলত এই সাফারি পার্কের মূল উদ্দেশ্য।

সময় নিয়ে ঘুরে আসুন না এই সুন্দর ও উপভোগ্য জায়গাটি থেকে। শিশুদের সঙ্গে বড়দেরও ভালো লাগবে এই আয়োজন। সূত্র : এনটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *